Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ওই রাস্তায় তো পুলিশ থাকেই না

অনুষ্কার কী হয়েছে, আমার মেয়েকে এখনই জানাতে পারব না। অনেক যন্ত্রণা নিয়ে রাস্তায় বসে অবরোধ করেছি। আজ অনুষ্কার সঙ্গে যা ঘটেছে, কাল আমাদের সন্তানদের সঙ্গেও তা হতে পারে।

ক্ষুব্ধ: দমদমে স্কুলের সামনে অভিভাবকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

ক্ষুব্ধ: দমদমে স্কুলের সামনে অভিভাবকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

মিঠু বসু (অভিভাবক)
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১১
Share: Save:

আমার মেয়ে ঐশী আর অনুষ্কা বন্ধু। দু’জনেই কেজি ক্লাসের ‘এ’ সেকশনের ছাত্রী। একই বেঞ্চে বসত। অনুষ্কার কী হয়েছে, আমার মেয়েকে এখনই জানাতে পারব না। অনেক যন্ত্রণা নিয়ে রাস্তায় বসে অবরোধ করেছি। আজ অনুষ্কার সঙ্গে যা ঘটেছে, কাল আমাদের সন্তানদের সঙ্গেও তা হতে পারে।

অনুষ্কা খুব শান্ত মেয়ে ছিল। ওর মা সুস্মিতা পড়াতেন বলে জানি। কখনও অনুষ্কা স্কুলে না গেলে আমার কাছ থেকেই সুস্মিতা জেনে নিতেন, সে দিন কী পড়ানো হয়েছে। মাঝে চিকেন পক্স হওয়ায় ২১ দিন অনুষ্কা স্কুলে যায়নি। সরস্বতী পুজোর পর থেকে আবার যাচ্ছিল। স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে ঐশীর সঙ্গে কত ছোটাছুটি করল। ওর সাদা চাদরে মোড়া দেহ দেখে কোন মায়ের মন ঠিক থাকে! প্রতিদিনই আমাদের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয়। হাত দেখিয়ে রাস্তা পার হই। পুলিশকর্মীরা কেউ থাকেন না। রাস্তার দু’ধারে এমন ভাবে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে যে, মেয়েকে নিয়ে হাঁটতে পারি না। এক-এক সময়ে প্রায় গায়ের উপর দিয়েই গাড়ি চলে যায়। দমদম রোড দিয়ে আসার সময়ে দেখি, পুরকর্মীরা যান নিয়ন্ত্রণ করছেন। অমরপল্লির কাছে যে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে, সেখানেও একই ব্যবস্থা। মৃণালিনী সিনেমার সামনেও সকালের দিকে লাঠিধারী অনেককে যান নিয়ন্ত্রণ করতে দেখেছি। শুধু আমার মেয়ের এই স্কুলে কোনও ব্যবস্থা নেই।

পৃথা দাস নামে এক অভিভাবক বলছিলেন, ‘সামনে স্কুল, আস্তে গাড়ি চালান’ সাইনবোর্ডটুকুও নেই। নাগেরবাজার ট্র্যাফিক গার্ড তো কাছেই। অথচ, স্কুলের সামনে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ যে দরকার, সেটাই কারও মনে হয়নি। স্কুলের সামনে ভাঙাচোরা রাস্তা। ফুটপাতে পথচারীদের অধিকার নেই। স্কুলের গলির ফুটপাতে দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। রাস্তায় প্রকাশ্যে শৌচকর্ম চলছে। উড়ালপুলের নীচে পার্কিংয়ের জন্য রসিদ দিয়ে টাকা নেওয়া হত। এখন শুনছি, সে সবই বেআইনি। তা হলে এত দিন রসিদ কেটে কারা টাকা নিত? উত্তর নেই।

ঘটা করে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। অথচ দমদম রোড, নাগেরবাজারে ট্র্যাফিক ব্যবস্থার ন্যূনতম পরিষেবা নেই! এখন শুনছি, স্পিড ব্রেকার, ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, বেআইনি পার্কিং সরানো— সব রাতারাতি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু তার জন্য সুস্মিতার কোল খালি হয়ে গেল। অনুষ্কা যেখানে চাপা পড়ল, সেখানেই আমরা মায়েরা পথে বসার পরে প্রশাসনের টনক নড়ল। এখন বোধহয় এটাই নিয়ম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nagerbazar Accident Road Safety
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE