Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
এসএসকেএম

দালালদের ট্রলি-রাজ রুখতে ঘুরবে টোটো

এসএসকেএম হাসপাতালে দালাল-চক্রের মোকাবিলায় নামছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সৌজন্যে টোটো! যাত্রী পরিবহণে টোটো এখনও খাস কলকাতায় চালু হয়নি। জেলায়-জেলায় বেআইনি টোটোর সংখ্যা বৃদ্ধিতে লাগাম টানতে পুলিশকে কড়া হতে বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

চড়া দামে স্ট্রেচার বা ট্রলি ভাড়া করা এ ভাবেই রোগীকে নিয়ে যান তাঁর আত্মীয়েরা। —ফাইল চিত্র।

চড়া দামে স্ট্রেচার বা ট্রলি ভাড়া করা এ ভাবেই রোগীকে নিয়ে যান তাঁর আত্মীয়েরা। —ফাইল চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:২৯
Share: Save:

এসএসকেএম হাসপাতালে দালাল-চক্রের মোকাবিলায় নামছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সৌজন্যে টোটো!

যাত্রী পরিবহণে টোটো এখনও খাস কলকাতায় চালু হয়নি। জেলায়-জেলায় বেআইনি টোটোর সংখ্যা বৃদ্ধিতে লাগাম টানতে পুলিশকে কড়া হতে বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু এ হেন যান কী ভাবে রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে দালালদের মোকাবিলা করবে?

এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানান, দালালদের দাপটে প্রায় সব স্ট্রেচার আর ট্রলি ওয়ার্ডের ভিতরে চালান হয়ে যায়। দালালেরা রোগী ভর্তির জন্য চড়া দামে স্ট্রেচার আর ট্রলি বিক্রি করে, এটাই এসএসকেএমে অলিখিত সত্য। বহু চেষ্টা করেও তা আটকানো যায়নি। ফলে রোগীকে ইমার্জেন্সি থেকে ওয়ার্ড বা আইটিইউ-তে নিয়ে যাওয়ার জন্য, এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে বা পরীক্ষার জন্য ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের অন্য ভবনে আনা-নেওয়ার জন্য স্ট্রেচার বা ট্রলি মেলে না। এই দেরির কারণে বহু ক্ষেত্রে রোগীর প্রাণ সংশয় হয়। বহু চেষ্টায় যদিও বা স্ট্রেচার, ট্রলি মেলে তা ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কর্মী পাওয়া যায় না। এ বার টোটো চালিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর।

গত সপ্তাহে এসএসকেএমে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, হাসপাতালের ভিতরে চালানোর জন্য ৫টি টোটো কেনা হবে। নিয়োগ করা হবে চালকও। টোটোগুলিতে এমন ব্যবস্থা থাকবে যাতে রোগীকে শুইয়ে হাসপাতালের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘মূলত ইমার্জেন্সি থেকে রোগীকে দ্রুত ওয়ার্ডে নিয়ে যেতেই টোটোগুলি ব্যবহৃত হবে। আশা করা যায় দালালেরা এর ফলে রোগীর পরিজনদের কাছে টোটো বিক্রি করতে পারবে না। এটি ব্যাটারি-চালিত বলে দূষণও হবে না।’’ টোটো কিনতে দরপত্র ডাকা হয়েছে। এসএসকেএমে এই প্রকল্প সফল হলে অন্যান্য মেডিক্যাল কলেেজও তা চালু হবে।

শুধু টোটো-ই নয়, রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য ১০টি অত্যাধুনিক হুইলচেয়ার, ১০০টি ট্রলি, উন্নত যন্ত্রপাতি-সহ চারটি ইমার্জেন্সির ওটি, ইমার্জেন্সি লাগোয়া ছ’শয্যার রিস্যাসিটেশন ইউনিটে (যেখানে রোগীকে প্রাথমিক ভাবে স্থিতিশীল করা হয়) প্রতি শয্যার সঙ্গে মাল্টি-চ্যানেল মনিটর যুক্ত করা হচ্ছে। এর জন্য সুব্রত বক্সীর সাংসদ তহবিল থেকে এক কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে বলে জানান এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের মতে, ট্রলি বা স্ট্রেচার উদ্ধারের থেকেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সামগ্রিক ভাবে জরুরি পরিষেবা উন্নত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এই পরিষেবা ঘিরে গত সপ্তাহে হুলস্থূল হয়ে গিয়েছে হাসপাতালে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক অটোচালককে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসার পরে ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরুর বদলে তাঁকে ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ। পরে মারা যান ওই ব্যক্তি। তখন মৃতের সঙ্গীরা এক জুনিয়র ডাক্তারকে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। এর পরেই জুনিয়র ডাক্তারেরা ইমার্জেন্সির পরিকাঠামোর উন্নতি ও তাঁদের নিরাপত্তার দাবি তোলেন। কাজ বন্ধ করে অধ্যক্ষাকে ঘেরাও করেন। তার পরেই ইমার্জেন্সির উন্নয়নে তেড়েফুঁড়ে উঠেছে স্বাস্থ্য দফতর।

অল ইন্ডিয়া ডিএসও-র এসএসকেএম ইউনিটের সচিব কবিউল হক জানান, এসএসকেএমের মতো হাসপাতালে ইমার্জেন্সি এত ছোট যে নড়া যায় না, ড্রিপ চালানো দায় হয়। সেখানে উন্নত যন্ত্র নেই, লোকবল নেই, রিস্যাসিটেশন ইউনিট বন্ধ হয়ে পড়ে থাকে, বছরে ১০ মাস ইমার্জেন্সিতে শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য নেবু-মাস্ক এবং রেসপিউল থাকে না। মাথা খুঁড়েও ট্রলি বা স্ট্রেচার মেলে না। বহু রোগী ইমার্জেন্সিতেই নেতিয়ে পড়েন আর সব দোষ গিয়ে পড়ে কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে। এটা চলতে পারে না। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদের পরেই বৈঠক ডেকে এসএসকেএমের জন্য টোটো কেনা-সহ যাবতীয় পরিকল্পনা করেন কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE