ছবি: শৌভিক দে
চার ফুট বাই তিন ফুটের ভ্রাম্যমাণ দোকান। ফুটপাথের উপরে সেই দোকান রেখে খাবার বিকিকিনি। কয়েক বছরেই এমন একাধিক দোকান গজিয়ে গিয়েছে রাতারাতি।
আড়াই ফুট চওড়া ফুটপাথে ৫০০ মিটারের মধ্যেই গায়ে গায়ে লাগানো দোকানগুলোয় চোখে পড়ার মতো ভিড়। বিকিকিনি শেষ হলে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই ফিরে যান যে যার বাড়ি। দোকান থেকে যায় ফুটপাতেই। কোনও কোনও বিক্রেতা অবশ্য রাত কাটান দোকানেই। সল্টলেকের সুশ্রুত আইল্যন্ডের কাছে হোমিওপ্যাথি হাসপাতালের সামনের ফুটপাথ পুরোপুরি তাদেরই দখলে।
তবে এখানকার বিশেষত্ব হল, গোটা দিনের দখলদারির পরে রাতের অধিকাংশ সময়েও বিকিকিনি চলে। হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এসে সারা রাত লাইন দেন। ফলে খাবার ব্যবসাও চলে রাতভর। সব মিলিয়ে পথচারীদের রাস্তায় নামা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। কিন্তু সেই রাস্তার ধারেও ফুটপাথ উপচে আসা ক্রেতাদের ভিড়। গাড়ির পার্কিং তো রয়েছেই!
খণ্ডচিত্র নয়। গোটা সল্টলেকের বহু জায়গাতেই ছবিটা কমবেশি এক। সল্টলেকের অফিসপাড়ায় বিকাশ ভবন থেকে করুণাময়ীর মোড়ের চার দিক, সিটি সেন্টারের কাছে এক দিকের ফুটপাথ ছাড়াও বিভিন্ন ব্লক ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দোকানের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। কিন্তু এত দোকান কোথা থেকে এল?
অভিযোগ, বাম আমল থেকেই ফুটপাথে দোকান বসতে শুরু করে। তবে আগে সল্টলেকে ইতিউতি একটা চায়ের দোকান, হাসপাতাল বা অফিসপাড়ায় অস্থায়ী খাবারের দোকান ছিল। তবে কিন্তু পরবর্তীতে সল্টলেকের সাবেক চরিত্রটাই পাল্টে পুরোপুরি কসমোপলিটন হয়ে গিয়েছে। কর্মসূত্রে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষের যাতায়াতের সুবাদে খাবারের চাহিদা বেড়েছে। তার জোগান দিতে কেষ্টপুর থেকে মহিষবাথান, দত্তাবাদ থেকে কুলিপাড়া, বেলেঘাটা, এমনকী দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে আসা অনেক মানুষও জড়িয়ে গিয়েছেন এই সব ব্যবসার সঙ্গে। দিনের পর দিন তাই দোকানের সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে পরিকল্পিত সল্টলেকের বহু এলাকাতেই এখন ফুটপাথ পুরোপুরি দোকান-বাজারের দখলে।
কিন্তু দোকান বসছে কী ভাবে?
এলাকাবাসী বলছেন, রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশ্রয় না থাকলে এই অস্থায়ী ব্যবসার সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। আবার এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যেমন রয়েছে, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক সম্পর্কও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই অভিযোগ করেছে রাজনৈতিক দলগুলি।
সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সকলেই। তবে আপাত ভাবে কোনও সমাধান নেই। কলকাতায় তবু পথচারীদের জন্য ফুটপাথের কিছু অংশ মুক্ত রাখার নির্দেশিকা রয়েছে। সল্টলেকে তারও বালাই নেই। তবে এ নিয়ে শাসক দলের অবস্থান স্পষ্ট, অন্তত স্থানীয় স্তরে। এক দল চাইছেন ফুটপাথ মুক্ত করতে, আর অন্য অংশের দাবি, পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ নয়। সম্প্রতি পরিবহণ দফতরের একটি অনুষ্ঠানে ফুটপাথ মুক্ত করতে রীতিমতো অনুরোধ-আবেদন করেছেন খোদ বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। তাই নিয়ে প্রকাশ্যে মেয়রের বিরোধিতাও করেছে দলেরই একটি অংশ।
রাজনৈতিক দলগুলির একটি অংশের কথায়, ফুটপাথে দোকান চালিয়ে কয়েকশো পরিবারের রোজগার। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তাঁদের উচ্ছেদ করা ঠিক নয়। ফুটপাথ মুক্ত করার প্রশ্নে বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার একটি নীতি নিয়ে চলছে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে দোকান বসতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে সমস্যা মেটাতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকায় এমন সমস্যা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুর-প্রশাসনকেই দায়িত্ব নিতে হবে। বিধাননগরের ক্ষেত্রেও আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মেটানো হবে।’’
কী বলছে বিধাননগর পুরসভা?
মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এ ব্যাপারে কি করণীয়, সে সম্পর্কে রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চাইব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy