পুরসভার একটি ল্যাবের রক্তের রিপোর্টে সই কার (চিহ্নিত), জানার উপায় নেই। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা পুরসভার ল্যাবরেটরিগুলির অধিকাংশের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে মেডিক্যাল অফিসারের (এমও) সই নেই। কোনওটিতে আবার এমও কিংবা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট কারওরই সই নেই। অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্টে সই-র জায়গা ফাঁকা থাকছে। অনেক জায়গায় আবার সইটি কার তাও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে এ বার কড়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। গত ১৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, কলকাতা পুরসভার প্রতিটি রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে থাকতে হবে মেডিক্যাল অফিসারের সই। কোনও বরোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিক্যাল অফিসার না থাকলে পাশাপাশি কোনও পুর-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মেডিক্যাল অফিসারদের দিয়ে রিপোর্ট সই করাতে হবে বলেই জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
অভিযোগ, কলকাতা পুরসভার ল্যাবরেটরিতে ডেঙ্গি কিংবা ম্যালেরিয়ার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে সই করছেন মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান অথবা টেকনোলজিস্টরা। কিন্তু সেই রিপোর্টে সই থাকার কথা বায়োকেমিস্ট, প্যাথলজিস্ট কিংবা মাইক্রোবায়োলজিস্টের। তা না হলেও ন্যূনতম এমবিবিএস মেডিক্যাল অফিসারের সই প্রয়োজন বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর। অভিযোগ, তেমন কারও সই থাকছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তের রিপোর্টের ওপরে রোগীর সমগ্র চিকিৎসাপ্রক্রিয়া নির্ভর করে। তাতে বিন্দুমাত্র ভুল হলে সরাসরি রোগীর জীবন প্রভাবিত হয়। ল্যাবরেটরি টেস্টের স্বীকৃত নিয়মই হল, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা থাকলেও নজরদারি চালাবেন এবং পরীক্ষা যাচাই করে রিপোর্টে সই করবেন কোনও এমডি প্যাথলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট বা মাইক্রোবায়োলজিস্ট। তাঁদের পরিবর্তে ন্যূনতম কোনও এমবিবিএস চিকিৎসককে এটা করতে হবে। অভিযোগ, পুর-ল্যাবরেটরিতে এই সব নিয়মের বালাই নেই। ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রগ্রেসিভ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সমিত মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমরা জানি বেনিয়ম চলছে। অন্যায়ভাবে টেকনোলজিস্টদের ঘাড়ে সব দায়িত্ব চাপানো হচ্ছে। এতে রিপোর্টের মান খারাপ হতে বাধ্য। কোনও গোলমাল হলে দায় এসে পড়বে আমাদের ওপরে। বিষয়টি সর্বত্র জানিয়েছি।’’
পুর-ল্যাবরেটরিগুলি এখন ‘ন্যাশনাল আর্বান হেলথ মিশন’ র টাকা পায়। সেই টাকা কেন্দ্র থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর মারফত পুরসভার হাতে আসে। ল্যাবরেটরির রিপোর্টে কোনও চিকিৎসকের সই না থাকার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পৌঁছেছে স্বাস্থ্য দফতরের কাছেও। রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কোনও চিকিৎসকের সই ল্যাবরেটরি রিপোর্টে থাকবে না, এটা হয় না। পুরসভার মেডিক্যাল অফিসারদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতেও বলা হয়েছে।’’
যদিও কলকাতা পুরসভার পাল্টা দাবি, ল্যাবরেটরির রিপোর্টে চিকিৎসকের সই বাধ্যতামূলক নয়। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকার কথাও তিনি জানেন না।
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ শুক্রবারও দাবি করেছেন, ‘‘ল্যাবরেটরির রিপোর্ট পরীক্ষায় কোনও চিকিৎসক দরকার লাগে না। পরীক্ষা তো করে যন্ত্র। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরাই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। হাজার-হাজার রক্ত পরীক্ষা পুরসভার ল্যাবরেটরিতে হয়েছে এবং হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy