Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
নিয়মকে বুড়ো আঙুল

দোকানের রান্নাতেও বাড়ির সিলিন্ডার

বস্তা দিয়ে ঢেকে কিছু আড়াল করে রাখা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অবশ্য রাখঢাক নেই। কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের বিভিন্ন দোকানে বাড়ির রান্নার (ডোমেস্টিক) গ্যাস সিলিন্ডার জ্বালিয়ে চলছে রান্নাবাড়া।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

বস্তা দিয়ে ঢেকে কিছু আড়াল করে রাখা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অবশ্য রাখঢাক নেই। কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের বিভিন্ন দোকানে বাড়ির রান্নার (ডোমেস্টিক) গ্যাস সিলিন্ডার জ্বালিয়ে চলছে রান্নাবাড়া। ছোট-বড় দোকান থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের গুমটি, মায় ফুটপাথের খাবারের দোকানেও দেদার ব্যবহার হচ্ছে বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার। সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে, সরকারি বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে।

এ রাজ্যে ‘ইন্ডিয়ান অয়েল’, ‘ভারত পেট্রোলিয়াম’ এবং ‘হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম’— এই তিন সংস্থার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহৃত হয়। ওই তিন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে প্রতি মাসে প্রায় ৫৫ হাজার বাড়ির গ্যাসের কালোবাজারি চলছে। যা ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন দোকানপাট ছাড়াও হোটেল, কেটারিং ব্যবসা এবং মেস-এ। গ্যাস সংস্থাগুলির সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ জন্য প্রতি মাসে রাজ্য সরকার প্রায় আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

কী ভাবে সামনে এল এই হিসেব?

বস্তুত, ওই তিন সংস্থার দু’রকমের গ্যাস সিলিন্ডার বাজারে বিক্রি হয়। একটি লাগে গৃহস্থ বাড়িতে রান্নার কাজে (ডোমেস্টিক)। সেই সিলিন্ডারে ১৪ কেজি ২০০ গ্রাম গ্যাস মজুত থাকে। এই সিলিন্ডার বাড়ির কাজে ছাড়া অন্যত্র ব্যবহারের নিয়ম নেই। অন্য দিকে রেস্তোরাঁ, হোটেল বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডার (কমার্শিয়াল) ব্যবহার করাই বিধি। তাতে ১৯ কেজি গ্যাস থাকে।

এ রাজ্যে প্রতি মাসে তিনটি সংস্থা মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষের মতো বাণিজ্যিক সিলিন্ডার বিক্রি হয়। চাঁদনি চক এলাকায় ঘুরে জানা গেল, দোকান বা রেস্তোরাঁর বৈধ অনুমতিপত্র (ট্রেড লাইসেন্স-সহ অন্য কাগজপত্র) না থাকলে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয় না। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর্স অ্যাসোসিয়েশন’ এর সাধারন সম্পাদক দেবব্রত পাল বলেন, ‘‘বাণিজ্যিক গ্যাসের সংযোগ না পেয়ে কলকাতা তো বটেই, রাজ্যের বিভিন্ন দোকানে বেআইনি ভাবে বাড়ির গ্যাসের ব্যবহার চলছে। এমন কালোবাজারি বন্ধ হলে মাসে প্রায় ৪০ হাজার বাণিজ্যিক সিলিন্ডার বেশি বিক্রি হতো।’’

সময় মতো বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার না মেলার সমস্যা নতুন নয়। প্রতি বছরই পুজোর মুখে তা চরম আকার নেয়। বাড়ির রান্নার গ্যাসের কালোবাজারি রুখতে নানা বিধি-নিষেধ চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিবার পিছু একটি গ্যাসের সংযোগই দেওয়া হচ্ছে। গ্রাহকদের জন্য বাধ্যতামূলক হয়েছে আধার কার্ড। বলা হয়েছে, পরিবার পিছু বছরে সর্বাধিক ১২টি সিলিন্ডার মিলবে। প্রথমে বাজারদরে গ্যাস কেনার পরে সেই হিসেবে ভর্তুকির একটি অংশ গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছে। তা-ও রোখা যাচ্ছে না রান্নার গ্যাসের কালোবাজারি।

এত কড়াকড়ির পরেও কী ভাবে দোকানে-দোকানে চলছে এই কালোবাজারি? গ্যাস ডিলারদের হিসেব বলছে, একেকটি পরিবারে বছরে ৬-৯টি সিলিন্ডার প্রয়োজন হয়। অভিযোগ, বাড়তি সিলিন্ডার কিছু এজেন্টদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন গ্রাহকদের একাংশ। ভর্তুকির টাকা সেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। আরও অভিযোগ, কয়েক জন দোকানদার এজেন্টদের থেকে সরাসরি সিলিন্ডার কিনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার নিজের বাড়ির বাড়তি সিলিন্ডার নিয়ে আসছেন দোকানে।

এই ছবিটাই দেখা গেল দমদম রোডে। নাগেরবাজার থেকে দমদম স্টেশন পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তার দু’ধারের দোকানে ব্যবহার হচ্ছে বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার। কেউ বস্তা দিয়ে সিলিন্ডারটি ঢেকে, কেউ প্রকাশ্যেই তা রেখে রান্না করছেন ভাত, রুটি থেকে শুরু করে চাউমিন, এগ রোল, চপ, সিঙারা। এক দোকানি জানালেন, কখনও এলাকার দোকান থেকে তাঁরা সিলিন্ডার কিনে আনেন। আবার এজেন্টদের কাছে খোঁজ করলেও সাইকেলে করে লোক এসে সিলিন্ডার দিয়ে যায়। ওই এলাকাতেই দেখা গেল এমন এক এজেন্টের দোকান। সেখানে তিন সংস্থারই বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার দরাদরি করে বিক্রি চলছে।

‘ভারত গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সভাপতি সুকমল সেনের অভিযোগ, ‘‘কলকাতায় লিফলেট বিলি করে পুলিশের সাহায্য নিয়ে অনেক দোকানে বাড়ির গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করেছি। কিন্তু জেলায়, বিশেষত দুই ২৪ পরগনা ও ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় পুলিশকে জানিয়েও সহযোগিতা মিলছে না।’’ ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে বা নিজেরা দোকানগুলিতে হানা দিয়ে বাড়ির সিলিন্ডার বাজেয়াপ্ত করি।’’ তিনি জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal gas cylinder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE