‘লন্ডন আই’-এর ধাঁচে এ শহরে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘কলকাতা আই’ প্রকল্প ধাক্কা খেল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন যাত্রার আগেই পরিবেশ আদালতের এক রায়ে ওই প্রকল্প এখন কার্যত বিশ বাঁও জলে।
সম্প্রতি কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ একটি নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছে, মুদিয়ালি থেকে দক্ষিণেশ্বর এবং নাজিরগঞ্জ থেকে বালিখাল পর্যন্ত গঙ্গার পাড়ে কোনও নির্মাণ করা যাবে না। তার ফলেই হাওড়ার দিকে গঙ্গার পাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ওই প্রকল্প আপাতত প্রশ্নচিহ্নের মুখে। নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারও এখন খুব বেশি এগোতে চাইছে না। সম্প্রতি পরিবেশ আদালতে রাজ্যের যে ক’টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আর্জি জানানো হয়েছিল, তাতেও ‘কলকাতা আই’-এর নাম ছিল না।
লন্ডনে টেমস নদীর পাড়ে বিশাল নাগরদোলা ‘লন্ডন আই’। তাতে চেপে উপর থেকে গোটা শহরটাকে দেখা যায় পাখির চোখে। সিঙ্গাপুর ও লাস ভেগাসেও এমন নাগরদোলা আছে। রাজ্যে পালাবদলের পরে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দেন, কলকাতাকে লন্ডন করবেন। তারই অঙ্গ হিসেবে লন্ডন আই-এর ধাঁচে গঙ্গার পাড়ে ‘কলকাতা আই’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, গঙ্গার পূর্ব পাড়ে কলকাতার দিকেই ৪৫০ ফুটের ওই নাগরদোলা তৈরি হবে। এই নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন টানাপড়েনও চলে। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়ার দিকের গঙ্গাপাড়ে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের দায়ের করা একটি মামলার জেরেই এখন কার্যত ভেস্তে যাওয়ার পথে ‘কলকাতা আই’। কারণ পরিবেশ আদালতের রায় ওই মামলার প্রেক্ষিতেই।
কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করে সুভাষবাবু আবেদন করেছিলেন, চক্ররেলের লাইন ও গঙ্গার জোয়ারের জল পাড়ের যতটা পর্যন্ত ওঠে, সেই এলাকায় কোনও বাণিজ্যিক নির্মাণ করা যাবে না। এমন আইন রাজ্যে রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, সৌন্দর্যায়নের নামে গঙ্গার দূষণ সৃষ্টি করছে সরকার। এর ফলে এক দিকে যেমন গঙ্গার গতিপথ রুদ্ধ হচ্ছে, তেমনই জীববৈচিত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোনও রকম পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই এ সব কাজ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
সুভাষবাবুর আবেদনের প্রেক্ষিতেই জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, নাজিরগঞ্জ থেকে বালিখাল এবং মুদিয়ালি থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত গঙ্গার পাড়ে কোনও নির্মাণকাজ করা যাবে না। কলকাতা বন্দরের জমিতেও কোনও নির্মাণকাজ করার আগে পরিবেশগত সমীক্ষা করাতে হবে।
পরিবেশবিদেরা বলছেন, গঙ্গার পাড়ে নির্মাণকাজ করতে হলে প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা করে অনুমতি নিতে হবে। সম্প্রতি বালির একটি জলপ্রকল্প এবং নিমতলা শ্মশানের পরিবেশবান্ধব চুল্লি বসানোর ক্ষেত্রে প্রকল্পের ছাড়পত্র নিতে পরিবেশ আদালতে হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে আদালত ওই তিনটি প্রকল্পে সায়ও দিয়েছে। আদালতের একটি সূত্র বলছে, সে দিন ‘কলকাতা আই’ নিয়ে কোনও আর্জি জানাননি সরকারপক্ষের আইনজীবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy