Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ময়লা ফেলতেও এ বার রবিঠাকুরের গান

গান বাজিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে আবর্জনা সংগ্রহ করার এই কাজে মডেল হিসেবে ধরা হচ্ছে হাওড়ার ২২ নম্বর ওয়ার্ডকে।

পরিবেশবান্ধব ই-রিকশায় সংগ্রহ করা হবে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

পরিবেশবান্ধব ই-রিকশায় সংগ্রহ করা হবে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ১০:০০
Share: Save:

ট্র্যাফিক সিগন্যালের মতো এ বার রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজবে জঞ্জালের গাড়িতেও!

সকাল সকাল হুইসলের বদলে জঞ্জালে ঠাসা গাড়ি যদি ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা’ বা ‘খোল দ্বার খোল’ বাজিয়ে ডাকাডাকি শুরু করে, তা হলে পুরবাসীর কেমন লাগবে, তা বলা মুশকিল। হাওড়া পুরসভা অবশ্য অতশত না ভেবেই আপাতত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে তেড়েফুঁড়ে লেগেছে।

গান বাজিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে আবর্জনা সংগ্রহ করার এই কাজে মডেল হিসেবে ধরা হচ্ছে হাওড়ার ২২ নম্বর ওয়ার্ডকে। আবর্জনার গাড়িতে প্রভাতী প্রার্থনা বা রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানোর এই পরিকল্পনা করেছিলেন ওই ওয়ার্ডেরই প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর ও পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়। এখন হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ এই প্রকল্প চালু করতে চলেছেন।

কিন্তু আবর্জনা ফেলার গাড়িতে হঠাৎ গান কেন?

পুর কমিশনার বলেন, ‘‘আমাদের মনে হয়েছে, গান বাজালে পুরসভার গাড়িতে আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে মানুষের উৎসাহ বাড়বে। তাই এমন পরিকল্পনা। ওই গাড়িতে প্রভাতী সঙ্গীত যেমন বাজবে, তেমনই চলবে ‘নির্মল বাংলা’র সচেতনতামূলক প্রচারও।’’ জঞ্জাল সংগ্রহ করতে ওই এলাকায় ঘুরবে পরিবেশবান্ধব ই-রিকশা। সেই গাড়িতেই বাজবে গান।

আরও পড়ুন: আমার সঙ্গেও কি এমন হতে পারে, প্রশ্ন দৃষ্টিহীন ছাত্রের

পুর কমিশনার জানান, ওই পরিবেশবান্ধব গাড়ি কিনতে ইতিমধ্যেই পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা গুরুগ্রামে গিয়েছেন। সেখানে আন্তর্জাতিক টেন্ডার পাওয়া একটি বেসরকারি সংস্থাকে মোট তিনশো গাড়ির বরাত দেওয়া হয়েছে। এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই ওই ধরনের ২০টি গাড়ি চলে আসবে। গাড়ি এলেই তার মধ্যে সাউন্ড সিস্টেম বসানো হবে। তার পরে আবর্জনা তুলতে বেরোলেই গাড়ি থেকে বাজবে গান।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ২২ নম্বর ওয়ার্ডকে মডেল ধরে ওই প্রকল্প চালু হলেও পরে হাওড়া পুরসভার সমস্ত ওয়ার্ডেই তা শুরু হবে। পুর কমিশনার জানান, পুরসভার মূল লক্ষ্য, রাস্তায় আবর্জনা ফেলা পুরোপুরি বন্ধ করা। প্রতিটি বাড়িতে এ জন্য দু’টি করে বিন দেওয়া হচ্ছে। একটি বিনে ফেলতে হবে পচনশীল বর্জ্য। অন্যটিতে জমা হবে অপচনশীল বর্জ্য। হাওড়ার ৬৬টি ওয়ার্ডে এই প্রকল্প চালু করার জন্য ইতিমধ্যেই পাঁচ লক্ষ বিন কেনা হয়ে গিয়েছে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে সাফল্য পেলে বাকি সব ক’টি ওয়ার্ডেই ধাপে ধাপে শুরু করা হবে ওই প্রকল্প। পুর কমিশনার বলেন, ‘‘ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাসে একটি জমি পাওয়া গিয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাহায্যে আবর্জনা থেকে সার তৈরির একটি যন্ত্র বসানো হবে। সেখানেই ওই ওয়ার্ডের সমস্ত আবর্জনা ফেলা হবে।

আরও পড়ুন: নর্থব্রুক চটকল বন্ধ, বিপাকে ৫০০০ শ্রমিক

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ছ’হাজার বাড়ি আছে। প্রতিদিন গড়ে আট টন আবর্জনা ওই এলাকার রাস্তায় ফেলা হত। ঠিক হয়েছে, আগামী ২০ তারিখ থেকে পুর কমিশনার ওই ওয়ার্ডের প্রতিটি গলিতে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। বাসিন্দারা যাতে নির্দিষ্ট সময়ে ও জায়গায় আবর্জনা ফেলেন, তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এলাকায় লিফলেট বিলি করা হবে।

এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা, প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘গত তিন মাস ধরে এই প্রকল্পটি চালু করার চেষ্টায় ছিলাম। এটি চালু হয়ে গেলে ওই ওয়ার্ড থেকে বছরে যে দু’হাজার টন আবর্জনা তৈরি হয়, তা আর বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ফেলতে হবে না। ওই ভাগাড়ে আর জায়গা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Garbage Van Howrah Municipality TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE