Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘মায়ের হাতে’ খাঁড়া দিয়ে ধন্য জ্যোতিবাবুর ছেলে

জ্যোতি বসুর ছেলে ‘কমিউনিস্ট’ নন, এ তথ্য অজানা নয়। তবে তিনি যে ঘোর কালীভক্ত, এ কথা বড় একটা প্রকাশ্যে আসেনি। এল এখন। যখন তিনি, চন্দন বসু নিজেই কালীঘাটে ‘মায়ের হাতে’ তুলে দিলেন সোনার খাঁড়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৫৪
Share: Save:

জ্যোতি বসুর ছেলে ‘কমিউনিস্ট’ নন, এ তথ্য অজানা নয়। তবে তিনি যে ঘোর কালীভক্ত, এ কথা বড় একটা প্রকাশ্যে আসেনি।

এল এখন। যখন তিনি, চন্দন বসু নিজেই কালীঘাটে ‘মায়ের হাতে’ তুলে দিলেন সোনার খাঁড়া। মন্দির সূত্রের খবর, দু’কেজিরও বেশি ওজনের খাঁড়াটি তৈরিতে ৫০ লক্ষ টাকার মতো খরচ করেছেন চন্দন।

প্রয়াত সিপিএম নেতা জ্যোতিবাবু নিজে ধর্মাচরণ না করলেও তাঁর পরিবারে পুজো-আচ্চার চর্চা ছিল এবং তাতে তিনি কখনও বাধা দেননি। বরং রসিকতা করে নিজেই বলেছেন, ‘আমি বরাহনগরে ভোটে দাঁড়ানোর সময়ে আমার বিরুদ্ধে প্রচার হয়েছিল যে, আমি জিতলে গৃহস্থ বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো বন্ধ করে দেব! অথচ আমার বাড়িতে আমার স্ত্রী-ই তো লক্ষ্মীপুজো করেন।’ শুধু তা-ই নয়, জ্যোতিবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর স্ত্রী কমল বসু প্রায় নিয়মিত বেলুড় মঠ-সহ নানা ধর্মস্থানে যেতেন। বাড়িতে পুজো-অর্চনাও হতো।

তাঁদের ছেলে চন্দন বাবার পথে হেঁটে ‘কমিউনিস্ট’ হননি। রাজনীতিতেও আগ্রহ দেখাননি। তাঁর উত্থান ব্যবসার বৃত্তে। সল্টলেকে জ্যোতিবাবুর বাড়ি ইন্দিরা ভবন থেকে কিছু দূরে এফ ডি ব্লকে তাঁর বাস। সেখানে নিজের মতো করে ধর্মাচরণ করে এসেছেন তিনি। এখনও করেন।

হঠাৎ কালীঘাটের প্রতিমার হাতে সোনার খাঁড়া দিলেন কেন?

মঙ্গলবার টেলিফোনে চন্দন বললেন, ‘‘ইচ্ছে ২০০৮ থেকেই ছিল। হাতে তখন প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। তাই হয়ে ওঠেনি। এখন আর্থিক সুবিধা হয়েছে। তাই সেই সাধ পূরণ করলাম।’’

আপনি কি কালীভক্ত?

‘‘অবশ্যই। মা কালীর উপরে আমার বিশ্বাস আছে। আমার বাড়িতে ৩৪/৩৫ বছর ধরে কালীপুজো হয়। আমার বাড়ি মানে চন্দন বসুর সল্টলেকের বাড়ি। জ্যোতি বসুর বাড়ি নয় কিন্তু।’’

জ্যোতিবাবু কি আসতেন আপনার বাড়ির পুজোয়?

‘‘কলকাতায় থাকলে আসতেন। প্রসাদ খেতে আসতেন। পুজোর মধ্যে থাকতেন না।’’

জ্যোতি বসুর মতো কমিউনিস্ট নেতার ছেলে আপনি। বাবার রাজনীতি কখনও আকর্ষণ করেনি?

‘‘আমি রাজনীতি নিয়ে কোনও দিনই বেশি মাথা ঘামাই না। কমিউনিজম ব্যাপারটাও অত বুঝি না। বিভিন্ন বিষয়ে খবর রাখি ঠিকই। তবে রাজনীতি করার ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত আমার কোনও আগ্রহ তৈরি হয়নি। আমি নিজের কাজ নিয়ে বেশ আছি।’’

তবু জ্যোতি বসুর ছেলে মা কালীর হাতের খাঁড়া দান করছেন, ব্যাপারটা লোকের চোখে একটু অন্য রকম নয় কি?

চন্দন বলেন, ‘‘দান করছি বলবেন না। বলব, এটুকু উৎসর্গ করার সুযোগ আমি পাচ্ছি। ভাবুন তো, ১২৫ কোটি লোকের এই ভারতবর্ষে আমার মতো এক চুনোপুঁটি এই সুযোগটুকু পেল! এটা কত বড় পাওয়া। আর কমিউনিস্টদের ধর্মাচরণ বলছেন? আমার বাবার কথা ছেড়ে দিন। এখন তো কত কমিউনিস্ট নেতাদের দেখি প্রকাশ্যে বিভিন্ন পুজোর সঙ্গে যুক্ত হন, কেউ কেউ পুজোও করেন।’’

কী ভাবে কালীঘাটের প্রতিমার হাতে এই খাঁড়া দেওয়ার ব্যবস্থা হল?

চন্দন জানান, তিনি মন্দির কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁরা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো ব্যবস্থা হয়। শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) অমাবস্যার রাতে সোনার খাঁড়া ওঠে ‘মায়ের হাতে’। তখন স্ত্রী রাখী এবং ছেলে শুভজ্যোতিকে নিয়ে মন্দিরে উপস্থিত স্বয়ং চন্দন বসু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE