Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Monument

বিস্মৃতির অতলে স্মৃতির সৌধ

লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেই বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়ের এক স্মৃতিসৌধ। পুরনো নথি থেকে জানা যায়, এক সময়ে যশোর রোড থেকেই দেখা যেত সেই সৌধ।

অন্তরাল: স্কুল চত্বরে সেই সৌধ। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

অন্তরাল: স্কুল চত্বরে সেই সৌধ। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:২৫
Share: Save:

লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেই বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়ের এক স্মৃতিসৌধ। পুরনো নথি থেকে জানা যায়, এক সময়ে যশোর রোড থেকেই দেখা যেত সেই সৌধ। দমদমের সেন্ট স্টিফেন্স স্কুল ভবনের সম্প্রসারণের পরে আড়ালে চলে গিয়েছে সেটি। কখনও কখনও ইতিহাস উৎসাহী কিছু মানুষ আসেন দেখতে। তবে ময়দানের শহিদ মিনারের থেকেও পুরনো দমদমের ঐতিহাসিক ওই স্মৃতিসৌধ সংস্কারের সময়েই আমূল বদলে গিয়েছে বলে অভিযোগ ইতিহাস গবেষকদের একটি অংশের।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বেঙ্গল প্রভিন্সের অন্তর্গত বেঙ্গল আর্টিলারির প্রধান কেন্দ্র ছিল দমদম। তথ্য বলছে, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে বেঙ্গল আর্টিলারির লেফটেন্যান্ট হয়ে আসেন কর্নেল থমাস ডিন পিয়ার্স। থমাস লেফটেন্যান্ট থাকাকালীনই ১৭৮৯ সালে দমদম অস্ত্রাগারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। তাঁর স্মৃতিতেই ওই সৌধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় বেঙ্গল আর্টিলারি।

থমাসের সময়ে দমদমের বেঙ্গল আর্টিলারির সুনাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। থমাসের মৃত্যুর পরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আর পাঁচটি সৌধের মতো হবে না তাঁর সৌধ। তাই এই সৌধটি গ্রিক ও রোমান শিল্পের মিশ্রণে ‘করেন্থিয়ান’ ভাস্কর্যে তৈরি হয়। নাম দেওয়া হয় করিন্থিয়ান পিলার। তখনও শহরে তৈরি হয়নি শহিদ মিনার। সে সময়ে এটি ছিল অন্যতম দ্রষ্টব্য। ১৮১৮ সালে তার পাশেই সেন্ট স্টিফেন্স চার্চ তৈরি হয়েছিল।

গবেষক মৌমিতা সাহার কথায়, ‘‘ময়দানের শহিদ মিনার হয়েছিল ১৮২৮ সালে। এই স্মৃতিসৌধ হয়েছিল ১৭৮৯ সালে। মিনারটি তখন রাস্তা থেকেই দেখা যেত। ১৯৭১ সালে সেন্ট স্টিফেন্স স্কুল তৈরি হয়। তারও বেশ কয়েক বছর পরে ওই স্কুল ভবনের সম্প্রসারণের পরে আড়ালে চলে যাওয়া সৌধে অযত্নের ছাপ দেখা দিতে থাকে। পড়ে থেকে ভগ্ন প্রায় হয়ে যায় সেটি। মাথার কারুকাজ ছিল দেখার মতো। সংস্কার করতে গিয়ে সেই সব প্রায় পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ সেন্ট স্টিফেন্স স্কুল ও চার্চ একই চত্বরে। স্কুলের মাঠের ধার ঘেঁষে থাকা সৌধটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন চার্চ কর্তৃপক্ষ। ওই চার্চের প্রেসবাইটার ইন চার্জ অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিংশ শতকের নয়ের দশকের মাঝামাঝি সেটি সংস্কার করা হয়েছিল। সৌধটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয়। উৎসাহীরা চাইলে সৌধ দেখতে আসতে পারেন।’’

বেঙ্গল আর্টিলারির সাক্ষী সৌধটি রাজ্য হেরিটেজের তালিকায় নেই বলেই দাবি করেছেন দমদম হেরিটেজ সংরক্ষণ সমিতির সদস্যেরা। তবে তা হেরিটেজ তালিকায় থাকা আবশ্যিক বলে দাবি তাঁদের। এই সমিতির সম্পাদক শ্যামল ঘোষ বলেন, ‘‘ইতিহাস সচেতনতা না থাকায় সংস্কার পর্বে সৌধের আসল নকশা নষ্ট হয়েছে। তবে সৌধের ফলক এখনও রয়েছে।’’ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সেক্রেটারি উমাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অস‌ংখ্য ঐতিহ্যশালী সম্পদ সারা রাজ্যে ছড়িয়ে আছে। সব

তথ্য আমাদের জানা না-ই থাকতে পারে। সাধারণ মানুষ দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তা জানা যায়। এর পরে তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE