প্রস্তুতি: নমাজের আগে। নাখোদা মসজিদের ওজুখানায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
দেড়শো বছরের ইতিহাসে এমনটা হয়নি আগে কখনও। ডেঙ্গি প্রতিরোধের কৌশল হিসেবে ওজুখানায় গাপ্পি মাছ ছাড়লেন নাখোদা মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
শিয়ালদহের কোলে মার্কেট থেকে ওই মাছ সংগ্রহ করে সম্প্রতি মসজিদের ওজুখানায় ছাড়া হয়েছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধের পাশাপাশি এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতার প্রসারের উদ্দেশ্যেই তাঁরা জলাধারে গাপ্পি মাছ ছেড়েছেন। কারণ, ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী মশা এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভাকে গাপ্পি মাছ দ্রুত খেয়ে ফেলে। এডিসকে উৎসেই বিনাশ করতে ছোট জলাধারে গাপ্পি মাছ ছাড়াটা প্রচলিত কৌশল। সেই কৌশলকেই এ বার হাতিয়ার করেছেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি মসজিদের সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। অতীতে নাখোদা মসজিদ তৈরি ও পরবর্তীকালে তার সংস্কারের পিছনে গুজরাতের কচ্ছের মেমন সম্প্রদায়ের যে পরিবারগুলির সর্বাধিক অবদান ছিল, তেমনই একটি পরিবারের উত্তরসূরি মহম্মদ ইকবাল বলেন, ‘‘এত দিন আমরা নিজেদের মতো করে ডেঙ্গি প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতাম। প্রতিদিন এত লোকজন আসেন এখানে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতেই হয়। কিন্তু এ বারই প্রথম বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ওজুখানায় গাপ্পি ও তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছি। মশার লার্ভা যাতে উৎসেই ধ্বংস হয়, সে কারণেই মাছগুলি ছাড়া হয়েছে। এত দিন ওজুখানায় অন্য মাছ ছাড়া ছিল।’’
প্রসঙ্গত, ১৯২৬ সালে নাখোদা মসজিদের বর্তমান কাঠামো তৈরি হয়। কিন্তু তার আগে থেকেই মসজিদের একটা ইতিহাস ছিল। বর্তমানে যেখানে নাখোদা মসজিদ রয়েছে, আগে সেখানে দু’টি ছোট মসজিদ ছিল। কচ্ছের মেমন সম্প্রদায়ই সেই দু’টি মসজিদকে একত্র করে নাখোদা মসজিদের বর্তমান কাঠামো নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছিলেন। মসজিদের ভিতরে জলাধারগুলিও তখনকারই। ইকবাল জানালেন, একটি প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। অন্যটির বয়স একশো বছরের মতো।
নমাজ পড়তে যাওয়ার আগে ওজুখানার জলেই হাত-মুখ ধুয়ে নেন সকলে। এটাই রীতি। ভাষাবিদেরা জানাচ্ছেন, ওজুখানা শব্দটি আরবি-ফারসি মিশ্রিত শব্দ। ওজু শব্দটি আরবি। কিন্তু খানা শব্দটি হল ফারসি। ভাষাবিদ সুভাষ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নমাজ পড়ার আগে হাত-মুখ ধোয়ার এই রীতিকে ওজু বলা হয়। এটি আরবি শব্দ। মুসলিমদের আচার-ধর্ম সংক্রান্ত সমস্ত শব্দই মূলত আরবি। সেখানে খানা হল ফারসি শব্দ। নমাজ পড়ার আগে যে ঘরে হাত-মুখ ধুয়ে পরিষ্কার হওয়া যায়, তাকেই ওজুখানা বলা হয়। উচ্চারণগত দিক থেকে শব্দটি ওয়াজুখানা। আবার অনেক জায়গায় বিকল্প বানান হিসেবে অজুখানা বলা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে ওজুখানাই প্রচলিত।’’
মসজিদ সূত্রের খবর, প্রতিদিন সেখানে নমাজ পড়েন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। ফলে ওজুখানার জল যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, সব সময়েই সে দিকে নজর দেওয়া হয়। কলকাতা পুরসভা জল সরবরাহ করে বটে, কিন্তু ওজুখানায় জল সরবরাহের জন্য মসজিদের নিজস্ব ব্যবস্থাও রয়েছে। ইকবাল জানাচ্ছেন, প্রতি তিন মাস অন্তর ওজুখানার জল পাল্টানো হয়। এই মুহূর্তে রমজান চলছে। রমজানের পরেই ফের ওজুখানার জল পাল্টানো হবে। ইকবালের কথায়, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে সকলকেই সচেতন হতে হবে। আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি। তাতে যদি অন্য অনেকে সচেতন হন, তা হলে সেটাই আমাদের লাভ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy