Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রয়োজনই মূল বিবেচ্য

১২ জুন কৌশিকবাবু আদালতে জানিয়েছিলেন, সামনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এখন অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করে প্রাচীন সৌধের ১০০ মিটারের মধ্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি জানান, দিল্লিতে মেট্রোর সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছে নিয়ন্ত্রিত এলাকায় (১০০ থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে)।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০৩:০২
Share: Save:

প্রাচীন সৌধ সংরক্ষণ আইন মানার ক্ষেত্রে দিল্লি ছাড় পেলে কলকাতা কেন পাবে না, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নিয়ে মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার ওই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। এ দিন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের প্রয়োজনটাই বড়, আইন নয়।’’ দিল্লিতে প্রাচীন সৌধের ১০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যেই মেট্রোর সুড়ঙ্গ রয়েছে, এমন একটি নথি আদালতে পেশ হতেই ওই মন্তব্য করেন তিনি। প্রাচীন সৌধ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, ওই ধরনের সৌধের ১০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ নিষিদ্ধ। ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের রুটে তিনটি প্রাচীন সৌধ রয়েছে। সেগুলির তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার অনুমতি পায়নি ঠিকাদার সংস্থা। কাজ আটকে থাকায় তারা হাইকোর্টে মামলা করেছে।

১২ জুন কৌশিকবাবু আদালতে জানিয়েছিলেন, সামনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এখন অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করে প্রাচীন সৌধের ১০০ মিটারের মধ্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি জানান, দিল্লিতে মেট্রোর সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছে নিয়ন্ত্রিত এলাকায় (১০০ থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে)। ওই দিন কৌশিকবাবু এ-ও জানান, কেন্দ্র সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জনস্বার্থে প্রাচীন সৌধ সংরক্ষণ আইনে সংশোধনী আনা হবে। সেটি পাশ হলে ১০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ করা যাবে।

এ দিনের শুনানিতে ফের কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, অধ্যাদেশ জারি সম্ভব নয়। তা শুনে বিচারপতি দত্ত বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির কাছে অধ্যাদেশ জারির অনুমতি চেয়ে দেখাই যাক না। রাষ্ট্রপতি অনুমতি না দিতেই পারেন। চেষ্টা করতে অসুবিধা কোথায়? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন।’’ এ দিন বিচারপতি বলেন, ‘‘কেন্দ্র কি গোটা প্রকল্পই বন্ধ করে দিতে চাইছে?’’

এ দিন ‘কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড’ (কেএমআরসিএল)-এর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে একটি নথি দিয়ে জানান, দিল্লি মেট্রো বেশ কিছু জায়গায় সুড়ঙ্গ খুঁড়েছে ১০০ মিটারের মধ্যেই। খুনি দরোয়াজা, কাশ্মীরি গেট-সহ বিভিন্ন প্রাচীন সৌধের কোথাও ৭০ মিটার, কোথাও ৩০ মিটারের মধ্যেই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে। তা হলে কলকাতার ক্ষেত্রে এত কড়াকড়ি কেন? প্রশ্ন বিকাশবাবুর।

বিকাশবাবুর দাবি, ২০০৮ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কোথায় কোথায় সুড়ঙ্গ হবে, তা কেন্দ্রের কর্তারা জানতেন। এখন নতুন করে এএসআই বা ‘ন্যাশনাল মনুমেন্ট অথরিটি’র ছাড়পত্রের প্রশ্ন উঠছে কেন? একই সঙ্গে তাঁর দাবি, গত জুনে এএসআই-এর আঞ্চলিক অধিকর্তাও কেন্দ্রকে জানিয়ে দেন, প্রাচীন সৌধগুলির পাশ দিয়ে সুড়ঙ্গ গেলে যে বিশেষ ক্ষতি হবে না, খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা তা জানিয়েছেন।

এ দিন বিচারপতি দত্ত নির্দেশ দেন, আগামী সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানিতে কেন্দ্রের ক্যাবিনেট সচিব হলফনামা পেশ করে জানাবেন, দিল্লিতে প্রাচীন সৌধের কত মিটারের মধ্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে। ক্যাবিনেট সচিব প্রয়োজনে কোনও অফিসারকে নিয়োগ করতে পারেন। ক্যাবিনেট সচিব যদি জানান, অল্প সময়ের মধ্যে হলফনামা দেওয়া সম্ভব নয়, তা হলে সচিবের বক্তব্য আদালতের নথিতে লিপিবদ্ধ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE