জমে রয়েছে জল-মাটি। নিজস্ব চিত্র
বৃষ্টির দেখা নেই ঠিকই, তবে বর্ষার মরসুম তো বটে। তাই ইতিমধ্যেই ওয়ার্ডগুলিতে তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে দাবি কলকাতা পুরসভার। যদিও গত দু’বছরের ডেঙ্গি যন্ত্রণা থেকেও বহু পুরপ্রতিনিধি শিক্ষা নেননি বলে অভিযোগ উঠছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, সাফাই অভিযান থেকে বাদ পড়ছে ভাঁড়পট্টি। সেখানে আবর্জনার পাশাপাশি জমছে জল। মাটি পোড়ানোর ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। অথচ, গত দু’বছর ডেঙ্গি মোকাবিলায় নেমে পুরসভার ১৩, ১৪ এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঁড়পট্টিগুলিকেই অন্যতম ‘ডেঙ্গি-জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল পুর প্রশাসন। কারণ, এই তিন ওয়ার্ড থেকে অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। পরিস্থিতির পর্যালোচনায় বসে ওয়ার্ডগুলির পাশের খালকে ডেঙ্গির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই মতো খাল সংস্কারের প্রস্তাবের পাশাপাশি ভাঁড়পট্টিগুলিতে বাড়তি নজর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
স্থানীয় শুঁড়িরবাগানের রাস্তা ধরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঁড়পট্টিতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি। ডালকল এবং ভাঁড়পট্টির মাঝের রাস্তায় পড়ে রয়েছে মরা ইঁদুর। আশপাশে আবর্জনার স্তূপ।
ওই রাস্তা পেরিয়ে একটি বাড়িতে ঢুকে নজর পড়ল মাটি নরম করার জন্য জমিয়ে রাখা হয়েছে জল। বাসিন্দারা জানালেন, দেড় সপ্তাহ আগে ওই জল তাঁরা জমা করেছিলেন। কেন? বাড়ির কর্তা সনু প্রজাপতি বললেন, ‘‘অত জল বারবার বদলানো যায় না। তা ছাড়া জলের সঙ্গে গুলে রাখলেই মাটি ভাল থাকে।’’ ওই বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গায় সদ্য তৈরি ভাঁড় পুড়িয়ে শুকোনোর চেষ্টা চলছে।
যার ঝাঁঝালো ধোঁয়ায় আশপাশ ঢাকা। সেখানেই ভাঁড় শুকোতে ব্যস্ত জোৎস্না রাই বললেন, ‘‘বৃষ্টির সময়। আগুনে না পুড়িয়ে ভাঁড় তাড়াতাড়ি শুকোনো যায় না।’’
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের শেঠবাগান এলাকার ভাঁড়পট্টির বহু বাড়িতেই ঢুকলে দেখা যায় গুলে রাখা রয়েছে মাটি আর জল। মাটি ঢাকতে ব্যবহার করা প্লাস্টিকের বস্তার মধ্যেও জমে জল। দীর্ঘদিনের জমানো জল নিয়ে হুঁশ নেই পুর প্রতিনিধিরও। স্থানীয় কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তীর দায়সারা উত্তর, ‘‘ওখানে গিয়ে বারবার প্রচার করি। না শুনলে কী করব?’’ তাঁর দাবি, ‘‘জনবসতির মধ্যে এ ভাবে ভাঁড় তৈরি হলে আশপাশের বাসিন্দাদের সমস্যা যে হচ্ছে বুঝতে পারছি। বিষয়টা দেখছি।’’ ডেঙ্গি সচেতনতার অভাব মেনে নিয়ে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পট মেকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মোহনলাল প্রজাপতি বললেন, ‘‘জল জমিয়ে না রাখার চেষ্টা করি। প্লাস্টিক ব্যবহার না করে আমাদের চলবে কী করে? ডেঙ্গি নিয়ে আমাদের কী করতে হবে প্রশাসন বলুক।’’
ওই তিনটি ওয়ার্ডই কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর বরোর অন্তর্গত। সেখানকার চেয়ারম্যান অনিন্দ্যকিশোর রাউত অবশ্য সমস্যার কথা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘ভাঁড় ব্যবসায়ীরা আগে মাটির বাড়িতে ছিলেন, আমি পাকা বাড়ি করে দিয়েছি। চলতি বছর বর্ষার শুরু থেকেই আমরা তৎপর রয়েছি। কিছু দিন আগেই কোল ইন্ডিয়ার একটি কমপ্লেক্স পরিষ্কার করিয়েছি। ভাঁড়পট্টিও বাদ পড়বে না।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy