Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

লোকে বলে ‘চলতা ফিরতা মন্দির’! সত্যি এই মন্দির চলে ফিরে বেড়ায়। লাল শালুতে মুড়ে কথক ঠাকুরের কোলে চড়ে বিভিন্ন আকারের মন্দির ঘুরে বেড়ায় গ্রাম গ্রামান্তরের গৃহস্থ বাড়িতে। তার পর শালুর মোড়কের বাইরে এসে মন্দিরের দরজা খুলতে থাকে পরতে পরতে।

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

মণ্ডপে রাজস্থান থেকে ‘কাবড’শিল্প

লোকে বলে ‘চলতা ফিরতা মন্দির’! সত্যি এই মন্দির চলে ফিরে বেড়ায়। লাল শালুতে মুড়ে কথক ঠাকুরের কোলে চড়ে বিভিন্ন আকারের মন্দির ঘুরে বেড়ায় গ্রাম গ্রামান্তরের গৃহস্থ বাড়িতে। তার পর শালুর মোড়কের বাইরে এসে মন্দিরের দরজা খুলতে থাকে পরতে পরতে। সম্পূর্ণ খুলে গেলে যেন এক ডানা মেলা পাখি। এই ডানায় আঁকা নানা পৌরাণিক কাহিিন। একটি ময়ূরের পালক হাতে নিয়ে, পট দেখিয়ে কথক ঠাকুর গানের সুরে ছন্দে শুনিয়ে চলেন গল্প। প্রায় পাঁচ শতাধিক বছরের পুরনো এই শিল্পের নাম ‘কাবড’। (সংস্কৃত কবাট বা কপাট শব্দ থেকেই এই কাবড-এর উৎপত্তি বলে মনে করেন অনেকে) কাবড-এ গানের বিষয়বস্তু রামায়ণ, মহাভারত থেকে শুরু করে কৃষ্ণলীলার মতো পৌরাণিক নানা কাহিিন। রাজস্থানের চিতোর জেলার বাসসি গ্রামই এই শিল্পকলার জন্মস্থান। বাসায়াতি সুতাররা তৈরি করেন এই কাঠের মন্দির। তার পর তার সারা অঙ্গ জুড়ে আঁকা হয় পট। যাঁরা গান শোনান তাঁদের বলা হয় কাবডীয় ভাট।

কাবডশিল্প ক্রমে গোটা রাজস্থান এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও প্রভাব বিস্তার করেছিল এক সময়। কিন্তু আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ এই কিছুদিন আগেই কাবড শিল্পের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন সত্যনারায়ণ সুতার। এই মুহূর্তে কলকাতায় দুর্গামণ্ডপ তৈরিতে ব্যস্ত কাবড শিল্পীদের একটি দল। হাতিবাগান নবীন পল্লীর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে ৬ ইঞ্চি থেকে কুড়ি ফুট উচ্চতার নানা মাপের কাবড দিয়ে। বাসসি গ্রামের ১০ জনের শিল্পী-দল এখানে দিনরাত কাজ করে চলেছেন প্রবীণ শিল্পী দ্বারিকাপ্রসাদ জাঙ্গিরের নেতৃত্বে (সঙ্গের ছবি গোপী দে সরকার)। কালুলাল সুতার, কিষান সুতার, সুরেশ, রামকিষেন— এঁরা রয়েছেন সৃষ্টিকর্মে, আসছেন সত্যনারায়ণ সুতারও। ভাবনায় শিল্পী গোপাল পোদ্দার। পুজোর কয়দিন মণ্ডপে হাজির থাকবেন ভাট শিল্পী খোঁজা রাও এবং কালু রাও, ওঁরা কাবড হাতে নিয়ে পরিবেশন করবেন গান।

বর্ণময়

‘আমার চলচ্চিত্র সম্বন্ধে অপেক্ষাকৃত তাৎপর্যপূর্ণ প্রায় সব লেখাই অর্ধশিক্ষিত তথাকথিত সমালোচক ও পণ্ডিতদের প্রতিবাদে লেখা।’ এমন কথা বোধহয় একমাত্র চিঠিপত্রেই কবুল করেন শিল্পীরা, তাও তা কোনও শিল্পরসিকেরই কাছে। যেমন উদ্ধৃত অংশটি সত্যজিতের চিঠির, শিল্প ইতিহাসবিদ অশোককুমার দাসকে লেখা ১৮/৮/৭৮-এ। ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’র শুটিং উপলক্ষে আলাপ হওয়ার সুবাদে তখন জয়পুর মহারাজা সওয়াই মানসিংহ মিউজিয়ামে কর্মরত অশোককুমারকে যে সব চিঠি লেখেন সত্যজিৎ, এ বারের শারদীয় দেশ-এ তা সটীক প্রকাশ পেল। শুধু চিঠিপত্রই নয়, স্মৃতিকথা, জীবনীও প্রয়োজন সত্যজিতের মতো শিল্পীকে চিনতে। তেমনই এক চেষ্টা অরূপ মুখোপাধ্যায়ের সত্যজিৎ রায়/ বিশ্বজয়ী প্রতিভার বর্ণময় জীবন-এ (দীপ)। ‘তাঁর তৈরি ৩৬টি চলচ্চিত্র, যাবতীয় গল্পের বই, প্রবন্ধ সংকলন, সঙ্গীত প্রতিভা, ফিল্মের পোস্টার, প্রচ্ছদের কাজ, ক্যালিগ্র্যাফি, প্রতিকৃতি... শৈশব থেকে বাবার শিল্পীসত্তার বিকাশ, পারিবারিক কাঠামো... এ-বইতে উপস্থিত।’ ভূমিকা-য় জানিয়েছেন সন্দীপ রায়। ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় নন্দনে প্রকাশ করবেন সন্দীপ, বিভাস চক্রবর্তী ও গৌতম ঘোষের উপস্থিতিতে। দেখানো হবে ‘সুকুমার রায়’ তথ্যচিত্রটি। সঙ্গের ছবি বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে।

দুই স্রষ্টা

ছাত্র ভালই ছিলেন, কিন্তু স্কুলে ছবি আঁকায় ভাল নম্বর পেতেন না। অথচ তাঁর আঁকা কমিক্স সহজেই বিশ্ব জয় করেছে। টিনটিন কমিক্সের স্রষ্টা হার্জ (অ্যার্জে) একশো পেরিয়েছেন ২০০৭-এ। তখনই বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বিষয় কার্টুন’ পত্রিকা হার্জ ও টিনটিনকে নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। তার আগেই কার্টুনিস্ট কুট্টিকে নিয়েও প্রকাশিত হয় একটি সংখ্যা। এবার দুই মলাটে নির্বাচিত বিষয় কার্টুন প্রকাশে এগিয়ে এসেছে বুকফার্ম। প্রথমেই তারা বেছে নিয়েছে দুর্লভ এই দুটি সংখ্যা। কিন্তু শুধু পুরনো সংখ্যার পুনর্মুদ্রণ নয়, অজস্র রঙিন ও সাদাকালো নতুন ছবিতে সেজে উঠেছে বইটি। টিনটিনের গল্প, তার ছবি, কমিক্স-বিতর্ক, হার্জ স্টুডিয়ো, নানা বিচিত্র তথ্য থেকে উঠে আসে চমৎকার ছবি। আর কুট্টি? পাতাজোড়া কার্টুনেই মালুম। আছে এই ‘অনারারি বাঙালি’র আত্মজীবনীও। দুই ভিন্ন স্বাদের স্রষ্টা ও তাঁদের সৃষ্টি নিয়ে পুজোর আগে এই সংকলন মন ভরাবে।

সুচিত্রা উৎসব

আশ্বিন এসে গেলেও বর্ষা পিছু ছাড়ছে না কলকাতার, তাই আজ সুচিত্রা মিত্রের জন্মদিনে রবীন্দ্রগানের নৃত্যানুষ্ঠান ‘আজি শ্রাবণঘনগহন মোহে’। সুচিত্রার দীর্ঘ দিনের ছাত্রী এবং রবিতীর্থ ও রবীন্দ্রভারতী’র প্রাক্তনী মন্দিরা মুখোপাধ্যায় শুভ্রা সাহা তাঁদের পূরবী মিউজিক সার্কেল-এর পক্ষে দু’দিন ব্যাপী ‘সুচিত্রা মিত্র উৎসব’ আয়োজন করেছেন। আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় রবীন্দ্রসদনে সূচনা। নৃত্যানুষ্ঠানটি ছাড়াও বিভিন্ন সঙ্গীতায়নের ছাত্রছাত্রীদের গানের অর্ঘ্য। সুচিত্রা মিত্র স্মারক সম্মাননা। উপস্থিত থাকবেন বর্ষীয়ান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীরা। ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জ্ঞানমঞ্চে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে শিশুকিশোরদের গীতিনৃত্য ‘শৈশব’। সুচিত্রা মিত্রের আর এক ছাত্রী মনীষা বসুর রবীন্দ্রগানের একক অনুষ্ঠান ‘রয়েছ নয়নে নয়নে’— বৈপরীত্যের মধ্যে জীবনের বৈভব বা আলো-অন্ধকারের মধ্যে জীবনসত্যের খোঁজ। পাঠে দেবাশিস বসু। রবীন্দ্রগল্প পাঠ-অভিনয়ে মীনাক্ষী সিংহ। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রকবিতাপাঠ সংবলিত সিডি-ও প্রকাশ পাবে সে সন্ধ্যায় রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় গৌতম ঘোষ প্রমুখের উপস্থিতিতে। ২০ সেপ্টেম্বর অবনমহলে সন্ধে ৬টায়। উদ্যোগে রবি-ভৈরবী। ‘আকাশ যখন চক্ষু বোজে অন্ধকারের শোকে তখন যেমন সবাই খোঁজে সুচিত্রা মিত্রকে তেমন আবার কাটলে আঁধার সূর্য উঠলে ফের আমরা সবাই খোঁজ করি কার সুচিত্রা মিত্রের৷’ লিখেছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী৷ তাঁর স্মরণে ‘রবিতীর্থ প্রাক্তনী’-র নিবেদন একটি আলেখ্য ‘পরিপূর্ণমানন্দম’, আজ সাড়ে ছটায় আইসিসিআর-এ৷ গাইবেন প্রমিতা মল্লিক ও অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গে ‘রবিতীর্থ প্রাক্তনী’র সদস্যরা৷

বিষয় নকশা

নকশা বৃহত্তর অর্থে যে কোনও শিল্পরীতিরই অঙ্গাঙ্গি। সব দেশে, সব কালে। তবে একথাও ঠিক যে কালে কালে নকশার ভাবনায় পরিবর্তন ঘটেছে। আজকের ‘ডিজাইনার’রা পেশাদারি দক্ষতায় যে ভাবে বিশেষ বিশেষ চাহিদা মেটান, অতীতে পরম্পরাগত শিল্পধারার প্রয়োজন থেকে তা অনেকটাই আলাদা। এ ভাবেই ‘আর্ট ইস্ট’ পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যার কেন্দ্রীয় বিষয় ‘নকশা’কে ব্যাখ্যা করেছেন সম্পাদক যোগেন চৌধুরী। পরিব্যাপ্ত শিল্পবৈচিত্রের নানা ধারাকে ছুঁয়ে গিয়েছে এ বারের সংখ্যার লেখাগুলি, স্থাপত্য থেকে লোকশিল্প, গ্রাফিক ডিজাইন থেকে ফ্যাশন, বস্ত্রশিল্প থেকে সেরামিক্স, ধরা পড়েছে অনেক কিছুই। আছে সুমুদ্রিত বহু ছবি এবং নিয়মিত বিভাগ। আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায়, অ্যাবভ, (অ্যাক্রোপলিস)।

আন্তর্জাতিক

এখনও নন্দনে প্রতি রোববার সকালে আন্তর্জাতিক ছবির আসর। স্বর্ণযুগের সিনেমা ফিরে দেখার নস্টালজিয়া। হলিউড ক্লাসিকস-এর পর এ বার তামাম দুনিয়ার সেরা পরিচালকদের ছবি নিয়ে ‘দ্য মাস্টার্স অব ওয়ার্ল্ড সিনেমা’। সেপ্টেম্বর জুড়ে শুধুই কুরোসাওয়া, তাঁর রশোমন, ইকিরু, সেভেন সামুরাই-এর পর ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় ‘রেড বিয়ার্ড’। এনলাইটেন ফিল্মস-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নন্দন। সেখানেই আজ সন্ধেয় ভবানীপুর ফিল্ম সোসাইটি-র আয়োজনে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসব, ২৭ সেপ্টেম্বর অবধি।

মাইরাম

মায়ের কাছেই তাঁর স্বদেশপ্রেমের দীক্ষা। তিনি বাংলা তথা ভারতের বিশিষ্ট শ্রমিকনেত্রী ও ‘শ্রমিক’ পত্রিকার সম্পাদক। বাবার কর্মস্থল মায়ানমারে প্রথাগত শিক্ষা শেষ করে সন্তোষকুমারী দেবী (১৮৯৭-১৯৮৯) স্কুলে পড়ানোর চাকরি নেন এবং ভারতীয় কংগ্রেেসর বর্মা শাখায় যোগ দেন। পরে দেশবন্ধুর ডাকে কলকাতায় এসে অসহযোগ, খিলাফত, শ্রমিক আন্দোলন ও নারীর শিক্ষা ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নেন। তিনি বাংলার চট শ্রমিকদের সংগঠিত করার প্রথম যুগে অসমসাহসী নেত্রী। শ্রমিকরা ভালবেসে তাঁকে ‘মাইরাম’ বলে সম্বোধন করতেন। এ বার তাঁরই নামাঙ্কিত ‘স্মারক বক্তৃতা ২০১৬’ শরৎ স্মৃতি সদনে, ২৪ সেপ্টেম্বর, ৩-৮টা, আয়োজন করেছে নাগরিক মঞ্চ। শ্রমিক আন্দোলনে নারী নেতৃত্ব/আইন-অধিকার-সংগ্রাম বিষয়ে বলবেন সংগঠিত-অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত নারী নেতৃত্ব। প্রকাশিত হবে সন্তোষকুমারী দেবীর রচনা ও তাঁর কর্মজীবন সংবলিত একটি পুস্তিকাও।

চিঠির দর্পণে

রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের জীবন নিয়ে যতটুকু লিখেছেন তাতে তাঁর মতো অসামান্য মানুষ অনেকটাই আঁটেন না। অতএব কবির জীবনচরিত খুঁজতে আর যা দেখা দরকার, সে সবের মধ্যে পড়ে তাঁর অজস্র চিঠি। বলাকা-র (সম্পা: ধনঞ্জয় ঘোষাল) এ বারের সংখ্যা ‘রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র/ আলোচনার আলোকে’ অনেকটা সে অভিপ্রায় থেকেই, ‘পরিপূর্ণ জীবন... অনুসন্ধানের জন্য একমাত্র আকর তাঁর লিখিত বিপুল আয়তনের চিঠির ভাণ্ডার।’ জানিয়েছেন সম্পাদক। চিঠিপত্রের অনুষঙ্গে ব্যক্তিগত থেকে সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে কবির ভাবনার রূপরেখা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।

মাতৃরূপেণ

বিশ্বকর্মা বিদায় লইবার পর এক্ষণে কুমোরটুলিতে নির্মিত হইতেছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অজস্র স্মারক। বড় ঘরগুলি আর কোনও বায়না লইতেছে না। গত বৎসরের তুলনায় মূল্য বাড়িয়াছে সব কিছুরই, অনেক ক্ষেত্রেই তাহা প্রায় দ্বিগুণ। অন্যান্য বৎসরের তুলনায় এই বার কুলিদের ভিড় কম। যাহারা আছে, তাহারা মূলত বড় বড় স্টুডিয়োর সহিত জড়িত। এক্ষণে বলিয়া লওয়া যাক, যেখানে মাতৃমূর্তি তৈয়ার হইতেছে, সেই স্থানটিকে বলা হইয়া থাকে স্টুডিয়ো। এ বৎসর রঙ ও তারের মুকুট এবং গহনার চাহিদা বাড়িয়াছে, কেননা এই অতি-বৃষ্টির দরুন শোলার কাজ নষ্ট হইবার আশু সম্ভাবনা আছে। যদি বা মাতৃমূর্তি অলংকারবিহীন মণ্ডপে গিয়া ওঠে, তবে আবার এক জন কাহাকেও পাঠাইতে হইবে অলংকার পরাইতে। অতএব, রঙ-তার-ই ভাল। তবে এ বৎসর কেহ কেহ মাতৃমূর্তির পরিধেয় বস্ত্র ও অলংকার মৃত্তিকার দ্বারাই নির্মাণ করিতেছেন। ইহা আমাদের সুপ্রাচীন রীতি। ইহা পুনরাবৃত্ত হইলে ভালই হইবে। ইহার কারণেই তো কুমোরটুলি জগৎখ্যাত।

চেতনাদীপ্ত

আমি ওর মতো বুদ্ধিমান ব্যক্তি দেখিনি’, গিরিশচন্দ্র ঘোষ সম্পর্কে শ্রীরামকৃষ্ণের মন্তব্যটি মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন স্বামী চেতনানন্দ। ক’দিনের জন্যে কলকাতায় এসেছেন, দীর্ঘ কাল তিনি আমেরিকায়, সেখানকার বেদান্ত সোসাইটি অব সেন্ট লুইস কেন্দ্রের অধ্যক্ষ। সৌম্যকান্তি, চেতনাদীপ্ত, অশীতিপর মানুষটিকে বয়স স্পর্শ করতে পারেনি, বিদ্যুৎপ্রভ তাঁর বাগ্মিতা। গিরিশচন্দ্র ঘোষ/ আ বোহেমিয়ান ডিভোটি অব শ্রীরামকৃষ্ণ (অদ্বৈত আশ্রম), তাঁর রচিত এ-বইয়ের মুখবন্ধে স্বামীজি জানিয়েছেন, গিরিশচন্দ্রের জীবনকে ঘিরে যে ‘মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিংস’, তা থেকে তিনি সকলকে মুক্ত করতে চান। ‘রামকৃষ্ণ-অনুগামীদের মধ্যে প্রতিভাবান এই মানুষটির কল্পনা ও সৃজনের ক্ষমতা ছিল দানবীয়। সে সময়কার সমাজঅচ্ছুৎ অভিনেত্রীদের গডফাদার ছিলেন গিরিশচন্দ্র। অথচ অবহেলিত। তাই তাঁকে নিয়ে লেখার দায় তুলে নিয়েছি।’ স্বামীজি ‘আমার গিরিশ-অনুধ্যান’ বিষয়ে বলবেন শ্রীঅরবিন্দ ভবনে ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায়। তাঁর রামকৃষ্ণ ও শিল্পের নবজাগরণ বইটিও প্রকাশ পাবে সে সন্ধ্যায়, উদ্যোগে সূত্রধর। রামকৃষ্ণ-সারদা মা-বিবেকানন্দকে নিয়ে যুগপৎ ইংরেজি ও বাংলায় একের পর এক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে চলেছেন স্বামীজি, তাঁর লেখার ভাষা স্বচ্ছতোয়া নদীর মতো। ‘বঙ্কিমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্র পড়ে তো শিখেইছি, শিখেছি রাজশেখর বসুর থেকেও— ওঁর কল্পনাশক্তি ও ভাষা আমাকে প্রাণিত করেছে। আমি এখনও ছাত্র, শিখেই চলেছি, সব সময়।’ জানালেন স্বামীজি।

শতবর্ষ

তাঁর শ্রেষ্ঠ পরিচয় বিদ্যাবংশে। বালানন্দ সংস্কৃত কলেজ, গদাধর আশ্রম, নবদ্বীপ সংস্কৃত কলেজ, কলকাতা সংস্কৃত কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে বিমলকৃষ্ণ মতিলাল থেকে দীননাথ ত্রিপাঠী, যশোদাদুলাল তর্কতীর্থ, শ্যামাপদ তর্কতীর্থ ও অরিন্দম চক্রবর্তী তাঁর সৃষ্ট বিদ্যাবংশের অন্যতম সদস্য। বিশ্ববন্ধু ভট্টাচার্যর (১৯১৬-২০০৬) জন্ম ঢাকা বিক্রমপুরের টোলবাসাইল গ্রামে এক স্মার্ত পণ্ডিতবংশে। অনাথবন্ধু স্মৃতিবাচস্পতি ও সৌদামিনী দেবীর পুত্র বিশ্ববন্ধু বিদ্যালাভের আশায় ঢাকা ছেড়ে চলে এসেছিলেন তৎকালীন পূর্ব দিনাজপুরে। এখানে জেঠতুতো দাদা অমর সাংখ্যতীর্থের কাছে সংস্কৃত ব্যাকরণের পাঠ নেন। তিরিশের দশকের গো়ড়ায় নৈয়ায়িক অনন্তকুমার তর্কতীর্থের তত্ত্বাবধানে প্রথমে রামকৃষ্ণ বেদবিদ্যালয় (গদাধর আশ্রম) এবং পরে দেওঘরের বালানন্দ আশ্রমকে গুরুগৃহ মনে করে প্রাচীন ন্যায়, নব্য ন্যায় তথা বেদান্তের পাঠ গ্রহণ করেন। অধ্যাপনা, গবেষণা ও গ্রন্থ সম্পাদনায় আজীবন মগ্ন ছিলেন। তিনি সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় ন্যায়শাস্ত্র বিষয়ে বহু পুস্তক ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। প্রামাণ্যবাদ, অনুমানচিন্তামণির মতো গ্রন্থের টীকা ও ভাষ্য লেখেন। ভারতীয় দর্শন পরিষদের (আইসিপিআর) সম্মানিত ফেলো ছিলেন। আদ্যন্ত গুরুকুল পরম্পরায় শিক্ষিত হয়েও নিজ আগ্রহে পাশ্চাত্য জ্ঞানতত্ত্বের সমস্যাকে ভারতীয় বর্গে বিচার করতেও কুণ্ঠিত ছিলেন না। তাঁর রচিত সমবায় লক্ষ্মণ বিচার, স্বরূপ সম্বন্ধ, ন্যায়মতে কতিপয় পদ ও তদ্‌বাচ্য গ্রন্থগুলি ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রের অমূল্য সম্পদ। সম্প্রতি তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে সেন্টার অব অ্যাডভান্সড স্টাডি এক দিনের আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE