Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
এসএসকেএম

বহু ওষুধ পেতে হয়রানি, ‘জেহাদ’ ঘোষণা ডাক্তারদের

সরকারি হাসপাতালে সব পরিষেবা ‘ফ্রি’-তে দিতে কার্যপ্রক্রিয়া ঠিক করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তার বিরুদ্ধেই প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালের ফার্মাসিতে ওষুধের আকালে তাঁরা জেরবার। বিভিন্ন জায়গায় ওষুধের রিক্যুইজিশন স্লিপ লিখতে লিখতে চিকিৎসাই করতে পারছেন না তাঁরা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৩৬
Share: Save:

সরকারি হাসপাতালে সব পরিষেবা ‘ফ্রি’-তে দিতে কার্যপ্রক্রিয়া ঠিক করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তার বিরুদ্ধেই প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালের ফার্মাসিতে ওষুধের আকালে তাঁরা জেরবার। বিভিন্ন জায়গায় ওষুধের রিক্যুইজিশন স্লিপ লিখতে লিখতে চিকিৎসাই করতে পারছেন না তাঁরা।

ওই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আজ, বুধবার তাঁরা এ ব্যাপারে সুপার ও অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবাদপত্র দেবেন। কিন্তু এই ঘটনায় আরও একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। তা হল, এসএসকেএমের মতো হাসপাতালের ফার্মাসিতে এত অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ থাকবে না কেন? তা হলে ফ্রি পরিষেবা দেওয়ার অর্থ কী?

কী কী ওষুধ মিলছে না এসএসকেএমের ফার্মাসিতে? ওই চিকিৎসকেরা জানান, শীতে অনেকেরই নেবুলাইজার প্রয়োজন হয়। সেই নেবুলাইজারে সলিউশন দিতে হয়। তা নেই। অক্সিজেন-মাস্ক চারটি চেয়ে পাঠানো হলে মিলছে মাত্র একটি। হাসপাতালের এক প্রাক্তনী কবিউল হকের কথায়, ‘‘পিজিটি-রা আমাদের বলছেন, একই মাস্ক একাধিক লোককে পালা করে দিতে হচ্ছে। অনেককে আবার সময় মতো নেবুলাইজার বা মাস্ক দেওয়াই যাচ্ছে না।’’

চিকিৎসকেরা আরও জানান, ‘অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফেকশন’ নিয়ে কেউ এলে তাঁকে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ দিতে হয়। সেই ওষুধ অমিল। পাওয়া যাচ্ছে না ইনসুলিন, ব্যথা কমানোর ওষুধ, ম্যালেরিয়ার ইঞ্জেকশন, জরুরি অ্যান্টিবায়োটিক, এমনকী ক্ষত সেলাইয়ের সুতোও। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য এগুলি চেয়ে স্লিপ পাঠালেই ফার্মাসি থেকে ‘এনএ’ (নট অ্যাভেলেব্‌ল) লিখে ফেরত আসছে বলে অভিযোগ ওই চিকিৎসকদের। তাঁদের কথায়, ‘‘ফার্মাসিতে এই সব ওষুধ থাকবে না, আবার কেনানোও যাবে না, এ ভাবে চলে না। কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাব।’’

কেন ফার্মাসিতে থাকছে না ওই সব ওষুধ? সুপার মানস সরকার বলেন, ‘‘আমি ছুটিতে। তাই ফার্মাসিতে ওষুধের কী অবস্থা, তা খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’’ অধ্যক্ষ মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন শুনে ফোন নামিয়ে রাখেন। তবে বিদ্রোহী চিকিৎসকেরা ওষুধের ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম কেন মানবেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। নিয়ম অনুসারে, ফার্মাসিতে কোনও ওষুধ অমিল বা কম থাকলে চিকিৎসকেরা মেডিক্যাল স্টোরে রিক্যুইজিশন দেবেন। সেখানেও না থাকলে সুপারকে জানাতে হবে। তিনি কেনানোর ব্যবস্থা করবেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘ওষুধ সংস্থাগুলির থেকে চিকিৎসকদের একাংশ কমিশন পাচ্ছেন না বলেই তাঁরা সমস্যা তৈরি করতে চাইছেন।’’

এ ব্যাপারে বিদ্রোহী চিকিৎসকদের অন্যতম জয় দাসবর্মণ বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্তারা সব বুঝেও না বোঝার ভান করছেন। ইন্ডোরে এত রোগী, তাঁদের বাঁচাতে চিকিৎসা করব নাকি সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় স্লিপ পাঠাব?’’ মেডিসিন বিভাগের আর এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্লিপ পাঠাতেই সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোককে ওষুধ কিনে আনতেও বলতে পারছি না। এই অবস্থায় রোগীর মৃত্যু হলে তার দায় কে নেবেন?’’

সরকারি চিকিৎসক ও নার্সদের অন্যতম সংগঠন, মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের তরফে অংশুমান মিত্রেরও অভিযোগ, ‘‘একে তো ওষুধ নেই। তার উপরে আবার অলিখিত ফরমান জারি হয়েছে, রোগীর বাড়ির লোককে ওষুধ না-থাকার কথা জানানো যাবে না। ‘ফ্রি’ পরিষেবার নামে প্রহসন চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Kolkata drug Harassment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE