পুরসভার সরবরাহ করা জল, না বাজারে বিক্রি হওয়া বোতলবন্দি জল— বেশি দূষিত কোনটা? তা নিয়েই এখন চাপান-উতোর তুঙ্গে!
আন্ত্রিকের অন্যতম কারণ হিসেবে কলকাতা পুরসভা বোতলবন্দি জলের দিকে আঙুল তুলেছে। শুক্রবার পুরসভার তরফে যাদবপুর-সহ একাধিক এলাকায় বোতলবন্দি জলের বিরুদ্ধে অভিযানও চালানো হয়েছে।
কিন্তু বাঘা যতীন, নোনাডাঙা, সন্তোষপুরের মতো বিভিন্ন এলাকার মানুষের প্রশ্ন, পুরসভার যে জল খাওয়ার পরে তাঁরা অসুস্থ হয়েছিলেন, সেই জল এখনও সরবরাহ করা হচ্ছে কেন? বোতলবন্দি জল খেয়েই যে তাঁরা আন্ত্রিক থেকে বেঁচেছেন, সে দাবিও করেছেন অনেকে।
বাঘা যতীনের এক বৃদ্ধের পরিবারে চার জন আক্রান্ত হয়েছিলেন আন্ত্রিকে। ওই বৃদ্ধ বলেন, ‘‘নিজেদের দায় এড়াতে পুরসভা এখন বোতলবন্দি
জলের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে। অথচ, পুরসভার জলে দূষণ কী ভাবে ছড়াল, তা খুঁজে বার করার কোনও
গরজ নেই। তার জন্য অভিযানেও নামতে দেখছি না পুরসভাকে।’’
কয়েক দিন আগে ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা অর্চনা বিশ্বাসের বাড়ি থেকে কেনা জলের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছিলেন পুরকর্মীরা। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই জল শুদ্ধ নয় বলে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। অর্চনাদেবী শুক্রবার বলেন, ‘‘আমাদের যৌথ পরিবারের ১৬ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন পুরসভার সরবরাহ করা জল খেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার পরে বাধ্য হয়েই আমরা জল কিনে খাওয়া শুরু করি।’’ তাঁদের বাড়ির কেনা জলের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট অর্চনাদেবীকেই জানায়নি পুরসভা।
১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণপাড়া লস্করহাটের বাসিন্দা তাপস মণ্ডলের বাড়ি থেকেও পুরসভা জারের জলের নমুনা সংগ্রহ করে এনেছিল। সেই জলও পুরোপুরি ‘শুদ্ধ নয়’ বলে দাবি করা হয়েছে পুরসভার তরফে। তাপসবাবু বলেন, ‘‘বরাবরই আমরা পুরসভার জল খাই। অসুস্থ হওয়ার পরেই জল কেনা শুরু করেছি।’’ এখন অবশ্য জলে ওষুধ দিয়ে খাচ্ছেন তাঁরা।
আন্ত্রিক আক্রান্ত এলাকাবাসীদের অনেকেরই কিন্তু কেনা জলের মান নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারও অভিজ্ঞতা, বোতলের ছিপি সহজেই খুলে যাচ্ছে। কোনও কোনও বোতলের সিল খোলা। বেশির ভাগ জলই স্থানীয় কোনও সংস্থার। রবীন্দ্রপল্লির এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘দামি জল কিনে খাওয়ার সাধ্য নেই। তাই কম দামে যা পাচ্ছি, সেটাই কিনছি। অনেক সময়েই দেখি, সেগুলি রাস্তার উপরে ডাঁই করে রাখা। কিন্তু কী আর করব!’’
এ দিন বোতলবন্দি জলের বিরুদ্ধে অভিযানে নামা পুর অফিসারেরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ জলেরই ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অ্যাক্ট’-এর অনুমোদন নেই। আইএসআই ছাপও অনেক ক্ষেত্রে জাল। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘এই সব জল ক্ষতিকর হতে পারে।’’
মেয়র পারিষদ বলেন, ওই সব জল তৈরির গোটা পাঁচেক সংস্থার ঠিকানা জানা গিয়েছে। সেগুলির বেশির ভাগই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সব কিছু জানিয়ে চিঠি পাঠাবে পুর প্রশাসন। অতীনের কথায়, ‘‘অবিলম্বে ওই সব বোতলের জল তৈরি বন্ধ করা দরকার।’’ তিনি জানান, বাজারে ২০ লিটারের যে জার বিক্রি হচ্ছে, সেই জলের মান নিয়েই সন্দেহ সব চেয়ে বেশি। অনামী নানা সংস্থা তা তৈরি করে চলেছে। এ ধরনের দু’টি ২০ লিটারের জার পরীক্ষার জন্য বাজেয়াপ্তও করেছে পুরসভার দল।
কিন্তু পুরসভার দূষিত জল সরবরাহ কেন বন্ধ হচ্ছে না? কেনই বা জল দূষণের কথা পুরসভা ঘোষণা করছে না? এ নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ পুর কর্তৃপক্ষের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy