Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বধূ ‘নির্যাতনে’ মিটমাট থানায়

মেয়ের উপরে পারিবারিক হিংসার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানা পর্যন্ত গেলেন মা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জামাইয়ের বাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে অনড় রইলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৩৯
Share: Save:

মেয়ের উপরে পারিবারিক হিংসার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানা পর্যন্ত গেলেন মা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জামাইয়ের বাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে অনড় রইলেন। কিন্তু রাতে সেই মায়েরই বক্তব্য, ‘‘জামাইকে একটা সুযোগ দিতে চাই। এক বছরের নাতনি আছে। যদি সংসারটা জোড়া লাগে!’’

চার বছর আগে টাকীর বাসিন্দা ওই তরুণীর সঙ্গে বিয়ে হয় লেক টাউনের ওই যুবকের। পরিবার সূত্রে খবর, তরুণীকে পুত্রবধূ হিসেবে প্রথমে মেনে নিতে চায়নি ছেলের পরিবার। চার মাস আগে এক বছরের মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন বধূ। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পর থেকে মেয়ের উপরে নানা ভাবে মানসিক নির্যাতন চলত। তরুণীর অভিযোগ, ‘‘খাটে বসলে খোঁটা দিত। মাছ খেতে চাইলে দিত না। ঘর থেকে বেরোতে দেবে না। কারও সঙ্গে কথা বললে, তাতেও অশান্তি।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে মেয়েকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সে জন্য টাকির বাড়ি থেকে কলকাতায় এসেছিলেন তরুণীর মা। তরুণীর অভিযোগ, বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে তাঁর পথ আটকান দুই ননদ। বধূর কথায়, ‘‘ওদের বক্তব্য, আমি বাইরে বেরোতে পারব না। বড় ননদ আমাকে মেরে কোল থেকে মেয়েকে কেড়ে নেয়। ছোট ননদ আমার চেয়ে বয়সে ছো়ট। সেও পেটে লাথি মারল। আমার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ধরে। তারই মধ্যে চুলের মুঠি ধরে মারছিল শাশুড়ি।’’ এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীরা ওই তরুণীকে উদ্ধার করে তাঁর মাকে ফোন করে ঘটনার কথা জানান। তরুণীর মা এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘ওর শ্বশুর বলছে, স্ত্রী-মেয়ে তো গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধরেছে। আমি হলে গলা টিপেই দিতাম।’’

এই অভিযোগ নিয়ে তরুণী এবং তাঁর মা লেক টাউন থানায় গেলে তরুণীর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের ডেকে পাঠায় পুলিশ। থানায় বসে আলোচনা শেষে তরুণীর মা বলেন, ‘‘ছেলের বাড়িতে মেয়েকে পাঠাতে মন চাইছে না। আজ এ ভাবে মেরেছে। কাল মেরে বলবে আত্মহত্যা করেছে। আমার মেয়েকে কি তখন ফিরে পাব?’’ এ কথা বলার পরে অভিযোগ দায়েরের জন্য মেয়ের মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর প্রস্তুতি নেন তরুণীর মা। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের কাছেও যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাতনির কথা ভেবে মিটমাটের রাস্তাতেই হাঁটার সিদ্ধান্ত জানান ওই বধূর মা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে তরুণীর স্বামী বলেন, ‘‘এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়। সব সংসারেই অশান্তি হয়। থানা ও কাউন্সিলরের কাছে গিয়েছিলাম ঠিকই। আমাদের মধ্যে মিটমাট হয়ে গিয়েছে। দু’দিন পরে আমার স্ত্রী ফিরে আসবে।’’ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ হাজরা বলেন, ‘‘ছেলের পরিবারকে দেখে অনুতপ্ত মনে হয়নি। কিন্তু শিশুটির কথা ভেবে মেয়ের বাড়ি পিছিয়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Molestation Torture Police Station Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE