Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরিবারের সাধ পূর্ণ, স্বর্ণেন্দুর অঙ্গ বসানো হল অন্যদের দেহে

বাইপাস লাগোয়া বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এসএসকেএমে এসে পৌঁছল বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স। নামলেন কলকাতা ও দিল্লির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। সঙ্গে মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়া ১৮ বছরের স্বর্ণেন্দু রায়ের লিভার। সেটি নিয়ে তাঁরা সোজা ঢুকে গেলেন অপারেশন থিয়েটারে।

গ্রিন করিডর তৈরি করে নিয়ে আসা হচ্ছে স্বর্ণেন্দুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। বৃহস্পতিবার রাতে। — সুমন বল্লভ

গ্রিন করিডর তৈরি করে নিয়ে আসা হচ্ছে স্বর্ণেন্দুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। বৃহস্পতিবার রাতে। — সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৯
Share: Save:

বাইপাস লাগোয়া বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এসএসকেএমে এসে পৌঁছল বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স। নামলেন কলকাতা ও দিল্লির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। সঙ্গে মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়া ১৮ বছরের স্বর্ণেন্দু রায়ের লিভার। সেটি নিয়ে তাঁরা সোজা ঢুকে গেলেন অপারেশন থিয়েটারে। সেখানে অস্ত্রোপচারের জন্য তৈরি রাখা হয়েছিল হাওড়ার সালকিয়ার সংযুক্তা মণ্ডলকে। কিছুক্ষণ পরেই অস্ত্রোপচার শুরু। চলল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।

লিভারের আগেই অবশ্য এসএসকেএমে পৌঁছে গিয়েছিল স্বর্ণেন্দুর একটি কিডনি। সেটি প্রতিস্থাপিত হয় নিরুফা আরা নামে এক মহিলার শরীরে। ভোর চারটে পর্যন্ত চলে সেই অস্ত্রোপচার। অঙ্গগুলি এসএসকেএমে আনার সময়ে দু’বারই রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোতায়েন ছিল পুলিশ। ‘কাস্টডিয়াল ফ্লুইড’ নামে এক ধরনের দ্রবণে ডুবিয়ে বিশেষ ‘ক্যারিয়ার বক্স’-এ ভরে লিভার এবং কিডনি আনার ব্যবস্থা হয়েছিল। অপর কিডনিটি রাতেই বাইপাসের ওই হাসপাতালে ভর্তি রুবি সর্দারের দেহে প্রতিস্থাপিত হয়। কর্নিয়া দু’টি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করে ব্যারাকপুরের এক চক্ষু হাসপাতাল।

সব ক’টি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গ্রহীতারা সকলেই আপাতত স্থিতিশীল। তবে এ সব ক্ষেত্রে অন্তত ৭২ ঘণ্টা কাটার আগে অস্ত্রোপচারের সাফল্য সম্পর্কে কিছু বলা যায় না।

লিভার এবং কিডনি বাইপাসের হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমে পৌঁছতে যাতে ট্র্যাফিকে কোথাও দেরি না হয়, সে জন্য তামিলনাড়ুর ধাঁচেই ‘গ্রিন করিডর’-ব্যবস্থা তৈরি রেখেছিল কলকাতা পুলিশ। শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এসএসকেএম পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার রাস্তা গ্রিন করিডর করে নিয়ে আসা হবে অঙ্গগুলি। কোনও সিগন্যালেই গাড়ি আটকাবে না। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই প্রত্যেক থানা এবং ট্রাফিক গার্ডের অফিসারদের সংশ্লিষ্ট রুটে থাকতে বলা হয়। যদিও অঙ্গদানের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সারার পরে অঙ্গগুলি এসএসকেএমে রওনা হয় মধ্যরাতে। ফলে রাস্তায় তখন যানবাহনের চাপ ছিল না। তবু চিকিৎসকদের মতে, পুলিশের এ ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একটা নতুন দিশা দেখাল।

একই কথা বলেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত অধিকর্তা অদিতিকিশোর সরকারও। তিনি বলেন, ‘‘গ্রিন করিডর ওই দিন কতটা কাজে লাগল, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল এই ব্যবস্থার সূচনা হয়ে গেল। বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। সেটা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ভাবেই এগোতে পারব, তা নিয়ে আমরা আশাবাদী। মৃত ওই তরুণের বাবা-মায়ের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ।’’

গত রবিবার বসিরহাটে একটি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয় সেখানকার জামরুলতলা এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণেন্দু রায় নামে ওই তরুণ। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার পরে স্বর্ণেন্দুর পরিবার তাকে কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার সেখানে চিকিৎসকেরা ওই তরুণের মস্তিষ্কের মৃত্যু (ব্রেন ডেথ) হয়েছে ঘোষণা করার পরেই স্বর্ণেন্দুর বাবা চন্দ্রশেখর রায় জানিয়ে দেন, সন্তানের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করতে আগ্রহী তাঁরা।

তামিলনাড়ুর পথ ধরে এ ভাবেই ইতিহাস তৈরি হল এ রাজ্যেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Green Corridor Organ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE