Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তিন বছরে বারবার বিক্রি, রাজস্থানে উদ্ধার কিশোরী

একের পর এক হাত বদল হতে হতে একাধিক বার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সে। আপাতত দুই শিশুপুত্রের মা সেই নাবালিকা। একটি শিশুর বয়স এক বছর।

ধৃত সাজু লস্কর

ধৃত সাজু লস্কর

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২১
Share: Save:

বিয়ের টোপ দিয়ে তিন বছর আগে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল তাকে। আড়কাঠির মাধ্যমে কুলতলির কিশোরী হাত বদল হয়ে পৌঁছে গিয়েছিল কাশ্মীরে। তার পরে সেখান থেকে রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামে।

একের পর এক হাত বদল হতে হতে একাধিক বার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সে। আপাতত দুই শিশুপুত্রের মা সেই নাবালিকা। একটি শিশুর বয়স এক বছর। অন্য জন এক মাসের। গত শনিবার সেই নাবালিকাকে রাজস্থানের আলোয়াড়া জেলা থেকে উদ্ধার করল বারুইপুরের মহিলা থানার পুলিশ।

তিন বছর আগে, ২০১৬ সালের সেই পাচার-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাজু লস্কর নামে এক যুবককে দিন কয়েক আগেই গ্রেফতার করেছিল মহিলা থানা। নিখোঁজ হওয়ার পরে কিশোরীর পরিবারের তরফে কুলতলি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও ঘটনার তদন্ত এগোয়নি। খোঁজ মেলেনি ওই নাবালিকারও। সম্প্রতি ঘটনার তদন্তভার বারুইপুর মহিলা থানার অফিসারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই ধরা পড়ে সাজু। তদন্তকারীরা জানান, সাজু কুলতলির ওই নাবালিকাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জয়নগরের বাসিন্দা নারী পাচারচক্রের এক আড়কাঠির কাছে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি

করে দিয়েছিল। জেরায় সাজু সে কথা স্বীকার করেছে বলে জানান বারুইপুরের মহিলা থানার ওসি কাকলি ঘোষ কুণ্ডু। তিনি বলেন, ‘‘সাজুর উপরে মানসিক চাপ বাড়ানো শুরু হয়। আমার নিশ্চিত ছিলাম যে ওই নাবালিকা কোথায় পাচার হয়েছে সাজুই সে হদিস দিতে পারবে।’’ পুলিশ জানায়, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে তিন বার হাত বদল হয়ে ওই নাবালিকা কাশ্মীরের এক হোটেল মালিকের কাছে পাচার হয়ে যায়।

বারুইপুর পুলিশ জেলার এক কর্তা জানান, মহিলা থানার একটি তদন্তকারী দল কাশ্মীরের সেই হোটেলে যোগাযোগ করলেও সেখানে ওই নাবালিকার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। দেড় বছর আগে ওই নাবালিকা ছিল সেখানে কাজ করত বলে জানা যায়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য নাবালিকাকে রাজস্থানে পাচার করে দেওয়ার খবর মেলে। ওই পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘কাশ্মীরের ওই হোটেলেরই কয়েক জন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাজস্থানের আলোয়াড়া জেলায় ওই নাবালিকা রয়েছে বলে জানা যায়।’’ ফলে রাজস্থানের ওই জেলায় হানা দেয় বারুইপুর থানার পুলিশ। খবর মেলে সেখানেই একটি পরিবারে পরিচারিকার কাজ করানো হচ্ছে ওই কিশোরীকে দিয়ে। সেখানেও তার উপরে যৌন নির্যাতন করা হয় বলেও খবর পায় পুলিশ।

এর পরে গত শনিবার রাতে রাজস্থানের পুলিশ এবং বারুইপুর পুলিশের যৌথ ভাবে ওই বাড়িতে হানা দেয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ওই নাবালিকা ও তার দুই ছেলেকে

ফেলে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে রাজস্থানের ওই পরিবারটি। নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারের পরে ওই নাবালিকা পুলিশকে জানিয়েছে, কখনও পাঁচ হাজার, কখনও দশ হাজার টাকায় তাকে বেশ কয়েক বার বিক্রি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একাধিক বার যৌন নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে। বারুইপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রিজিৎ বসু বলেন, ‘‘শিশুপুত্র-সহ ওই নাবালিকাতে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Human Trafficking Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE