শুভারম্ভ: উদ্বোধন হল এডিএসবি যন্ত্রের। ছবি: সুদীপ ঘোষ
যে আকাশ এত দিন ঢাকা ছিল অন্ধকারে, তার ছবি এ বার ফুটে উঠল মনিটরে।
কলকাতা থেকে পোর্ট ব্লেয়ারের দূরত্ব প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার। তার মধ্যে বঙ্গোপসাগরের মাথায় প্রায় ৬৬০ কিলোমিটার জুড়ে থাকা আকাশের কোনও ছবি এতদিন ফুটে উঠত না কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর মনিটরে। কারণ, ওই এলাকার আকাশের ছবি দেওয়ার মতো কোনও রেডার বা যন্ত্র ছিল না। বলা ভাল, রেডার বা যন্ত্র বসানোর কোনও উপায় ছিল না। ওই আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানের পাইলটেরা কলকাতার এটিসি-র সঙ্গে মৌখিক ভাবে যোগযোগ রেখে চলতেন। কখনও কোনও কারণে সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সমস্যায় পড়তেন তাঁরা।
মায়ানমারের কোকো এবং সিতউই দ্বীপ-এর দু’টি যন্ত্রের সাহায্যে শনিবার থেকে সেই অন্ধকারে ঢেকে থাকা আকাশের ছবি ফুটে উঠতে শুরু করেছে কলকাতার মনিটরে। এর ফলে, এ বার থেকে ওই আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া প্রতিটি বিমানের উচ্চতা, অবস্থান, গতিবেগ কলকাতায় বসে জানতে পারবেন এটিসি অফিসারেরা। এ দিন নতুন এই ব্যবস্থার উদ্বোধন করতে দিল্লি থেকে এসেছিলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য বিনীত গুলাটি, ই ডি অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন পূর্বাঞ্চলের ই ডি এস পি যাদব।
কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক সার্ভিসেস-এর জেনারেল ম্যানেজার কল্যাণ চৌধুরী জানিয়েছেন, মনিটরে বিমানের ছবি ফুটে ওঠার অর্থ, এ বার থেকে দু’টি বিমানের মাঝের ব্যবধান কমিয়ে ফেলা যাবে। দেখতে না পেলে যেখানে দুই বিমানের মাঝে সামনাসামনি দূরত্ব রাখতে হত প্রায় ১৪০ কিলোমিটার, এ বার আস্তে আস্তে তা কমিয়ে ৩৬ কিলোমিটারও করে ফেলা যাবে। ফলে, দেশের আকাশে আরও বেশি বিমান উড়তে পারবে। যে কাঙ্খিত উচ্চতা দিয়ে উড়ে গেলে বিমানের জ্বালানি সাশ্রয় হয়, সেই উচ্চতায় বিমানকে তুলেও দেওয়া যাবে। ফলে দূষণ কমবে, জ্বালানিও বাঁচবে। সবটা সম্ভব হতে চলেছে মায়ানমারের ওই দু’টি দ্বীপে বসানো দু’টি এডিএসবি-র জন্যই।
কী এই এডিএসবি?
এডিএসবি অর্থে, অটোমেটিক ডিপেনডেন্ট সার্ভিল্যান্স ব্রডকাস্ট। এটি এমন একটি যন্ত্র, যেটি আকাশের বিশাল এলাকায় বিমানের গতিবিধি তুলে ধরে বিমানবন্দরে রাখা মনিটরে। তবে বিমানেও পাল্টা এডিএসবি যন্ত্র থাকতে হবে। এখন বিশ্বের আকাশে উড়ে বেড়ানো প্রায় ১০০ শতাংশ যাত্রীবাহী বিমানে ওই যন্ত্র রয়েছে।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শুধু মায়ানমারই তাদের যন্ত্রের ছবি দিয়ে সাহায্য করছে না, এই দেশও পোর্ট ব্লেয়ার ও আগরতলায় বসানো দু’টি এডিএসবি-র ছবি দিতে শুরু করেছে মায়ানমারকে। ২০১৫ সালে মায়ানমারের সঙ্গে এই দেশের এ নিয়ে চুক্তি হয়। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের মাথায় অন্ধকারে ঢেকে থাকা আকাশের ছবি যেমন দেখা যাবে কলকাতা বিমানবন্দরের মনিটরে, তেমনই মায়ানমারের ভিতরে অন্তত ২৭০ কিলোমিটার আকাশ দেখা যাবে কলকাতায় বসে। একই ভাবে এই দেশের ২৭০ কিলোমিটার আকাশও দেখতে পাবেন রেঙ্গুন এটিসি-র অফিসারেরা। কল্যাণবাবু জানিয়েছেন, কলকাতার মাথার উপর দিয়ে যত বিমান পূর্ব থেকে পশ্চিমে উড়ে যায়, তা প্রধানত আসে মায়ানমার থেকে। আবার পশ্চিমমুখী বিমানের নিয়ন্ত্রণ কলকাতার এটিসি-র হাত থেকে চলে যায় রেঙ্গুন এটিসি-র হাতে। এ কারণে প্রতি দিন অসংখ্য বার কলকাতার সঙ্গে রেঙ্গুনের যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। এত দিন সে যোগাযোগ হত টেলিফোনের মাধ্যমে। এখন যেহেতু দুই দেশই দুই দেশের সীমান্তবর্তী আকাশের অনেকটা ছবি মনিটরে দেখতে পাবে, তাই যোগাযোগের সমস্যা হলেও তা বিমানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy