Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গ্রিন জোনে হোর্ডিংয়ের জঙ্গলে কোপ

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর ওই গোটা এলাকাকে গ্রিন জোন বলে ঘোষণা করেছে। বুধবারই এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৩
Share: Save:

কলকাতা বিমানবন্দর থেকে নবান্ন (ভিআইপি রোড, ই এম বাইপাস, মা উড়ালপুল, এজেসি রোড উড়ালপুল হয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতু) পর্যন্ত গোটা এলাকায় রাস্তার ধারে যে কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানার টাঙানো নিষিদ্ধ হচ্ছে। যত্রতত্র হোর্ডিংও দেওয়া যাবে না। রাস্তা থেকে দূরে থাকবে সীমিত সংখ্যার সুদৃশ্য হোর্ডিং। কারণ পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর ওই গোটা এলাকাকে গ্রিন জোন বলে ঘোষণা করেছে। বুধবারই এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।

গ্রিন জোনের অর্থ কী? নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তার কথায়, ওই পথে কোথাও থাকবে না জঞ্জাল। যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী জমিয়ে রাখা যাবে না। থাকবে না গা ঘেঁষাঘেষি করা হোর্ডিংয়ের জঙ্গল। রাস্তা থেকে দূরে এমন হোর্ডিং দিতে হবে যাতে দৃশ্যদূষণ না হয়। হোর্ডিংয়ে কী থাকবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখালে তবেই সেটি লাগানোর অনুমতি মিলবে। রাস্তার পাশে থাকবে না কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানারও। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শহরকে সাজাতে এমনই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘ওই পথকে কলকাতার শো-কেস হিসেবে তুলে ধরা হবে।’’

শুধু বিমানবন্দর থেকে নবান্নই নয়, গ্রিন জোনের আওতায় আসছে আরও দু’টি এলাকা। নগরোন্নয়ন দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নবান্ন থেকে নিউ আলিপুর (রেড রোড, আলিপুর রোড হয়ে) পর্যন্ত এলাকাতেও থাকবে না রাজনৈতিক দলের কোনও ব্যানার। জঞ্জালমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে ওই এলাকাকেও। সেখানেও হোর্ডিংয়ের জঙ্গল সাফ করা হবে। বিশ্ব বাংলা সরণি হয়ে রাজারহাট, নিউ টাউন চত্বরও গ্রিন জোনের আওতায় এসেছে।

মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য হল ওই পথ সুন্দর ও পরিষ্কার রাখা। যাতে কলকাতা শহরের আকর্ষণ বাড়ে এবং তা পরিবেশবান্ধব করে তোলা যায়। বাইরে থেকে যাঁরা এ শহরে আসবেন তাঁরা যেন বিদেশের আর পাঁচটা শহরের সঙ্গে কলকাতাকে একই আসনে রাখতে পারেন।’’

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রিন জোন এলাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় জঞ্জাল সাফাই করতে হবে। কোথাও কোনও আবর্জনা পড়ে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। রাস্তার কোথাও খানাখন্দ, উঁচু-নিচু থাকা চলবে না। নিয়মিত রাস্তার পরিচর্যা করতে হবে। সেই সঙ্গে রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও রাখতে হবে।

রাস্তার ধারে থাকা ফুটপাথ পরিষ্কার এবং দৃষ্টিনন্দন করে রাখতে হবে। নিকাশি নালা থেকে যেন কোনও দূষণ না ছড়ায় এবং তা বাইরে থেকে দেখা না যায়, তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। গাছগাছালি দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হবে রাস্তার মাঝখানে থাকা মিডিয়ান। মন্ত্রী জানান অনেক সময়ে দেখা যায় রাস্তার পাশে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে বালি, ইট, পাথরকুচি-সহ নানা নির্মাণসামগ্রী। গ্রিন জোনে সে সব রাখা একেবারেই নিষেধ। তা দেখতে হবে পুর প্রশাসনকেই।

ওই গ্রিন জোনে রাস্তা বরাবর রাখা হবে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাও। কেউ কিছু ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করলে ক্যামেরায় তা ধরা পড়বে। ওই সব ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা টাকা জরিমানা আদায় করা হবে। পাশাপাশি নাগরিকদের সুরক্ষার কাজও করবে ওই ক্যামেরা।

ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘গ্রিন জোন এলাকায় রাস্তার ধার ঘেঁষে কোনও হোর্ডিং থাকবে না। রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে হোর্ডিং দেওয়া গেলেও তা লাগাতে হবে অনুমোদন নিয়ে। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, শহর জুড়ে অনেক বেআইনি হোর্ডিং, ব্যানার ওই সব রাস্তার ধারে প্রতিনিয়ত দেওয়া হচ্ছে। যার অনেকগুলি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছে। এ বার সেগুলি খুলে ফেলতে হবে। কলকাতা, বিধাননগর এবং হাওড়া পুরসভাকে ওই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবহিত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’

এর আগে একাধিক বার রাজভবন, হাইকোর্ট ও বি বা দী বাগের অফিসপাড়াকে হোর্ডিং ও জঞ্জালমুক্ত রাখার চেষ্টা চালিয়েছে কলকাতা পুরসভা। বিভিন্ন সময়ে অভিযানও হয়েছে। কিন্তু রাজভবন ও হাইকোর্ট চত্বর ছাড়া বাকি অফিসপাড়ায় ফের যত্রতত্র হোর্ডিং বসেছে। রাজনৈতিক ব্যানারে ছেয়ে গিয়েছে এলাকা। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি পুরসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE