বলরাম কেশরি ও অর্চনা পালংদার।
নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন আগেই অর্চনা তাঁর ছেলেকে নিয়ে লালবাজারের সামনে দেখা করেছিলেন ঝাড়খণ্ডের এক যুবকের সঙ্গে। সেই যুবক অর্চনার ছেলেকে একটি সাইকেলও কিনে দেন। সেই সাইকেল এখনও প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় পড়ে রয়েছে অর্চনা-পিন্টুর উল্টোডাঙার বাড়িতে।
উল্টোডাঙার অর্চনা পালংদার খুনের তদন্তে তাই ঝাড়খণ্ড গেল কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী দল। পুলিশের সন্দেহ, অর্চনার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কই এই খুনের পেছনে প্রধান কারণ হতে পারে।
তদন্তাকারীরা এখন পর্যন্ত দুটি এ রকম সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাঁচির বাসিন্দা ওই যুবকের নাম বলরাম কেশরি। অর্চনার বাপের বাড়ির দিক থেকে দূর সম্পর্কের আত্মীয়। কয়েক মাস আগে, কলকাতায় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে অর্চনার সঙ্গে আলাপ হয় বলরামের। তার পর থেকেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো মাধ্যমে নিয়মিত কথাবার্তার পাশাপাশি, ভিডিয়ো কলেও কথা হত বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন: বহু পুরুষবন্ধু নিয়ে নিত্য অশান্তি! অর্চনার স্বামীকেও সন্দেহের বাইরে রাখছে না পুলিশ
অর্চনার ছেলের সঙ্গে কথা বলেই পুলিশ জানতে পেরেছে, ১৭ অগস্ট নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন আগে ছেলেকে নিয়ে লালবাজারের কাছে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের একটি সাইকেলের দোকানে যান অর্চনা। সেখানে বলরামও ছিলেন। তাঁকে বলরামমামা বলে ছেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন অর্চনা। বলরামই সে দিন ওই সাইকেল কিনে দেন বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছে অর্চনার ছেলে।
অন্য দিকে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বলরামের স্ত্রী ফোন করেছিলেন অর্চনার স্বামী পিন্টুকে। তদন্তকারীদের সন্দেহ, বলরামের স্ত্রী সম্ভবত এই সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেছিলেন। তাই বলরাম রাঁচি থেকে কলকাতায় আসতেই সন্দেহ করেন তাঁর স্ত্রী, এবং খোঁজ নেওয়ার জন্য ফোন করেন পিন্টুকে। তত দিনে অর্চনা নিঁখোজ। উল্লেখযোগ্য ভাবে, ফোনটা এসেছিল সেই দিনই, যে দিন অর্চনার দেহ চৌবাগা লকগেটে উদ্ধার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: অন্ধ্রে টিডিপি বিধায়ক-সহ দু’জনকে গুলি করে মারল মাওবাদীরা
অন্য দিকে বলরাম ছাড়াও শম্ভু নামে উল্টোডাঙার এক স্থানীয় যুবকের সঙ্গেও অর্চনার সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাঁর সঙ্গে বছর তিনেক আগে ছেলেকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন অর্চনা। তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই অর্চনার পোশাক, যে বস্তায় তাঁর দেহ পাওয়া গিয়েছিল সেই বস্তা এবং যে নাইলনের দড়ি দিয়ে বস্তার মুখ বাঁধা ছিল, সেই দড়ি ফরেন্সিক তদন্তের জন্য পাঠিয়েছেন।
তদন্তাকারীরা মূলত তিনটি সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। এখন পর্যন্ত তাঁরা অনেকাংশেই নিশ্চিত যে, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই খুন হয়েছেন অর্চনা। সে ক্ষেত্রে এক দিকে তাঁদের প্রথম সন্দেহ বলরামকে, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর সঙ্গেই অর্চনার সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। অন্য দিকে বলরামের স্ত্রী বা পরিবারকেও তাঁরা সন্দেহের বাইরে রাখতে পারছেন না। এক তদন্তকারী বলেন, “বলরামের স্ত্রী গোটা বিষয়টা জানতে পেরেছিলেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর যথেষ্ট মোটিভ আছে অর্চনাকে খুন করার। আমরা সেই বিষয়টিও দেখছি। সে জন্যই একটি দল পাঠানো হয়েছে ঝাড়খণ্ডে।” অন্য দিকে শম্ভু এবং অর্চনার স্বামী পিন্টুরও যথেষ্ট জোরালো কারণ আছে এই অপরাধ করার, এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাই তাঁদেরও জেরা করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা বলছেন, অর্চনার নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে দেহ মেলা পর্যন্ত টাওয়ার লোকেশন থেকে কোনও উল্লেখযোগ্য সূত্র মেলেনি এখনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy