Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

লেখো তো দেখি! কী ভাবছে শিক্ষামহল

যখন যন্ত্রের চাপে হাতের লেখা চর্চার রীতি প্রায় উধাও হতে বসেছে, সে সময়ে শ্যামবাজারের একটি ক্লাবের এ হেন উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে সমাজের নানা স্তরে। সমাজের সর্বত্র কি পড়াশোনার প্রাথমিক এই অঙ্গটি রক্ষার চেষ্টা এখন আর হয়, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।

মনোযোগী: লিখতে ব্যস্ত প্রতিযোগীরা। রবিবার, শ্যামবাজারের সেই ক্লাবে। ছবি: সুমন বল্লভ

মনোযোগী: লিখতে ব্যস্ত প্রতিযোগীরা। রবিবার, শ্যামবাজারের সেই ক্লাবে। ছবি: সুমন বল্লভ

সুপ্রিয় তরফদার ও সুমন বল্লভ
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০১
Share: Save:

উত্তর কলকাতার দশ ফুটের সরু গলি। সেখানে প্যান্ডেলের তলায় রাস্তার উপরেই পেন-খাতা নিয়ে বসে পড়েছে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণির প্রায় সাড়ে তিনশো পড়ুয়া। খাতায় কার্যত ডুবে গিয়ে টানা লিখে চলেছে তারা। কারণ সে লেখা যে শুধু লেখা নয়, সেখানে চলছে হাতের লেখা প্রতিযোগিতা।

যখন যন্ত্রের চাপে হাতের লেখা চর্চার রীতি প্রায় উধাও হতে বসেছে, সে সময়ে শ্যামবাজারের একটি ক্লাবের এ হেন উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে সমাজের নানা স্তরে। সমাজের সর্বত্র কি পড়াশোনার প্রাথমিক এই অঙ্গটি রক্ষার চেষ্টা এখন আর হয়, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।

বাংলা লেখার অভ্যাস স্কুলপড়ুয়াদের থেকে কার্যত হারাতে বসেছে। পুরনো সেই রেওয়াজই বাঁচানোর চেষ্টা চলছে বলে জানালেন ওই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তারা। শ্যামবাজারের নিকাশিপাড়ার সেই ক্লাবের সম্পাদক শেখরচন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘১৪ বছর ধরে ক্লাবের প্রতিষ্ঠা দিবসে এই প্রতিযোগিতা করা হয়। এ বছর ৩৫৩ জন পড়ুয়া এতে যোগ দিয়েছে।’’ তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের তিনটি বিভাগে ভাগ করে প্রবন্ধ লিখতে দেওয়া হয়। এর ফলে যেমন হাতের লেখার গতি বাড়ে, তেমনই বানান ভুলের প্রবণতাও কমে বলে মত শিক্ষাবিদদের। স্কুলগুলিও কি চিন্তা করে সে ভাবেই? গুরুত্ব পায় কি হাতের লেখা?

প্রাথমিকে খাতায়-কলমে হাতের লেখা অভ্যাস করার রীতি চালু থাকলেও বহু স্কুলেই সে দিকে জোর দেওয়া হয় না বলেই অভিযোগ। আর মাধ্যমিক পর্যায়ে তো এই রীতি উঠে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বহু স্কুলের শিক্ষকেরাই। হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল দাস বলেন, ‘‘আমাদের সময়ে যে ভাবে হাতের লেখার উপরে জোর দেওয়া হত, এখন সেটা হয় না।’’ তিলজলার ব্রজনাথ বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সূর্যকুমার ত্রিপাঠীও বলেন, ‘‘প্রাথমিকে হাতের লেখার রীতি চালু থাকলেও মাধ্যমিকে নেই।’’ যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য আবার জানান, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে হাতের লেখা অভ্যাস করতে বলা হয়। ছুটির শেষে সেই কাজ স্কুলে দেখাতে হয়। কিন্তু এর পরে সেটা আর আলাদা করে সম্ভব হয় না। তবে প্রতিটি বিষয়ে তাদের কাজ দেওয়া হয়। তখন তো হাতেই লিখতে হয় পড়ুয়াদের। যদিও এর সঙ্গে হাতের লেখার অভ্যাস তৈরি করার বিস্তর ফারাক আছে বলে মনে করছে শিক্ষামহল।

তবে আইসিএসই স্কুল সংগঠনের সম্পাদক নবারুণ দে জানাচ্ছেন, তাঁদের বোর্ডের অধীনে থাকা বহু স্কুলেই হাতের লেখার জন্য বিশেষ ক্লাস হয়। এই বিষয়ে পরীক্ষাও হয়। তিনি বলেন, ‘‘নিচু ক্লাসে ভাল হাতের লেখার জন্য বাড়তি নম্বরও থাকে। হাতের লেখাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়।’’

হাতের লেখায় জোর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ওই ক্লাবের উদ্যোগ খুবই ভাল। হাতের লেখার অভ্যাসের ফলে সব বিষয়ে মনোযোগও বাড়ে। বাক্য গঠন ও বানান যথাযথ হয়। এখন হাতের লেখার গুরুত্ব অনেক কমেছে। তবে ইচ্ছে থাকলে এখনও উপায় রয়েছে।’’

ওই ক্লাবের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি শাঁওলি মিত্র বলেন, ‘‘লেখাপড়ার ক্ষেত্রে হাতের লেখা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সময়ে হাতের লেখার জন্য বিশেষ ক্লাস থাকত। একই ভাবে শ্রুতি লিখনও করতে হত। এর ফলে যতটুকু জানি, ততটুকু সুন্দর ভাবে পরিবেশন করা যায়। আমার মনে হয় এই বিষয়ে স্কুলে ও বাড়িতে গুরুত্ব বাড়ানো উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Competition Hand Writing Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE