মল্লিকা মজুমদার।ফাইল চিত্র।
অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুনলেই এ শহরের মনে পড়ে দিলচাঁদের কথা। গত মে মাসে ঝাড়খণ্ডের ওই বাসিন্দার শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল বেঙ্গালুরুর মৃত এক যুবকের হৃদপিণ্ড। সেই হৃদপিণ্ড কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আনন্দপুরের এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গ্রিন করিডর করে, মাত্র ২০ মিনিটে। ফের এক বার শহরের রাস্তায় গ্রিন করিডর করতে হল এই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্যই। বোঝা গেল, দিলচাঁদের সেই ঘটনা মরণোত্তর অঙ্গদানে কতটা সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল এ রাজ্যের কোণায় কোণায়। শিলিগুড়ির মল্লিকা মজুমদার তারই একটা উদাহরণ। বছর পনেরোর মেয়েটির ব্রেন ডেথ হয়। মেয়ের মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছিল মজুমদার পরিবার। কিন্তু সেই শোককেও ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁদের একটি সিদ্ধান্ত। মেয়ের অঙ্গদান করবেন তাঁরা।
পরিবার সূত্রে খবর, শিলিগুড়ির বাসিন্দা মল্লিকার কানের সংক্রমণ হয়। তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিল সে। হঠাৎ একদিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে স্কুলে পড়ে যায়। মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল বলে সেখানকার চিকিৎসকরা জানান। কিছুদিন আগে এসএসকেএমের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয় মল্লিকাকে। চিকিৎসায় সাড়া দেয়নি সে। সেখানথেকে ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের কোষগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় কোমায় চলে যায় মল্লিকা।ব্রেন ডেথ ঘোষণার পর তার পরিবারকে চিকিৎসকেরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, অঙ্গ দানের গুরুত্ব। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার রাজি হয়ে যায় মল্লিকার পরিবার।
তত্পরতার সঙ্গে অঙ্গ গ্রহীতার খোঁজ শুরু করে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।তখনই দু’জনের খোঁজ মেলে। মল্লিকার দু’টি কিডনি পেল খড়দহের বাসিন্দা মৌমিতা চক্রবর্তী এবং সোদপুরের বাসিন্দা সঞ্জীব দাস। এসএসকেএম হাসপাতালে দুই গ্রহীতার অস্ত্রোপচার হয়েছে। অন্য দিকে, শুক্রবার গভীর রাতে অজয় রমাকান্ত নায়ক নামে এক রোগীকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় চেন্নাই থেকে।গ্রিন করিডর তৈরি করে মাত্র ১৩ মিনিটে এসএসকেএম থেকেওই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় মল্লিকার যকৃত্। শনিবার অস্ত্র্রোপচার হয়। এসএসকেএম সূত্রে খবর, কিডনি প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে। রোগীদের ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। অন্য দিকে, রমাকান্তের যকৃত্ প্রতিস্থাপনও সফল হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নোডাল অফিসার অদিতি কিশোর সরকার জানিয়েছেন, সফল অস্ত্রোপচার হলেও অঙ্গগ্রহীতাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
আরও পড়ুন: শহরে প্রথম হৃৎপিণ্ড বদল, শল্য চিকিত্সায় মাইলফলক ছুঁল পূর্ব ভারত
আরও পড়ুন: অন্যের শরীরে বেঁচে থাকবে দীপশিখা, বললেন বাবা
মল্লিকার কিডনি এবং যকৃতের গ্রহীতা পাওয়া গেলেও এখনও হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কোনও গ্রহীতা পাওয়া যায়নি। সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে তার ত্বক। এ যাবত্ রাজ্যে ব্রেন ডেথের পর অঙ্গদান করা হয়েছে যাঁদের, মল্লিকাই তাঁদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy