শপিং মল তো দূর, তখনও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নাম শোনেননি ব্যারাকপুরের বাসিন্দারা। এক বাজারে হাতের নাগালে সব কিছু বলতে তাঁরা তখন শান্তি বাজারকেই বুঝতেন। ৮০ বছর আগেও আজকের মতো হিরে থেকে জিরে, সবই মিলত সেই বাজারে।
তার পরে আড়ে-বহরে বেড়েছে বাজার। বর্তমানে বয়সের ছাপ তার শরীর জুড়ে। বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরে আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। কারণ, সেখানে না আছে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র, না আছে জলের ব্যবস্থা। আর বাজারের দেওয়াল থেকে খসে পড়া পলেস্তারা, পাঁচিলে গজানো গাছ, বিদ্যুতের তারের জটলা দেখে ক্রেতাদেরও বুক কাঁপে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন বাজারের কোনও মেরামতি হয়নি। আগুন না লাগলেও যে কোনও দিন অন্য কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদেরই।
শান্তি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শ্রীরাম গুপ্ত বলেন, ‘‘ছোটবেলায় এই বাজার দেখেছি। তখন এতটা বড় ছিল না। এখন বাজারের সঙ্গে বিপদের ভয়ও বেড়েছে। আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাই নেই।’’
আশি বছরের পুরনো এই বাজারে কী নেই? পোশাকের দোকানই বেশি। রয়েছে নামী-দামি বিভিন্ন সংস্থার শো-রুম। মুদিখানা, হার্ডওয়্যার থেকে কাঁচা আনাজেরও বাজার রয়েছে। প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দোকানও রয়েছে কয়েকটি। বাজারের গুদামে মজুত থাকে প্রচুর দাহ্য পদার্থ।
সম্প্রতি ওই বাজারের দোতলায় একটি রেস্তরাঁও খুলেছে। আর একতলায় একটি হোটেল রয়েছে। সেখানে এলপিজি গ্যাসে রান্না হয়। মজুত থাকে সিলিন্ডার। ব্যবসায়ী সমিতির বক্তব্য, বাজারের মধ্যে সিলিন্ডার মজুত করা বা আগুন জ্বেলে রান্না— কোনওটারই অনুমতি নেই। তবু বিপজ্জনক ভাবে চলছে এই ব্যবসা। হোটেলের মালিক এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্যারাকপুরের মুখোপাধ্যায় পরিবার এই বাজার তৈরি করেন। তখন বাজার ছিল টালি আর অ্যাসবেস্টসের চালের। বছর দশেক পরে বাজার পাকা হয়। এখন এই বাজার চার ভাগে বিভক্ত। সামনের বাড়িটি তিনতলা। বাকি দু’টি চারতলা। পিছনের বাজার একতলা। তার কিছু অংশে এখনও অ্যাসবেস্টসের চাল।
বাজারের ভিতরে রাস্তা খুব সরু। সিঁড়ির অবস্থাও খুব খারাপ। উপরের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে বৈদ্যুতিক তারের জট। কোনও কোনও তার ক্ষয়ে গিয়ে ভিতরের তামা বেরিয়ে এসেছে। বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মানবেন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘যা অবস্থা, তাতে যে কোনও সময়ে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে।’’
যদি বড় দুর্ঘটনা ঘটে?
‘‘কিছুই করার থাকবে না। কারণ, ২০০ দোকানের এই বাজারে কোনও অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রই নেই,’’ হতাশ শোনায় শ্রীরাম গুপ্তের গলা। অভিযোগ, মালিক পক্ষ বাজারের মেরামতি করেন না। বাজারের শরিকদের এক জন শিপ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্বামী শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্বীকার করলেন, বাজারের অবস্থা খারাপ। তবে মেরামতি করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।
কেন?
শ্রীমন্ত বললেন, ‘‘কোনও দোকানের দৈনিক ভাড়া ৪০ পয়সা, কোনওটির চার টাকা। এই টাকায় কী ব্যবস্থা করব?’’ ব্যবসায়ী সমিতি অবশ্য বলছে, ‘‘আমরাই টাকা তুলে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র কিনব।’’ ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান উত্তম দাস বলেন, ‘‘ব্যবসায়ী সমিতিকে চিঠি পাঠিয়ে ডাকছি। এ ভাবে চলতে পারে না। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা বাজারে রাখতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy