ফেসবুকে কলকাতা পুলিশের পেজে এই পোস্ট নিয়েই বিতর্ক।
ফেসবুকের সরকারি পেজ-কে হাতিয়া়র করে কলকাতা পুলিশ যে ভাবে হাসপাতালে চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্তের হয়ে সওয়াল শুরু করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
নিগ্রহের ঘটনায় যিনি অভিযুক্ত, তিনি কলকাতা পুলিশের একটি থানার ওসি। সেই ওসি-র হয়ে সাফাই দিতে কলকাতা পুলিশ নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ-কে কেন ব্যবহার করবে, বিতর্ক তা নিয়েই। আইনজীবীদের একাংশের প্রশ্ন, চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে পুলিশের তদন্ত যখন চলছে, তখন কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ করে দিয়ে পুলিশ কি বিচার ব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে না?
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশ ও ডাক্তারদের মধ্যে বিভেদ রুখতেই হয়তো কলকাতা পুলিশ ওই পোস্ট করেছে। তবে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এই ধরনের বক্তব্য সামনে না আনাই বাঞ্ছনীয়। এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখা উচিত।’’
হাসপাতালের মধ্যে চিকিৎসাধীন কারও ছবি তোলা যায় না বলে পুলিশই সংবাদমাধ্যমকে বারবার বাধা দেয়। অথচ, তারাই কী ভাবে নিজেদের ফেসবুকে চিকিৎসাধীন ওই পুলিশকর্মীর ছবি পোস্ট করল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের অনেকেই।
হাসপাতালে ভাঙচুর এবং চিকিৎসক-নিগ্রহের মতো ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে আইন প্রণয়ন করেছে তৃণমূল সরকার। সেই আইন এ ক্ষেত্রে কেন প্রয়োগ করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন চিকিৎসকেরা। ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখার সম্পাদক তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য শান্তনু সেন অবিলম্বে যাদবপুর থানার ওই অভিযুক্ত ওসি পুলক দত্তকে জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছিলেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা না হলে চিকিৎসকেরা যে আর পুলিশকর্মীদের চিকিৎসা করবেন না— এমন কথাও লিখেছিলেন ওই চিকিৎসক-নেতা। ভাইরাল হয়েছিল সেই পোস্ট। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতা পুলিশ ফেসবুকে নিজেদের বক্তব্য জানানোর পরেই সেই পোস্ট তুলে নেন শান্তনুবাবু। পুলিশের চাপেই ওই সিদ্ধান্ত কি না, তা নিয়ে সরব চিকিৎসক মহল। শান্তনুবাবুকে শুক্রবার ফোনে পাওয়া যায়নি। এসএমএস করা হলেও জবাব আসেনি।
আরও পড়ুন: ডাক্তারকে ঘুসি! ক্ষমা চেয়ে মিটমাট পুলিশের
সোশ্যাল মিডিয়ায় চিকিৎসকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, এক জন অভিযুক্তকে ফেসবুকের সরকারি পেজ-এ যে ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা কি অন্যদের ক্ষেত্রেও হবে? অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার এখন সুস্থ বলেই চিকিৎসকদের দাবি। এই অবস্থায় তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
গোটা ঘটনাটির বিষয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকার শুক্রবার একটি দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, ‘‘বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাধারণ রোগী নয়, পুলকবাবুর ‘পুলিশ’ পরিচয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ‘ডাক্তার পেটালেন ওসি’ জাতীয় শীর্ষকে। সুতরাং, কলকাতা পুলিশের সদস্য হিসেবে যদি পুলকবাবু ‘পুলিশ’ পরিচয়েই ইচ্ছে প্রকাশ করেন আমাদের সরকারি পেজে নিজের বক্তব্য জানানোর, সেটা পোস্ট করার মধ্যে ন্যূনতম অনৈতিকতা আছে বলে আমরা মনে করি না। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারবাবুর ছবি এবং বক্তব্য সমস্ত কাগজে-চ্যানেলে পাঠক-দর্শক পড়েছেন বা দেখেছেন। পুলকবাবুর বক্তব্য কোথাও প্রচারিত হয়নি। তাই ঘটনার বিষয়ে তাঁর বয়ান বা চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছবি পোস্ট করার মধ্যে একপেশে কিছু আছে বলেও আমাদের মনে হয় না। নেতিবাচক মনোভাব সরিয়ে রেখে আমাদের পোস্টটি সামান্য মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখবেন, পুলকবাবুর বক্তব্য প্রকাশের পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কাউকে বাঁচানোর বা সাফাই দেওয়ার প্রশ্ন উঠছে কী করে?’’
পুলকবাবুর বক্তব্য কোথাও প্রকাশিত হয়নি বলে যুগ্ম কমিশনার যে অভিযোগ করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ঘটনার পরের দিনই কাগজে যে খবর প্রকাশিত হয়, তাতে পুলকবাবুর বক্তব্য ছিল। তদন্ত চলাকালীন কেন সরকারি মাধ্যমকে এক জন অভিযুক্তের বক্তব্য জানানোর জন্য ব্যবহার করা হল, তা-ও পরিষ্কার হয়নি যুগ্ম কমিশনারের বক্তব্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy