পুনর্মিলনের রাস্তা তৈরি হচ্ছিল কিছু দিন ধরে। অবশেষে আবার তৃণমূলের মঞ্চে দেখা গেল কবীর সুমনকে। এ দিন ২১ জুলাই সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক আগের বক্তা ছিলেন সুমন। ছোট্ট বক্ত়ৃতায় মমতার প্রশস্তিই ছিল বেশি। তার সঙ্গে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য। মাউথ অর্গান বাজিয়ে গানও শোনান সুমন।
কবীর সুমনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত সখ্যের শুরু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়। সে সময় তৃণমূলের ব্যানারের তলায় না দাঁড়ালেও, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে যাদবপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হন সুমন। জেতেনও। কিন্তু ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসার কিছু দিনের মধ্যেই বিদ্রোহী হয়ে পড়েন তিনি।
একের পর এক ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে, তাঁর দলের বিরুদ্ধে, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তোপ দাগতে শুরু করেন সাংসদ সুমন। কিষেণজি হত্যা, শিলাদিত্যর গ্রেফতারি, মগরাহাটে হুকিং বন্ধ করতে গিয়ে পুলিশের গুলি, রাজ্যে নানা এলাকায় ধর্ষণের ঘটনা, সিন্ডিকেট রাজ, দুর্নীতির মতো অনেক বিষয়েই সুমনের মন্তব্যে, ব্যাঙ্গে, প্যারোডি গানে, সমালোচনায় বেশ অস্বস্তির মুখেই পড়তে হয়েছিল মমতাকে। তবে নিজের রাজনৈতিক হিসেব থেকে সুমনকে দল থেকে তাড়াননি মমতা। সুমনও ইস্তফা না দিয়ে তৃণমূলের লোকসভা সাংসদ হিসেবে মেয়াদ সম্পূর্ণ করেন।
তবে যে কোনও কারণে হোক একটা পর্যায়ের পর আচমকা মুখ বন্ধ করেন সুমন। এর মধ্যেই শিল্পী হিসেবে রাজ্য সরকারের দেওয়া সম্মানও গ্রহণ করেন। তিক্ততা কেটে আবার কাছাকাছি আসার ইঙ্গিত মেলে দু’তরফের থেকেই। সেই বৃত্তই যেন সম্পূর্ণ হল একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে।
আরও খবর- শহিদ দিবসে বড়সড় ভাঙন কংগ্রেসে, সিপিএম বিধায়কও গেলেন তৃণমূলে
সুমন এদিন বলেন, ‘‘মানুষের প্রাপ্য টাকা এখন মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে। আগে পৌঁছতো না।... এমন দিন আসবে যে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুজো করবে মানুষ। মন্দির বানাবে”।
তবে এ দিনের মঞ্চে মদন মিত্রের কথা তুলে উপস্থিত তৃণমূল নেতাদেরও চমকে দেন সুমন। অকপটেই বলেন, “বন্ধুবর মদন মিত্রকে” এ দিন মঞ্চে না পেয়ে তিনি যারপরনাই দুঃখিত এবং ব্যথিত।
এ সবের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রাজনৈতিক বন্দিমুক্তির আর্জি পেশ করেন কবীর সুমন। নিজের স্বভাবসিদ্ধ বাচনভঙ্গিতে বলেন, “আমি এ বার একটা খুব বড় ঝুঁকি নিতে যাচ্ছি। কিন্তু এ কথাটা আমাকে বলতেই হবে। এই কথা আমি শুধু পরমেশ্বরকে বলতে পারি আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে পারি। দলনেত্রী, জননেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, আপনি রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করুন”।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy