Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রোগীর মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ

শনিবার অর্পিতা জানান, গত ৮ মার্চ বুকে ব্যথা অনুভব করায় কমলবাবুকে আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোগীর হৃৎপিণ্ডের তিনটি ভাল্‌ভের অবস্থা খারাপ দেখে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দ্রুত বাইপাস সার্জারির পরামর্শ দেন।

কমল দত্ত

কমল দত্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫১
Share: Save:

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে বারাসতের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করল রোগীর পরিবার। বারাসতের নবপল্লির বাসিন্দা মৃত কমল দত্তের (৬৩) মেয়ে অর্পিতা দত্তের অভিযোগ, সম্পূর্ণ ভুল চিকিৎসার জন্য তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার অর্পিতা জানান, গত ৮ মার্চ বুকে ব্যথা অনুভব করায় কমলবাবুকে আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোগীর হৃৎপিণ্ডের তিনটি ভাল্‌ভের অবস্থা খারাপ দেখে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দ্রুত বাইপাস সার্জারির পরামর্শ দেন। অর্পিতার কথায়, ‘‘আর জি করে অস্ত্রোপচারের দিন পেতে দেরি হচ্ছিল। তাই বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’’ আনন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ২৩ এপ্রিল অস্ত্রোপচারে দিন দিয়েছিলেন। ‌অর্পিতা বলেন, ‘‘বাবার অর্শ থাকায় হার্টের ওষুধ খেলে যে রক্তপাত হয়, তা চিকিৎসককে জানিয়েছিলাম। তা শুনে আগে উনি অর্শ অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেন।’’

শুক্রবার সেই অস্ত্রোপচার করানোর জন্যই চিকিৎসক তপনজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে বারাসতের নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন কমলবাবু। ওই রাতেই রোগীর মৃত্যু হলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে সরব হয়েছে মৃতের পরিবার। অর্পিতার অভিযোগ, ‘‘বাবার হার্টের অবস্থা জানার পরে চিকিৎসক তপনজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, অস্ত্রোপচারের সময়ে এক জন কার্ডিয়োলজিস্ট থাকবেন। সেই মতো টাকাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনও কার্ডিয়োলজিস্টই ছিলেন না।’’

অর্পিতার কথায়, ‘‘শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ অস্ত্রোপচারের আগে ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময়ই বাবা অস্বস্তি বোধ করছিলেন। সে কথা চিকিৎসকদের জানালে বলা হয়েছিল, ভয়ের কিছু নেই। ঘণ্টা দুয়েক

পরে জানতে পারি, বাবার অবস্থা

ভাল নয়, ভেন্টিলেশনে দিতে হবে।’’ তাঁর দাবি, এক জন হৃদ্‌রোগীকে

দেখার মতো কোনও কার্ডিয়োলজিস্ট তখন নার্সিংহোমে ছিলেন না। ঘণ্টা খানেক পরে এক জন কার্ডিয়োলজিস্ট রোগীকে দেখে জানান, আর কিছু

করার নেই। এ দিকে, তাঁকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করানো তখন অসম্ভব। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে কমলবাবুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। অর্পিতার কথায়, ‘‘ওই মুহূর্তগুলো কী অসহায় অবস্থায় কাটিয়েছি বোঝাতে পারব না। এক জন হৃদ্‌রোগীকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষমতা যে ওই হাসপাতালের নেই। তা আগে জানানো হল না কেন?’’

অভিযোগ প্রসঙ্গে চিকিৎসক তপনজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোগীকে সব ধরনের পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের সময় কার্ডিয়োলজিস্ট থাকবেন এমন কথা বলিনি। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ সব শুনে হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক দিলীপ কুমার বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের সময়ে কার্ডিয়োলজিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক নয় ঠিকই। তবে তা অনেকটা নির্ভর করছে রোগীর স্বাস্থ্য এবং কী ধরনের অস্ত্রোপচার হচ্ছে তার উপরে। তা ছাড়া অর্শ অস্ত্রোপচার তো আংশিক সংজ্ঞাহীন করেও সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কেন তা হয়নি, দেখতে হবে।’’

কমলবাবুর পরিবারের তরফে শুক্রবার গভীর রাতে বারাসত থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Negligence Death Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE