Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Cheating

জালিয়াতি করেও ফোন করা থামছে না প্রতারকের

ওই ব্যক্তি স্টেট ব্যাঙ্ক এবং আর একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে প্রায় ৯০ হাজার টাকা হাতিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
শিবাজী দে সরকার শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২০ ০১:৫২
Share: Save:

প্রতারণার শিকার হয়ে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক বৃদ্ধ। কিন্তু তার পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁকে নিয়মিত ফোন করছেন। একই ঘটনা ঘটেছে শ্যামবাজারের এক যুবকের ক্ষেত্রেও। তিনিও প্রতারকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছিলেন। তাঁকেও ফোন করে চলেছেন প্রতারক।

সিঁথির বাসিন্দা ৮২ বছরের ওই বৃদ্ধ রথীন পাল জানিয়েছেন, গত ৩১ মার্চ উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে বলেন, তিনি স্টেট ব্যাঙ্কের অফিসার। রথীনবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য পেলে তাঁর আয়করের বিষয়টি দেখে নেবেন। সরল বিশ্বাসে ওই ব্যক্তিকে তাঁর ব্যাঙ্কের সব তথ্য এমনকি পিনও জানিয়ে দেন বৃদ্ধ। তার পরপরই তিনি জানতে পারেন, ওই ব্যক্তি স্টেট ব্যাঙ্ক এবং আর একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে প্রায় ৯০ হাজার টাকা হাতিয়েছে।

এপ্রিলের গোড়ায় অভিযোগ জানান রথীনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ মাঝে এক বার ফোন করেছিল। কিন্তু ওই উজ্জ্বলবাবু এখনও মাঝেমধ্যে ফোন করছেন। প্রথম দিকে আমি জানতে চেয়েছি কবে টাকা ফেরত পাব। উনি বলেছেন, তাড়াতাড়িই ফেরত দেবেন। ওঁকে এখন ফোন করলে বলছে, মোবাইল বন্ধ।’’ রথীনবাবুর আরও অভিযোগ, প্রতারণার পরেও ওই ব্যক্তি ফোন করে জানতে চেয়েছেন, তাঁর নতুন বিনিয়োগের ইচ্ছে আছে কি না।

একই কাণ্ড ঘটেছে শ্যামবাজারের শ্রেয়দীপ দাসের (২০) ক্ষেত্রে। তিনি সম্প্রতি পড়াশোনার পাশাপাশি স্যানিটাইজ়ারের ব্যবসা শুরু করেছেন। শ্রেয়দীপ জানান, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিলে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন সন্দীপ নামে এক ব্যক্তি। তিনি সেনাবাহিনীর কর্নেল মেজর হিসেবে পরিচয় দেন। যদিও দু’টি আলাদা পদ। শ্রেয়দীপ অত বোঝেননি। সেনা ২০০ বোতল স্যানিটাইজ়ার কিনবে, এই টোপ দিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্টের সব তথ্য নিয়ে নেন সন্দীপ। মোবাইলে টাকা পাঠাবেন বলে তিনি প্রথমে পাঁচ টাকা পাঠিয়ে পরীক্ষা করেন। তখন শ্রেয়দীপের অ্যাকাউন্টে হাজার চারেক টাকা ছিল। সন্দীপ তাঁকে জানান, সেনাবাহিনীর নিয়ম, যত টাকা পাঠানো হবে ব্যাঙ্কে তত টাকাই থাকতে হবে। সন্দেহ হওয়ায় শ্রেয়দীপ সন্দীপকে জানান, তিনি তাঁর সঙ্গে কেনাবেচা করবেন না। ওই যুবকের অভিযোগ, সন্দীপ তাঁকে মামলা করার হুমকি দেন। শ্রেয়দীপ তখন নিজের অ্যাকাউন্টে ২৬ হাজার টাকা জমা করেন। টাকা দেওয়ার বদলে উল্টে ওই ৩০ হাজার টাকা তুলে নেন সন্দীপ।

সম্প্রতি থানায় অভিযোগ জানান শ্রেয়দীপ। সে দিনই তাঁর কাছে ফের সন্দীপের ফোন আসে। তিনি জানান, টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন। এর জন্য শ্রেয়দীপের পেটিএমের তথ্য চান সন্দীপ। তবে তা দেননি শ্রেয়দীপ।

লালবাজারের গোয়েন্দারা জানান, মূলত জামতাড়া গ্যাং এই ধরনের কাজ করে থাকে। তবে এক জনকে প্রতারিত করার পরে সাধারণত সেই নম্বরে জালিয়াতেরা আর ফোন করে না। কলকাতা পুলিশের এক অফিসার জানান, সম্প্রতি জামতাড়া গ্যাংয়ের কয়েক জনকে ধরা হয়েছে। তাদের অনেকেই বাংলায় কথা বলতে পারে। ওই বৃদ্ধের ক্ষেত্রেও এমন কিছু ঘটে থাকতে পারে বলে অনুমান।

লালবাজার জানিয়েছে, প্রতারকেরা ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে মোবাইলের সংযোগ নিচ্ছে। কিছু দিন ব্যবহারের পরেই তা বন্ধ করে দিচ্ছে। যার জন্য ফোন নম্বরের সূত্র ধরে তদন্ত করতে দেরি হচ্ছে। সেই সুযোগে ফের জাল বিস্তার করছে প্রতারকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cheating Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE