খুশবু কুমারী। ঝুলন্ত অবস্থায় মিলল তাঁরই দেহ। —নিজস্ব চিত্র।
দুটো হাত ওড়না দিয়ে বাঁধা। মুখে আটকানো মালপত্র প্যাক করার জন্য ব্যবহৃত বাদামি রঙের টেপ। বিছানার উপর সিলিং পাখা থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছেন ২৮ বছরের স্ত্রী। দরজা খুলে এমন দৃশ্যই দেখলেন ওই যুবতীর স্বামী বিবেক কুমার। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, খুন করা হয়েছে ওই যুবতীকে।
শুক্রবার সকালে কেষ্টপুরের প্রফুল্ল কাননের ভাড়া বাড়িতে পৌঁছন বিবেক। বোকারোর একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক তিনি। স্ত্রী খুশবু বোকারোর বাসিন্দা হলেও কলকাতায় বি-টেক পড়ছিলেন। সম্প্রতি তিনি একটি চাকরিও পান। সেই কারণেই তিনি কলকাতায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতেন। প্রতি সপ্তাহে বোকারো থেকে কলকাতায় আসতেন বিবেক।
তাঁদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন অলোক কুমার। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘সকালে হঠাৎ বিবেক বেল বাজান। দরজা খুলতেই দেখেন তাঁর স্ত্রী ঝুলছেন। আমরা তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি একটা লাল রঙের ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন খুশবু। হাত দুটো অন্য একটা ওড়না দিয়ে বাঁধা। মুখে টেপ আটকানো। বিবেক আমাদের বলেন, চিকিৎসককে ফোন করতে।” এর পরেই অলোক ১০০ ডায়াল করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বাগুইআটি থানার পুলিশ। তদন্তকারীরা খুশবুর দেহ ফাঁস থেকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: বাড়ছে চাহিদা, শহরে বাজেয়াপ্ত ২ কোটির চোরাই বিদেশি সিগারেট
এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন খুশবু কুমারী।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মৃতার স্বামী তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, তিনি ফ্ল্যাটের সামনে এসে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ পান। বার বার কলিং বেল বাজানোর পর স্ত্রী দরজা খোলেননি। তখনই তাঁর নজরে পড়ে দরজার চাবি ঝুলছে বাইরে দরজার উপরে থাকা হ্যাচ-বোল্টে। সেই চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে তিনি ওই দৃশ্য দেখেন। ঘটনাস্থলে দুপুরে পৌঁছন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা গিয়ে বিছানার উপর একটি ছোট টুলও উদ্ধার করেন। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, গোটা ঘটনার সঙ্গে ওই টুল এবং তার অবস্থান তদন্তে উল্লেখযোগ্য সূত্র জোগান দেবে। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ থেকে আমাদের সন্দেহ খুশবুকে খুন করা হয়েছে। কারণ নিজের হাত বেঁধে কেউ আত্মহত্যা করতে পারেন না। পাশাপাশি খুশবুর মুখও বাঁধা ছিল।” অন্য দিকে, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলে গলায় এবং ঘাড়ে যে রকম দাগ পাওয়া যায় (পুলিশি পরিভাষায় লিগেচার মার্ক) তা-ও পাওয়া যায়নি খুশবুর দেহে।
আরও পড়ুন: দুর্ঘটনায় মৃত্যু যুবকের, রণক্ষেত্র ব্যারাকপুর
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।
বিবেককে ইতিমধ্যেই আটক করে জেরা করছে পুলিশ। কারণ তদন্তকারীদের দাবি, বিবেকের বয়ানে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘বিবেক দাবি করেছেন যে, বাড়ি ঢোকার কয়েক ঘণ্টা আগেও খুশবুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।” পুলিশ খুশবু এবং বিবেকের মোবাইলের কল রেকর্ডস খতিয়ে দেখছে। খুশবুর সঙ্গে অন্য কারওর যোগাযোগ ছিল কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে কেউ এসেছিলেন কি না সেটাও পরীক্ষা করে দেখছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক তদন্তের শেষে পুলিশ জানতে পেরেছে, এডুকেশন লোন নিয়ে বি-টেক পড়ছিলেন খুশবু। তাঁর লোন নিয়ে পড়াশোনা এবং কলকাতায় থাকা নিয়ে বিবেকের সঙ্গে অশান্তিও চলছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তবে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির উপস্থিতির কথা এখনই উড়িয়ে দিতে পারছেন না তদন্তকারীরা।
(নিজস্ব চিত্র)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy