নর্থ সাবার্বান দিয়েই শুরু হচ্ছে বাজেট হাসপাতালের প্রকল্প। নিজস্ব চিত্র
এ এক অন্য ধরনের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি প্রকল্প। এখানে বেসরকারি অংশীদারটি কোনও সংস্থা নয়, একটি সংগঠন।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে চলতি বছরই চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখার সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ অংশীদারিত্বে কাশীপুরের নর্থ সাবার্বান হাসপাতাল রাজ্যের প্রথম ‘সরকারি বাজেট হাসপাতাল’ হিসেবে কাজ শুরু করবে। এই হাসপাতালে সরকারি হাসপাতালের বাইরে থেকে ডাক্তার জোগাবে আইএমএ। সেই চিকিৎসকেরাই ইমার্জেন্সি সামলাবেন, অস্ত্রোপচার করবেন। ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের। যদিও গোড়াতেই তাঁদের এই ভূমিকা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
‘বাজেট হাসপাতাল’ গড়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল গত বছর। বলা হয়েছিল, এই সরকারি হাসপাতালগুলি ‘ফ্রি’ হবে না আবার সেখানে অধিকাংশ কর্পোরেট হাসপাতালের মতো বিপুল ব্যয়ও করতে হবে না। মধ্যবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্তরা তাঁদের আয়ত্তের মধ্যে উন্নত পরিষেবা পাবেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, এই মডেলের প্রথম হাসপাতালটি হবে নর্থ সাবার্বান। এটি মা ও শিশু হাসপাতাল হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ, এখানে সাধারণ প্রসব এবং সিজার হবে।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রস্তাবটি ভাল। আপত্তির কিছু দেখা যাচ্ছে না। তবে নিয়মকানুন কী হবে এবং কী ভাবে হাসপাতালের কাজ চলবে, তা নিয়ে বিস্তারিত নিয়মকানুন তৈরি করতে হবে। চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য আবার মনে করেন, ‘‘এই হাসপাতাল চালু করা গেলে আরজিকরের স্ত্রীরোগ বিভাগের উপরে চাপ অনেকটাই কমবে।’’
প্রশ্ন উঠেছে, চিকিৎসকদের একটি সংগঠন কেন হাসপাতাল গড়ার কাজে নিজেদের জড়াবে? হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজ তাদের পক্ষে চালানো কতটাই বা সম্ভব হবে? এর সঙ্গে ব্যক্তিস্বার্থও জড়িয়ে পড়বে না তো? সংগঠনের রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তনু সেনের ব্যাখ্যা, ‘‘যে কোনও ভাল কাজে প্রথমে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। গোটা ভারতে এই সংগঠনের তিন লক্ষেরও বেশি চিকিৎসক সদস্য রয়েছেন। চিকিৎসকদের উপরে আমাদের আলাদা প্রভাব রয়েছে। ফলে আমরা অনুরোধ করলে চিকিৎসকেরা ফেলতে পারবেন না। হাসপাতালে চিকিৎসকের জোগান আমরা যতটা সহজে দিতে পারব, তা আর কেউ পারবে না। তাঁরা ন্যূনতম টাকায় পরিষেবা দেবেন, শিফ্ট ভাগ করে নিয়ে অস্ত্রোপচার করবেন, আউটডোর-ইন্ডোরে রোগীও দেখবেন।’’
আর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ডাক্তারের অভাব তো আছেই, তার উপরে পিপিপি মডেলে একাধিক বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ খুলতে গিয়ে সরকার নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। কাজ এগোচ্ছে না। বহু জায়গায় পিপিপি মডেলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারও ভাল চলছে না। ফলে সরকার মরিয়া হয়ে একটা বিকল্প মডেল চাইছে। যেহেতু এখন আইএমএ-র রাজ্য শাখার কর্তারা মূলত তৃণমূলের নামী নেতা, তাই তাঁদের সাহায্যে আইএমএ-কে ব্যবহার করে সেই বিকল্প মডেলই সরকার পেতে চাইছে।
আরও প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে আইএমএ-র রাজ্য শাখা বা তাদের দেওয়া চিকিৎসকেরা সরকারি হাসপাতালকে লাভজনক ব্যবসার জায়গায় পরিণত করে ফেলবেন না তো? আইএমএ-কর্তাদের জবাব, ‘‘বাজেট হাসপাতালের সব রেট সরকার নির্দিষ্ট করবে। পরিকাঠামোও সরকারের। আইএমএ সরকারকে ডাক্তার দিয়ে সাহায্য করবে মাত্র। নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্টের কোনও ইচ্ছে আইএমএ-র নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy