পূর্ব কলকাতা জলাভূমির চরিত্রে কি বদল আনতে চলেছে রাজ্য? পরিবেশ দফতরের ঘোষিত এক কর্মশালা নিয়ে এমনই চিন্তা ভাবাচ্ছে পরিবেশবিদদের। তাঁদের আশঙ্কা, ‘রামসর’ তালিকাভুক্ত পূর্ব কলকাতার জলাভূমির চরিত্র বদল করা হলে আগামী দিনে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে মহানগর।
আজ, বৃহস্পতিবার এবং কাল, শুক্রবার পূর্ব কলকাতার জলাভূমি নিয়ে কর্মশালা করছে পরিবেশ দফতর। তার আগে বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’ জানাল, পূর্ব কলকাতার জলাভূমি সংরক্ষণ নিয়ে গণ কনভেশন করা হবে। জলাভূমি বাঁচাতে আদালতেরও দ্বারস্থ হবে তারা। জলাভূমি বাঁচাতে ১১ দফা দাবিও তুলেছে সবুজ মঞ্চ।
পরিবেশ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, কর্মশালায় জলাভূমির অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। তার চরিত্রে বদল করা প্রয়োজন কি না, তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সেখানে পর্যটন কেন্দ্র তৈরি এবং জমির ব্যবহারের পদ্ধতিও খতিয়ে দেখা হবে। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, জলাভূমি আইনে সংশোধন এবং পর্যটন, ও জমি ব্যবহারের নামে জলাভূমি নষ্ট করা হবে। ওই এলাকায় বেআইনি নির্মাণকেও বৈধতা দেওয়া হবে।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, শহরের নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এমনকী পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই পরিবেশগত গুরুত্বের ফলেই ১৯৭১ সালে ইরানের রামসর শহরে জলাভূমি সংরক্ষণ সম্মেলনে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমির তালিকায় ঠাঁই পেয়েছিল পূর্ব কলকাতার ওই এলাকা।
এমন জলাভূমির চরিত্র সংশোধনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সবুজ মঞ্চের আহ্বায়ক নব দত্ত বলেন, ‘‘পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে কী করা যাবে, কী করা যাবে না— তা নিয়ে তো কলকাতা হাইকোর্টের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে।’’
পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করা সংস্থা ‘সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট’ (সেফ)-এর চেয়ারম্যান দীপায়ন দে-র মতে, কলকাতায় বৃষ্টি হলে তার জল পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে গিয়ে পড়ে। এই জলাভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সামান্য ভারী বৃষ্টি হলেই কলকাতা জলমগ্ন হয়ে পড়বে।
পরিবেশকর্মীদের মতে, পূর্ব কলকাতার ওই এলাকায় দূষিত জল শোধনের প্রাকৃতিক বন্দোবস্ত রয়েছে। সেটাও ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মৎস্যজীবীরা।
পরিবেশকর্মী বনানী কক্কর বলছেন, ‘‘সরকার কী চাইছে, তা বুঝতে পারছি না।’’ বস্তুত, ২৫ বছর আগে বনানীদেবীর মামলাতেই এই জলাভূমি সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, জলাভূমির কোনও ক্ষতি করা হবে না। পরিবেশকে বজায় রেখেই যা করা প্রয়োজন, তা করা হবে। ওই এলাকায় জমি ও নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে। পর্যটন কেন্দ্র গড়া হলেও তা পরিবেশবান্ধব হবে। তাঁর মতে, এর আগে পরিবেশবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে জলাভূমি সংরক্ষণ করা হয়নি। এ বার সেই পথেই এগোতে চাইছে সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy