ছাত্রী-নিগ্রহের অভিযোগের জেরেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য-বিদায়ের পরে সেই কলরব স্তিমিত হতে না-হতেই সেখানে ফের উঠেছে শ্লীলতাহানির অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টার একটি হেল্পলাইন চালু করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। ছাত্রী, শিক্ষিকা ও মহিলা কর্মীরা যাতে শারীরিক নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি সংক্রান্ত যে-কোনও অভিযোগ পত্রপাঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি (আইসিসি)-কে জানাতে পারেন, সেই জন্যই এই হেল্পলাইন। সেই সঙ্গে একটি ই-মেল আইডি-ও তৈরি করা হয়েছে একই উদ্দেশ্যে। সহ-উপাচার্য তথা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আশিসস্বরূপ বর্মা মঙ্গলবার জানান, হেল্পলাইনের নম্বরটি হল ৮৬৯৭৯৮১২২২। ই-মেল আইডি icc@admin.jdvu.ac.in।
২০১৪ সালের অগস্টের পরে গত শুক্রবার আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানান যাদবপুরের এক ছাত্রী। আগের বার আঙুল উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কয়েক জন ছাত্রের দিকে। এ বারেও অভিযুক্ত সেখানকার ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার কিছু ছাত্র। স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী শুক্রবার যাদবপুর থানায় এফআইআর দায়ের করে জানান, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ‘ফেস্ট’ বা সাংস্কৃতিক উৎসবে ঢুকতে গিয়ে ব্যাগ তল্লাশির সময় শ্লীলতাহানির শিকার হন তিনি। মঙ্গলবার তিনি এই বিষয়ে আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশি সূত্রের খবর। অভিযুক্ত ছাত্রদের সোমবারেই গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাঁদের জামিনে মুক্তিও দেওয়া হয়। এবং ওই দিনই ঘটনার রিপোর্ট রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরে জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
কিন্তু শ্লীলতাহানির সাম্প্রতিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিরুদ্ধ-স্বরও ক্রমশ জোরদার হচ্ছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফেস্টে ঢোকার সময় ওই ছাত্রীর সঙ্গে ঠিক কী হয়েছিল, তা জানিয়ে ‘প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান’ নামে একটি খোলা চিঠি এ দিন বিলি করা হয়েছে ক্যাম্পাসে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরই ছ’জন ছাত্রী ওই চিঠি লিখেছেন। তাঁরা ইতিমধ্যেই নিজেদের বক্তব্য লিখিত ভাবে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। চিঠির বয়ান অনুযায়ী, অভিযোগকারিণী ছাত্রীই ওই দিন উদ্যোক্তাদের কয়েক জনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হাতাহাতি করেন। অভিযোগকারিণী যে-ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তাদের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, নিগৃহীতাকেই দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা চলছে।
এই চাপান-উতোরের মধ্যেই ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য এ দিন জানান, শ্লীলতাহানির অভিযোগের তদন্তভার ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসি-কে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তেরা কি এখন ক্লাস করতে পারবেন? ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আশ্বাস দিয়েছেন, “নিশ্চয়ই পারবেন। তদন্তে এবং আদালতে অপরাধ প্রমাণিত না-হলে কাউকেই দোষী বলে ধরে নেওয়া যায় না।”
ক্যাম্পাসে লিঙ্গ-সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং আইসিসি-র গঠন ও তার কাজকর্ম নিয়ে সবিস্তার আলোচনার জন্য কাল, বৃহস্পতিবার একটি সভার আয়োজন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। সেই সভায় জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকেরা যোগ দেবেন। যাদবপুরের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও সেখানে থাকার কথা। ছাত্র-প্রতিনিধিদের ছাড়াই সম্প্রতি আইসিসি পুনর্গঠন করেছেন কর্তৃপক্ষ। ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় অংশের দাবি, কমিটিতে তাঁদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy