Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে খেতে পারেননি অনেকে

গণপিটুনির ভয়াবহতা এবং নৃশংস ছবি দেখে ঘটনার দিন মুখে ভাত তুলতে পারেননি দক্ষিণ দমদমের চাষিপাড়ার বাসিন্দাদের অনেকেই।

এলাকায় পড়ে রয়েছে যুবকের দেহ। ফাইল চিত্র

এলাকায় পড়ে রয়েছে যুবকের দেহ। ফাইল চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

গণপিটুনির ভয়াবহতা এবং নৃশংস ছবি দেখে ঘটনার দিন মুখে ভাত তুলতে পারেননি দক্ষিণ দমদমের চাষিপাড়ার বাসিন্দাদের অনেকেই। অভিযোগ, দক্ষিণ দমদমের বসাকবাগানের চাষিপাড়ায় মঙ্গলবার সকালে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের। ব্যপক মারধর খেয়ে যুবকটিকে ছটফট করে প্রকাশ্যে মরতে দেখে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যেই।

স্থানীয় বাসিন্দা নমিতা মণ্ডল, লক্ষ্মী দলুইরা জানাচ্ছেন, মর্মান্তিক ওই দৃশ্য দেখে অনেকেই ওই দিন বাড়িতে রান্না করতে পারেননি। তাঁদের কাতর প্রশ্ন, ‘‘ এত বড় ঘটনার পরে কেউ ধরা পড়বে না! লক্ষ্মীদেবীর কথায়, ‘‘একটা ছেলেকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মারা হল। কেউ গ্রেফতার না হলে তো ওদের সাহস বেড়ে যাবে। এর পরে তো যে কাউকে পিটিয়ে মেরে দেবে!’’

ঘটনার আটচল্লিশ ঘণ্টা পরে কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ চাষীপাড়ার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা নমিতাদেবী বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে কী ভাবে?’’ ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট অবশ্য জানাচ্ছে, খুনের ধারা যোগ করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দমদম থানা।

পুলিশ তদন্তে জেনেছে, মঙ্গলবার চাষিপাড়ার বাসিন্দা পূর্ণিমা দাসের বাড়িতে চুরির উদ্দেশ্যে ওই যুবক এবং আরও তিন জন ঢুকেছিল। পূর্ণিমা নিজেই ওই দিন জানান, ভোর চারটে নাগাদ ঘুম ভেঙে তিনি টের পান বাড়িতে নির্মাণের কাজের জন্য মজুত লোহা কেউ চুরির চেষ্টা করছে। তড়িঘড়ি তিনি তাঁর দুই ছেলে রঞ্জন ও অঞ্জনকে ডাকেন। জুটে যান প্রতিবেশীরাও। এর পরে রঞ্জন, অঞ্জন এবং তাঁদের প্রতিবেশী বাচ্চু শীট মিলে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকা ওই যুবককে ধরে ফেলে।

আরও পডু়ন: প্রথম তালিকায় ২৮ প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই ক্ষোভ-বিতর্ক শুরু রাজ্য বিজেপির অন্দরে

আরও পডু়ন: গাঁধীনগর থেকে আডবাণীকে সরিয়ে প্রার্থী অমিত, ‘মার্গদর্শক’ বিদায়ে কটাক্ষ কংগ্রেসের

রঞ্জনও স্বীকার করে যুবককে গণপিটুনি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাতিস্তম্ভে বেঁধে সকলে মিলে মেরেছে। তবে রড দিয়ে মারা হয়নি।’’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাতটা পর্যন্ত মারধরের পরে চার জন যুবক চ্যাংদোলা করে আক্রান্তকে কাছেই একটি নির্মাণ স্থল লাগোয়া পাথরের স্তূপে ফেলে দেয়।

চোখের সামনে নৃশংসতা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুনীতা সিংহ নামে এক মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির বারান্দা থেকে দেখছিলাম, কী বীভৎস ভাবে মারছিল। বারণ করলেও শোনেনি। চ্যাংদোলা করে যখন নিয়ে যাচ্ছে তখন মুখ হাঁ করে ছেলেটা জল চাইছিল। মুখে বোতলে করে জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বালতি করে মুখে জল ঢালছে। তাতে তো নাকে, কানে জল ঢুকছে। সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তাঁর অভিযোগ, লোহার রড শুধু নয়, একটি সাইকেল চুরির অপবাদ দিয়েও ওই যুবককে বেদম মারধর করা হয়। বুধবার সেই সাইকেলের মালিক জানান, তাঁর ঘরের বাইরে থেকে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ সাইকেল উধাও হয়ে যায়। যা শুনে নমিতার প্রশ্ন, ‘‘ভোর চারটে নাগাদ ছেলেটিকে ধরা হয়। তা হলে সাড়ে ৬টার সময় ওই ছেলেটি সাইকেল চুরি কী ভাবে করবে!’’

ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিপাড়ার অনেকেই। যদিও পুলিশের আশ্বাস, খুনের ধারা যোগ করার পাশাপাশি বেশ কয়েক জনকে চিহ্নিত করাও হয়েছে। দ্রুত অভিযুক্তদের ধরা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dumdum Lynching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE