Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্লাস্টিক বর্জ্য বাছাই নিয়ে অথৈ জলে পুরসভা

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে দৈনিক প্রায় সাড়ে চার হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। তার অনেকটাই অজৈব বর্জ্য, যার বেশির ভাগই প্লাস্টিক।

শহরের রাস্তায় পড়ে প্লাস্টিক। ফাইল চিত্র

শহরের রাস্তায় পড়ে প্লাস্টিক। ফাইল চিত্র

কৌশিক ঘোষ ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০২:২৮
Share: Save:

শহরের বর্জ্যকে জৈব ও অজৈব দু’ভাগ করার কাজ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু অজৈব বর্জ্যে থাকা প্রচুর প্লাস্টিক কী ভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পুরকর্তারা। নিয়ম অনুযায়ী, প্লাস্টিক বর্জ্য আর ভাগাড়ে ফেলা যাবে না। তাতেই চিন্তা বেড়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। একটি সূত্রের দাবি, একই সমস্যায় পড়েছে কেএমডিএ।

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘জৈব এবং অজৈব বর্জ্য অপসারণ নিয়ে কলকাতা পুরসভা পরিকল্পনা করেছে ঠিকই। কিন্তু অজৈব বর্জ্যে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক থাকছে। সেগুলির পুনর্ব্যবহার না করায় সমস্যা হচ্ছে। রাজ্য পরিবেশ দফতরকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে দৈনিক প্রায় সাড়ে চার হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। তার অনেকটাই অজৈব বর্জ্য, যার বেশির ভাগই প্লাস্টিক। এক সময়ে পুরো বর্জ্যই ভাগাড়ে নিয়ে ফেলা হত। কলকাতা পুরসভার সব থেকে বড় ভাগাড় বাইপাস সংলগ্ন ধাপা। কিন্তু ধাপার জঞ্জাল ধারণ ক্ষমতা কার্যত ফুরিয়ে এসেছে। তা ছাড়া, অজৈব বর্জ্য পচে মাটিতে না মেশায় ভাগাড় থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে। দেশের কঠিন বর্জ্য বিধি এবং জাতীয় পরিবেশ আদালতের সর্বশেষ রায়ে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিষয়ে নির্দেশিকা রয়েছে। যার ফলে এখন বর্জ্য পৃথকীকরণ বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে পুর দফতরে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকও হয়। শুধু কলকাতা নয়, আরও কিছু শহরেও বর্জ্য সামাল দেওয়ার কাজ শুরু হবে বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কঠিন বর্জ্য বিধি অনুযায়ী, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার অথবা তা পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু সেই পরিকাঠামো কলকাতায় এখনও নেই। তার ফলে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। আপাতত প্লাস্টিক বর্জ্য ভাগাড়েই ফেলা হচ্ছে। কিন্তু সেটাও বেশি দিন করা যাবে না। পুরসভা সূত্রের খবর, এখনও পুরো কলকাতা পুর এলাকায় বর্জ্য পৃথকীকরণ শুরু হয়নি। তাতেই সমস্যা সামনে আসছে। গোটা শহরে পৃথকীকরণ চালু হলে প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা আরও বাড়বে।

পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, প্লাস্টিক বর্জ্যই আগামী দিনে নাগরিক সভ্যতার সব থেকে বড় বিপদ হয়ে উঠবে। প্রতি বছর বর্ষায় শহরে জল জমার পিছনেও প্লাস্টিককেই দায়ী করেন পুরকর্তারা। এই পরিস্থিতিতে কেন প্লাস্টিক বর্জ্য সামাল দেওয়ার উপযুক্ত পথ পুরসভা এখনও খুঁজে পাননি, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, আগে প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফেলা হত। পরিবেশ বিধি মেনে তা বাতিল করা হয়েছে। কারণ, ওই ধোঁয়া বায়ুদূষণ বাড়ায়। প্লাস্টিক পুড়িয়ে বিদ্যুৎ করতে গেলে উচ্চ তাপমাত্রার চুল্লি প্রয়োজন। তার খরচ বেশি। সেই চুল্লি তৈরির পরিকল্পনাও এখন নেই। তা হলে উপায়?

পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের এক শীর্ষকর্তা জানান, আপাতত প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা বা ‘রিসাইক্লিং’-এর কথা ভাবা হয়েছে। এ ব্যাপারে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও কথা হয়েছে। কিন্তু সদর্থক উত্তর ওই সংস্থাগুলির তরফে দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেননি ওই কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Garbage Plastic KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE