Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
অভিযুক্ত কলকাতা বন্দর

বকেয়া কর বহু কোটি, জানতই না পুরসভা

কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের (কেপিটি) মালিকানায় থাকা জমি যাঁরা লিজ নিয়েছেন (লেসি), তাঁদের থেকে পুর-কর আদায় করেও তা পুরসভায় জমা না দেওয়ার অভিযোগ উঠল খোদ বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই। সম্প্রতি কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)–এর রেসিডেন্ট অডিট শাখা তেমনই রিপোর্ট দিয়েছে কলকাতা পুরসভাকে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৫২
Share: Save:

কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের (কেপিটি) মালিকানায় থাকা জমি যাঁরা লিজ নিয়েছেন (লেসি), তাঁদের থেকে পুর-কর আদায় করেও তা পুরসভায় জমা না দেওয়ার অভিযোগ উঠল খোদ বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই। সম্প্রতি কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)–এর রেসিডেন্ট অডিট শাখা তেমনই রিপোর্ট দিয়েছে কলকাতা পুরসভাকে। তাতে বলা হয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের না মেটানো টাকার পরিমাণ কয়েক কোটি। যদিও কেপিটি দাবি করেছে, পুরসভা তাঁদের করের বিল দেয়নি বলেই টাকা মেটানো যায়নি।

তবে পুর-কর বাবদ ওই টাকা যে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের পাওনা হয়েছে, তা জানাই ছিল না পুর প্রশাসকদের। কার্যত, ক্যাগের রিপোর্ট পেয়ে ঘুম ভাঙে তাঁদের। পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বকেয়া টাকা জমা দেওয়া নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তার ফলেই দিন কয়েক আগে পুরসভার ভাঁড়ারে অ্যাডহক অগ্রিম হিসেবে ১০ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যতে বকেয়া টাকা মেটানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে খবর, শহরে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের অনেক জমি আছে। সেগুলি তাঁরা লিজ এবং ভাড়া দেন। পুরনো এক চুক্তি অনুসারে, ওই জমি লিজ দিয়ে যে ভাড়া পাওয়া যাবে, তার একটি অংশ দিতে হবে পুর কর হিসেবে। কলকাতা পুরসভার নিয়মানুযায়ী, মোট বার্ষিক লিজ ভাড়ার ৪০.৫ শতাংশ অর্থ পুর কর হিসেবে মেটাতে হবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। এর মধ্যে ২০.২৫ শতাংশ দেবে লিজ গ্রহীতা এবং বাকিটা দেবে লিজ দাতা।

একটি হিসেব দিয়ে ক্যাগের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০১৩-১৪ সালে লিজ গ্রহীতাদের কাছ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ (লিজ দাতা) পুর-কর বাবদ আদায় করেছে ২৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু পুরসভায় জমা দিয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৬০ লক্ষ। বাকি প্রায় ২১ কোটি টাকা বন্দর কর্তৃপক্ষের সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে বলে ক্যাগ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে।

ক্যাগের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, চুক্তির নিয়মানুসারে, ওই ২৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা পুর-কর হিসেবে দিতে হবে বন্দর কর্তৃপক্ষকেও। অর্থাৎ মোট টাকার পরিমাণ ৫০ কোটিরও বেশি। কিন্তু সেই টাকা দেওয়া তো দূর, লিজ গ্রহীতাদের থেকে কর বাবদ আদায় করা টাকার পুরোটাও পুরসভার ভাঁড়ারে জমা পড়েনি।

এক পুরকর্তা জানিয়েছেন, কেপিটি-র কাছে এত টাকা পাওনা থাকার কথা তাঁরাও জানতেন না। ঘটনাচক্রে ক্যাগের অফিসারেরা বন্দরের অডিট করতে গিয়ে জানতে পারেন, লিজ ভাড়া আদায়ের সময়ে পুর করও তুলেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা পুরসভায় জমা পড়েনি। কেপিটি-র অ্যাকাউন্টেই ‘সাসপেন্স’ খাতে সেটি জমা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে খবর, মাসখানেক আগে বিষয়টি জানিয়ে পুর কমিশনারকে চিঠি দেয় ক্যাগের রেসিডেন্ট অডিট শাখা। তার পরেই টনক নড়ে পুর প্রশাসনের। বকেয়া টাকা ফেরত পেতে কেপিটি-কে চিঠি পাঠায় পুরসভা। কেপিটি-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন পুর কমিশনার। তারই প্রেক্ষিতে দিন কয়েক আগে ১০ কোটি টাকা পুরসভায় জমা দেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এত টাকা পাওনা থাকা সত্ত্বেও তা পুরকতার্দের জানা ছিল না কেন? কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুরসভার পদস্থ আমলারা। যদিও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ওই কথা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা জানতাম। এখনও ২৩ কোটি টাকা বকেয়া আছে। ওঁদের দিতে বলেছি।’’ কেপিটি-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ক্যাগ রিপোর্টে কি বলেছে জানি না। আমরা অনেক ক্ষেত্রে ১০-২০ বছরের টাকা একসঙ্গে তুলি। তাতে টাকার পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে। তবে পুর করের বিল পেলেই পুরসভায় টাকা জমা দেওয়া হয়।’’ ওই অফিসারের মন্তব্য, ‘‘বিল না এলে টাকা দেব কী ভাবে? সে জন্যই সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখা আছে।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭০ সালে পুরসভা এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে এক চুক্তিতে পুর করের বিষয়টি ঠিক হয়। পরে করের মূল্যায়ন বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় দু’পক্ষে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
সম্প্রতি পুরসভা এবং কেপিটি-র মধ্যে বৈঠকের পরে দু’পক্ষেরই ধারণা, বকেয়া বিলের ব্যাপারে শীঘ্রই সমাধানসূত্র বেরোবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE