Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রসুন নয়, এ তো পোকা!

মিড-ডে মিলের এমনই রান্না খেয়ে শুক্রবার দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়ল একটি স্কুলের একাধিক পড়ুয়া। ঘটনাটি ঘটে বাগুইআটির স্কুলপাড়ার অন্নদাসুন্দরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

ভয়: স্কুল থেকে বেরিয়ে আসছে আতঙ্কিত পড়ুয়ারা। (ডান দিকে) সেই পোকা। শুক্রবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ভয়: স্কুল থেকে বেরিয়ে আসছে আতঙ্কিত পড়ুয়ারা। (ডান দিকে) সেই পোকা। শুক্রবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০২:৫২
Share: Save:

অনেকটা রসুনের মতো দেখতে, খাবারের মধ্যে সেটি নড়ছিল। রসুন ভেবে খেয়েও নেয় এক পড়ুয়া। তার পরেই শরীরে অস্বস্তি হতে থাকে। সে তখন পাশে বসা পড়ুয়াকে জিজ্ঞাসা করে, খাবারে রসুন দেওয়া হয়েছে কি না। সেই পড়ুয়া দেখে বলে, রসুন নয়, ওটা পোকা।

মিড-ডে মিলের এমনই রান্না খেয়ে শুক্রবার দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়ল একটি স্কুলের একাধিক পড়ুয়া। ঘটনাটি ঘটে বাগুইআটির স্কুলপাড়ার অন্নদাসুন্দরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতা ও গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা। তাঁদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ঠিক ছিল না। পড়ুয়ারা অসুস্থ হলেও অভিভাবকদের সময় মতো খবর দেওয়া হয়নি। এমনকী, খাবারে পোকা পাওয়ার খবর পেয়েও তা বাতিল না করে পড়ুয়াদের খাওয়ানো হয়েছে।

অভিভাবকদের আরও অভিযোগ, পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খেতে জোর করা হয়। না খেলে তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়। এতই কড়া কর্তৃপক্ষ। অথচ খাবারে পোকা থাকা সত্ত্বেও তা খাওয়ানো হল পড়ুয়াদের! কেন খাবার সরবরাহের আগে পরীক্ষা করা হয় না? এক শিক্ষিকা জানান, খাবার পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পরে যে গলা জ্বালা করছিল, তা প্রধান শিক্ষিকাকে জানানো হয়েছিল।

এ দিন খবর পেয়ে অভিভাবকেরা স্কুলে পৌঁছনোর আগেই অনেক পড়ুয়াকে স্থানীয় দেশবন্ধু মাতৃসদনে নিয়ে যাওয়া হয়। অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, খাবারে পোকা থাকার কথা বড়দিদিকে জানালে, তিনি খাবার ফেলে দিতে বলেন। পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, খাবার খাওয়ার পরে পেট ব্যথা আর বমি হয়েছে তার।

স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘কুড়ি জন পড়ুয়া অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়েছি। ১৩ জনকে স্থানীয় মাতৃসদনে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসার পরে বাকিরা এখন সুস্থ। মনে হচ্ছে, ফুলকপিতে পোকা ছিল। শীতকালীন আনাজ বন্ধ করতে বলেছি। খাবার সরবরাহে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’ যদিও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, আগে পড়ুয়াদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা জরুরি ছিল। সে কারণেই অভিভাবকদের খবর দিতে কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। চার-পাঁচ জনের পেট ব্যথা, বমি হয়েছে। বাকিদের অসুস্থতা আতঙ্ক থেকে। চিকিৎসকের মতামত তেমনই বলে জানান প্রণয়বাবু। তবে জোর করে মিড-ডে মিল খাওয়ানোর অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে পড়ুয়াদের যাতে জোর না করা হয়, সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।’’

এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে অন্নদাসুন্দরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা প্রীতি দত্ত এবং উত্তর ২৪ পরগনার ওসি (মিড ডে মিল) অরুণাভ পাল কিছু বলতে চাননি। জেলা স্কুল পরিদর্শক শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা অনভিপ্রেত ঘটনা। কর্তৃপক্ষের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Baguiati Midday Meal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE