Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘বিপজ্জনক’ ঘোষণা পুরসভার, তারই নীচে বসছে ভরা বাজার

বিপদের মাত্রা বোঝাতে সম্প্রতি একটি ঘটনার কথা শোনান বাজারে আনাজ কিনতে আসা দেশবন্ধুনগরের বাসিন্দা প্রমিতা দে।

ঝুঁকি: বাজারের এমনই বেহাল দশা। নিজস্ব চিত্র

ঝুঁকি: বাজারের এমনই বেহাল দশা। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৩:২৪
Share: Save:

প্রায় বছর দশেক আগে তৎকালীন রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা ব্যক্তিগত মালিকানার বাজারে ‘বিপজ্জনক’ সাইনবোর্ড লাগিয়েছিল। এর পরেও বাজারের কোনও সংস্কার না-হওয়ায় এত দিনে সেই বিপদ বেড়েছে। বাজারের পিলার এবং ছাদের বিমে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে, ছাদের চাঙড় খসে পড়ে লোহা বেরিয়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, যে কোনও দিন ক্রেতা-বিক্রেতারা বড় দুর্ঘটনার শিকার হবেন। তা সত্ত্বেও কারও হেলদোল নেই। এমনই অবস্থা বাগুইআটির গোবিন্দচন্দ্র শেঠ বাজারের।

বিপদের মাত্রা বোঝাতে সম্প্রতি একটি ঘটনার কথা শোনান বাজারে আনাজ কিনতে আসা দেশবন্ধুনগরের বাসিন্দা প্রমিতা দে। তিনি জানান, বাজারের মুদির কারবারি বিপ্লব ঘোষ যে টুলে নিয়মিত বসেন, সম্প্রতি তার উপরেই সিমেন্টের একটি চাঙড় খসে পড়ে। ঘটনাচক্রে বিপ্লববাবু তখন অন্যত্র থাকায় বেঁচে যান! সম্প্রতি নির্মল ধর নামে এক ব্যবসায়ীর দোকানেও চাঙড় খসে পড়ে।

বাজারের স্বাস্থ্য নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে এক মত ব্যবসায়ীরাও। শুক্রবার বাজারে গিয়ে দেখা গেল, ক্ষয় ধরেছে পিলার, বিম, ছাদ— সর্বত্র। যেখানে বসে আনাজ বিক্রি হচ্ছে তার উপরেই সিমেন্ট খসে ঢালাইয়ের লোহা দেখা যাচ্ছে। বাজারে ব্যবসায়ী ৩২৮ জন। বিপজ্জনক বাড়ির নীচে দোকানের সংখ্যা অন্তত ৫০টি। ব্যবসায়ীদের তরফে বাসুদেব বালা বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত মালিকানাধীন এই বাজার। ব্যবসায়ীদের কথা না ভেবে মালিক বাজারের প্রোমোটিং করতে চাইছেন। আমরা রাজি না-হওয়ায় এ ভাবে পড়ে রয়েছে বাজার। বাজার থেকে কর না মেলায় পুরসভা কোনও দায় নিতে চাইছে না! এ দিকে মালিকপক্ষ পুর কর বাকি রাখায় আমাদের ট্রেড লাইসেন্সও হচ্ছে না।’’

যার প্রেক্ষিতে বাজারের মালিক লাল্টু শেঠ বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বহু বার সমস্যা মেটাতে চেষ্টা করেছি। নানা অজুহাতে কিছু ব্যবসায়ী বাধা দিচ্ছেন। দুর্ঘটনা ঘটলে তো দায় আমার উপরে বর্তাবে। কেন সংস্কার চাইব না বলতে পারেন?’’ বকেয়া কর প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রতি দোকানের মাসিক ভাড়া ২৫-৩০ টাকা। এই টাকায় কর দেব, না বাজার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ জোগাব!’’

মালিকের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় গোবিন্দ চন্দ্র শেঠ বাজার ব‍্যবসায়ী সমিতি। সমিতির সম্পাদক শঙ্করপ্রসাদ বণিক বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণ! বাজার নিয়মিত সাফাই করার টাকাই মালিক দেন না।’’ কমিটির সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভদ্র বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ বাজারের এত দিনের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে প্রোমোটিং করতে চাইছেন। তা আমরা মানব কেন?’’

দু’পক্ষের এই টানাপড়েনের মধ্যে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, ‘‘বাজার কমিটির সঙ্গে অনেক বার কথা বলার চেষ্টা করেছি। ওখানে আধুনিক বাজার তৈরি না হলে সমস্যা মিটবে না। পুরসভাকে মালিক তো করও দেন না। তবে সমস্যা মেটাতে আবার চেষ্টা করব। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সাহায্য করলে ওখানে দু’টি বাজার হতে পারে। ব্যবসায়ীদের সম্মতিও প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dilapidated construction KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE