এ ভাবে প্রকাশ্যেই এত দিন চলেছে হট মিক্সের যন্ত্র। ফাইল চিত্র
সব জেনেশুনেও এত দিন হট মিক্স প্লান্ট চালানোর জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র নেয়নি কলকাতা পুরসভা!
অর্থাৎ, এত দিন ধরে পুরসভার হট মিক্স প্লান্টগুলি ‘বেআইনি’ ভাবেই চলেছে। এমনই অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের একাংশের। পুরসভার তথ্যও বলছে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে হট মিক্স প্লান্ট বন্ধের পরেই এ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। পামারবাজার ও গড়াগাছা হট মিক্স প্লান্ট বন্ধ রাখার পাশাপাশি পর্ষদের ছাড়পত্রের জন্য আবেদনও করা হয়েছে। নতুন মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য জানিয়েছেন, শহরের বাইরে দু’টি নতুন হট মিক্স প্লান্ট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গেই তিনি জানান, হট মিক্স প্লান্ট তৈরি করা হবে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৮ ডিসেম্বর হট মিক্স প্লান্ট সংক্রান্ত মামলাটির পরিবেশ আদালতে ওঠার কথা। কিন্তু তার আগে প্রশাসনিক মহলের একাংশে প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন যখন পরিবেশ আদালত অন্যান্য রাজ্যে হট মিক্স প্লান্ট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে, তখন এখানেও যে একই ঘটনা ঘটবে, তেমনটা ভাবার বিচক্ষণতা কেন দেখাননি পুর কর্তৃপক্ষ? এখন প্রয়োজন থাকলেও হট মিক্স প্লান্ট বন্ধ রাখতে হচ্ছে কেন?
প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বছর চারেক আগে থেকেই হট মিক্স প্লান্ট বন্ধ করা নিয়ে সারা দেশে আলোচনা শুরু হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে ‘ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি কাউন্সিল’ (এনপিসি)-এর মাধ্যমে অতীতে একটি সমীক্ষা করেছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সেখানে সারা দেশের মোট ৫৭৭টি হট মিক্স প্লান্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে কত ধরনের হট মিক্স প্লান্ট হয়, তা নির্দিষ্ট করে ভাগ করা হয়েছিল। প্রযুক্তি, ‘মোবিলিটি’ ও উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী হট মিক্স প্লান্টগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। প্রযুক্তির দিক থেকে ব্যাচ হট মিক্স প্লান্ট, ড্রাম হট মিক্স প্লান্ট, প্যারালাল ফ্লো ড্রাম হট মিক্স প্লান্ট এবং কাউন্টার ফ্লো ড্রাম হট মিক্স প্লান্ট— এই চার ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। ‘মোবিলিটি’র বিচারে স্থায়ী হট মিক্স প্লান্ট এবং ‘স্কিড মাউন্টেড’ বা ‘পোর্টেবল’ হট মিক্স প্লান্টে ভাগ করা হয়েছিল। উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী আবার ছোট, মাঝারি এবং বড় হট মিক্স প্লান্ট চিহ্নিত করা হয়েছিল।
পরিবেশের উপরে হট মিক্স প্লান্টের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওই সমীক্ষা বলেছিল, উৎপাদন প্রক্রিয়ার সময়ে প্লান্টগুলি থেকে বাতাসে ভাসমান কণার পাশাপাশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের মতো নানা গ্যাস নির্গত হয়। বিভিন্ন ধরনের ১৫টি হট মিক্স প্লান্টের উপরে পরীক্ষা চালিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে, হট মিক্স প্লান্টকে পরিবেশবান্ধব হতেই হবে। যেখানে দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই, সেখানে সেই ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে।
তথ্যপ্রবাহ এ-ও বলছে, গত বছর নভেম্বরে একটি মামলার প্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত কলকাতা পুরসভাকে স্পষ্ট জানিয়েছিল, পরিবেশবান্ধব হট মিক্স প্লান্ট তৈরির জন্য ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করতে হবে। কারণ, রাতারাতি একটা চালু ব্যবস্থা থেকে অন্য একটি ব্যবস্থায় যাওয়া সম্ভব নয়। পরিবেশ আদালত স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সময় দিলেও এত দিন ‘ঘুম ভাঙেনি’ পুরসভার বলে জানাচ্ছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ।
এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘অনেক দিন আগে থেকেই তো হট মিক্স প্লান্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তখন থেকেই সতর্ক হতে হত। তা হলে আজ প্রয়োজনের সময়েও হট মিক্স প্লান্ট বন্ধ রাখতে হত না!’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘পুরসভার হট মিক্স প্লান্ট ‘অরেঞ্জ ক্যাটেগরি’ভুক্ত। ফলে তা চালানোর জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র দরকার। কিন্তু সেই ‘কনসেন্ট টু অপারেট’ ছাড়পত্র পুরসভা নেয়ইনি। অর্থাৎ, পুরসভার যে দু’টি হট মিক্স প্লান্ট এত দিন চলে এসেছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy