Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জমি দখলে পুর অস্বস্তি

জমি পুরসভার। কিন্তু সেখানে ক্লাব, বিয়েবাড়ির পরে এ বার ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি খুলে ‘ব্যবসা’ চালানোর অভিযোগ উঠল কলকাতা পুরসভার শাসক দলের কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৩
Share: Save:

জমি পুরসভার। কিন্তু সেখানে ক্লাব, বিয়েবাড়ির পরে এ বার ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি খুলে ‘ব্যবসা’ চালানোর অভিযোগ উঠল কলকাতা পুরসভার শাসক দলের কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে। দলেরই এক কাউন্সিলর, সুস্মিতা দামের স্বামীর নাম এমন বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়ানোয় অস্বস্তিতে পড়েছে পুর প্রশাসনও। যদিও কাজটি যে বেআইনি, তা মানতেই নারাজ কাউন্সিলরের স্বামী ভাস্কর দাম। তাঁর সাফ কথা, ‘‘যা করেছি, ঠিক করেছি। দরকার হলে আবার করব।’’ এ দিকে, এই দখলের কথা জেনে ক্ষুব্ধ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘পুরসভার জায়গা দখল করে কেউ পার পাবে না। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব।’’

নাকতলায় ২৫৩সি, এনএসসি বসু রোডের ৪২ কাঠার ওই জমি নিয়ে তিন বছর আগে তোলপাড় হয়েছিল কলকাতার পুলিশ ও প্রশাসনের স্তরে। লীনা দত্ত নামে এক বাসিন্দা ওই জমি সরকারি ও বেসরকারি কব্জা থেকে উদ্ধার করতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আদালত রায় দিয়ে জানায়, জমিটি দখলমুক্ত করতে হবে। তখনও সেখানে ক্লাব চালাচ্ছিলেন ভাস্করবাবু। প্রশাসনের জমি উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেন তিনি। তা নিয়ে আদালতে পর্যুদস্ত হতে হয় প্রশাসনকে। পরে আদালতের নির্দেশে জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। সেখানে সরকার কী করতে চায়, তা-ও জানতে চায় আদালত। পুরসভা সূত্রে খবর, পুর প্রশাসন তখন হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, ওই জমিতে পাম্পিং স্টেশন করা হবে।

ওই রায়ের পরে নগরোন্নয়ন দফতর জমির দাম বাবদ ৮ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা লীনা দত্তকে দেয়। জমিটি কলকাতা পুরসভার হাতে তুলে দেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়। তার পর থেকেই পুরসভা সেখানে একটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন এবং টালিনালা সংস্কারের জন্য সুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশন করার প্রকল্প হাতে নেয়। এর মধ্যেই নতুন করে ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি গড়ে ওঠায় সেই কাজ করাতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানান এক পুর আধিকারিক। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বড় বড় ফ্লেক্স দিয়ে ঢাকা জমির বাউন্ডারি। এনএসসি বসু রোড থেকে দেখতে পাওয়ার উপায় নেই। অ্যাকাডেমির জন্য প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু ফাইবারের ছাউনি করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে জমির অনেকটাই। সামনে বড় করে লেখা ‘ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি’। পাশেই খোলা হয়েছে ব্যাডমিন্টনের সরঞ্জামের একটি দোকান। পুরসভার তথ্য অনুসারে, ওই দোকানের কোনও লাইসেন্সও পুরসভা থেকে নেওয়া হয়নি। বারবার বেআইনি কাজের অভিযোগে জড়িয়ে কী ভাবে পার পেয়ে যাচ্ছেন ভাস্করবাবু, স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। তা জানতেই শনিবার দুপুরে ফোন করা হয় কাউন্সিলর সুস্মিতা দামকে। ফোন ধরেন ভাস্করবাবুই। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রী ব্যস্ত। যা বলার, আমাকেই বলতে পারেন।’’ পুরসভার জমিতে ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি গড়া নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘‘সরকারি জমি তো কী হয়েছে? এটা ভাল কাজ, তাই করেছি।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ক’টা ক্লাব নিজের জমিতে হয় বলতে পারেন?’’ পাশের দোকানের ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে, ফুটপাতে দোকান করতে আবার লাইসেন্স লাগে নাকি? লাগলে পরে করে নেওয়া হবে।’’

কলকাতা পুরসভার ১০০ নম্বর ওয়ার্ড টালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি জমি দখল করে ভাস্করবাবু ব্যবসা বাড়িয়ে চলেছেন। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন। অরূপবাবু বলেন, ‘‘মেয়রের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।’’ নাকতলার জমিও দখলমুক্ত করতে চান মেয়রও। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে পুরসভার পাম্পিং স্টেশন হবে। জমি খালি করতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Land Business Councilor TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE