বইপোকা: বাছাই করে বাক্সে ভরা। নিজস্ব চিত্র
প্রিয় বইয়ের খোঁজে কলেজ স্ট্রিটে পুরনো বইয়ের দোকানে ঢুঁ মারেন পাঠকেরা। এ শহরে রয়েছে ওজনদরে বই বিক্রির দোকানও। তবে অজস্র পুরনো বই থেকে বাক্স ভরে পছন্দসই বই বাড়ি আনার স্বাধীনতা এ শহরে আগে ছিল না।
কলকাতার বইপোকাদের এমন সুযোগ করে দিয়েছে গুরুগ্রামের একটি ই-কমার্স সংস্থা। বৃহস্পতিবার থেকে আইস স্কেটিং রিঙ্কে শুরু হয়েছে চার দিনের ‘বইমেলা’, যার পোশাকি নাম ‘লক দ্য বক্স’। মূলত অনলাইনে পুরনো বই বিক্রি করলেও আরও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছতেই এমন আয়োজন, জানালেন সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অলোক রাজ শর্মা। তিনি জানালেন, অনেক পাঠকই নিজের হাতে বেছে বই কিনতে পছন্দ করেন। দিল্লি, মুম্বই, পুণে, আমদাবাদ, বেঙ্গালুরুর মতো বিভিন্ন শহরে আগেই ১৫ বার হয়ে গেছে বাক্স ভরে বই বিক্রির এমন আয়োজন। এ বার এই শহরেও হাজির তাঁরা।
এখানে বইপ্রেমীদের প্রথমে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে নিতে হবে একটি বাক্স। তার মধ্যে যতগুলি বই ধরবে, বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে ততগুলিই। রয়েছে তিন ধরনের বাক্স— ওডিসিয়ুস, পারসিয়াস ও হারকিউলিস।
এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানালেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির প্রাক্তন শিক্ষক বহ্নিশিখা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘পুরনো হলেও বইগুলি খুব ভালো অবস্থায় রয়েছে। কম দামে বই কিনতে কে না চায়?’’ এ দিন দিদির সঙ্গে বই বাছতে বাছতে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দীপশিখা বসু জানাল, তাদের বাক্স ভরে গিয়েছে থ্রিলারে। তবে ভারতীয় লেখকদের বই কম থাকায় খানিকটা হতাশ সে।
বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরনো বই সংগ্রহের সময়ে সেগুলি খুব ভালো করে দেখে নেওয়া হয় বলে জানাচ্ছেন অলোক। বাতিল করা হয় ছেঁড়া, দাগ লাগা বা ‘পাইরেটেড’ বই। তাঁদের সংগ্রহে থাকা বইয়ের সিংহভাগ ইংরেজি ভাষার হলেও চাহিদা রয়েছে আঞ্চলিক ভাষার বইয়েরও। অলোক জানালেন, বৃহস্পতিবার ঝাঁপ খোলার কিছু পরেই বিক্রি হয়ে গেছে হিন্দি ও বাংলা বইগুলি। তবে তাঁদের হিসেব মতো, ক্লাসিক, থ্রিলার, কমিকস, প্রেমের গল্প— সব ছাপিয়ে চাহিদায় টেক্কা দিচ্ছেন ড্যান ব্রাউন।
এ ভাবে বই বিক্রি করা নিয়ে মানুষ কী বলছেন? ওই সংস্থার দাবি, প্রতিটি শহরেই তাঁরা খুব ভালো সাড়া পেয়েছেন। চেন্নাইয়ে হাজির হয়েছিলেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। অলোকের মতে, শুধু দাম দিয়ে বইয়ের বিচার করা উচিত নয়।
এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন উদ্যোগ খারাপ নয়। কলকাতায় ওজনদরে বই বিক্রির দোকান রয়েছে। আজকাল অনলাইন বই পড়া যায়। এতে ছাপা বই প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ছে। বইয়ের দামও বেড়েছে অনেক। এই পরিস্থিতিতে বিপণনের ভালো পন্থা এটি। নিজের পছন্দ মতো বই পাওয়া গেলে তো ভালই।’’
মা-দিদিমার সাহায্যে খান পঁচিশ বইয়ে বাক্স ভরিয়ে উজ্জ্বল
মুখে দাঁড়িয়ে ছিল বিবেকানন্দ মিশন স্কুলের ছাত্রী সৌমিলী দাস। জানাল, ভালো-মন্দের বিচারে না ঢুকে বরং সদ্য কেনা বইয়ের পাতা ওল্টাতেই পছন্দ করবে সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy