Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রাবাসে ঝুলন্ত দেহ ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়ার

তারাতলার ওই ইনস্টিটিউট লাগোয়া ছাত্রাবাসেই থাকতেন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অরিত্র। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ অরিত্রের মা তাঁকে মোবাইলে বারবার ফোন করলেও তা বেজে যায়।

অরিত্র মুখোপাধ্যায়

অরিত্র মুখোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ০৪:১৬
Share: Save:

২০১৬ সালে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হয়ে প্রায় দেড় বছর বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি তারাতলার ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্টে ক্লাস শুরু করেন দমদমের বাসিন্দা অরিত্র মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকালে বছর চব্বিশের সেই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল ওই ইনস্টিটিউট লাগোয়া ছাত্রাবাসে। পুলিশ এই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।

তারাতলার ওই ইনস্টিটিউট লাগোয়া ছাত্রাবাসেই থাকতেন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অরিত্র। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ অরিত্রের মা তাঁকে মোবাইলে বারবার ফোন করলেও তা বেজে যায়। এর পরে তিনি হস্টেল সুপারকে বিষয়টি জানান। হস্টেল সুপার অরিত্রের ঘরের সামনে গিয়ে অনেক বার ডাকাডাকি করেও সাড়া পাননি। তার পরে পাশের জানলা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান ওই ছাত্রকে। খবর দেওয়া হয়

তারাতলা থানায়। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে অরিত্রকে উদ্ধার করে বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদ থেকেই আত্মঘাতী হয়েছেন ওই ছাত্র।

বরাবরের মেধাবী ছাত্র অরিত্রের অকালমৃত্যুতে তারাতলার ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্টে শোকের ছায়া নেমে আসে। ২০১৫ সালে সেখানে ভর্তি হওয়ার পরের বছরই বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় গুরুতর চোট পান অরিত্র। তারাতলার ওই ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ নিশীথ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘অত বড় দুর্ঘটনার পরেও অরিত্রের ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতায় আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম। শারীরিক অক্ষমতার কারণে ও হস্টেলে থেকেই নিয়মিত ক্লাস করত। বাড়ি থেকে সপ্তাহে দু’দিন ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট আসতেন। শিক্ষক ও ছাত্রদের সকলেরই খুব প্রিয় ছিল অরিত্র। বুধবার সন্ধ্যাবেলাতেও আমাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেছে। ওর এমন পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’’

অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘ওর দুর্ঘটনার পরে চিকিৎসার ব্যাপারে সকলেই পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমি ওকে খুব কাছ থেকে দেখেছি।’’ ইনস্টিটিউটের মূল গেটের কাছে কর্তব্যরত এক নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, ‘‘ক্লাস শেষে বিকেলের দিকে দেখা হলেই হাসিমুখে বলত, কেমন আছেন? সেই হাসিমুখটাই বারবার মনে পড়ছে।’’

অরিত্রের ভাই উদাত্ত মুখোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। তিনি বললেন, ‘‘কাল থেকেই দাদার পরীক্ষা ছিল। বুধবার সন্ধ্যাতেও ওর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। দাদার মৃত্যু নিয়ে আমাদের কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই।’’ অরিত্রের মা রাজশ্রী মুখোপাধ্যায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। এ দিন সকালে ছেলের খবর পেয়ে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। পরে অবশ্য কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Management Student Hanging Body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE