Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দাবিতে প্যাডেলে পা

মঞ্চে উঠে শীর্ষ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানানোর ইচ্ছায় শুক্রবার রাত ১২টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন এলাকায় সাইকেল নিয়ে ঘুরে কাপড় ফেরি করা সুশীল। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে রাত তিনটেয় পৌঁছন ধর্মতলা। মঞ্চে ওঠার সুযোগ অবশ্য তাঁর হয়নি।

দাবি জানাতে সাইকেলে প্রচার। শনিবার, ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

দাবি জানাতে সাইকেলে প্রচার। শনিবার, ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০০:৪৮
Share: Save:

‘‘হাসপাতাল না হলে আমিও থামব না।’’

তখন সবে শেষ হয়েছে একুশে জুলাইয়ের সভা। সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পথে পরিচিত যুবককে দেখে এমনটাই বলে উঠলেন বছর পঁয়তাল্লিশের সুশীলকুমার ঘোষ।
তাঁর সাইকেলের সামনে লাগানো তৃণমূলের পতাকা। আর পিছনে আটকানো বোর্ডে লেখা— ‘হাজারিলাল মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র অর্থাৎ হসপিটাল অনুমোদন দিতে হবে, দিতে হবে।’

বিষয়টা কী? বারাসত ২ নম্বর ব্লকের চণ্ডীগড় রোহন্ডা গ্রামের সুশীল গলায় আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘‘৪০ বছর আগে আমার জেঠু হাজারিলাল ঘোষ তৎকালীন সরকারকে গ্রামে চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরির জন্য তিন কাঠা জমি দিয়েছিলেন। সেখানে একটা ইটও গাঁথা হয়নি।’’ মঞ্চে উঠে শীর্ষ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানানোর ইচ্ছায় শুক্রবার রাত ১২টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন এলাকায় সাইকেল নিয়ে ঘুরে কাপড় ফেরি করা সুশীল। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে রাত তিনটেয় পৌঁছন ধর্মতলা। মঞ্চে ওঠার সুযোগ অবশ্য তাঁর হয়নি।

কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নন তিনি। দাবি করলেন ‘‘হাসপাতাল না হওয়া পর্যন্ত প্রতীকী অন্দোলন হিসেবে সাইকেল চালিয়েই সভায় আসব।’’ তাঁর দাবি, গ্রামে প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকায় মধ্যমগ্রাম, বারাসতে যেতে হয়। মধ্যমগ্রামের বিধায়ক রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘হাসপাতাল গড়ার জন্য সুশীলবাবুর দাবি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

বারাসতের সুশীলের মতো সাইকেল চালিয়ে নিজের দাবি জানাতে সভায় হাজির হন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর ফলেয়া গ্রামের সন্টু মণ্ডল। তিনিও পৌঁছতে পারেননি মঞ্চের কাছে। অগত্যা কখনও ডোরিনা ক্রসিং, কখনও ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডের সামনেই সাইকেলের প্যাডেল ঘুরিয়ে চষে বেড়ালেন তিনি। সাইকেলের সামনে আর কেরিয়ারে বাঁধা ফুলের তোড়া। এগুলো কে দিল? একগাল হেসে সন্টুর উত্তর ‘‘সকালে বাবুঘাটে গিয়েছিলাম। এতটা দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে এসেছি শুনে পুলিশ কাকুরা দিয়েছেন।’’

বাবা ফকির ও মা কল্পনা অন্যের জমিতে ঠিকা কাজ করেন। সন্টু বেকার। ১০ দিন আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দাবি জানাতে গোটা বর্ধমান চষে বেরিয়েছেন তিনি। তিন দিন আগে এসে উঠেছিলেন উত্তর হাওড়ার এক অস্থায়ী শিবিরে। বললেন, ‘‘গত বছরও এ ভাবেই এসেছিলাম। অনেকে বলেছিল আমার দাবি মতো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু হয়নি।’’ সন্টুর সাইকেলের সামনে বাঁধা ব্যানারে জ্বলজ্বল করছে তিনি কোন কোন নেতার এলাকায় থাকেন।

মঞ্চে তখন শুরু হয়েছে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত। আর ধর্মতলা কে সি দাস মোড়ে দাঁড়িয়ে সন্টু বলে চলেছেন, ‘আমার শুধু একটা ঘর আর টোটো চাই।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Care Center Cycle TMC Martyr's Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE