Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: নব্বই ছুঁয়েও সৃষ্টিশীল

সঙ্গে পান খালেদ চৌধুরী, তাপস সেন, প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র, উৎপল দত্ত, ভি বালসারার মতো মানুষকে। শুরু হয় নতুন পুতুল নাটকের কাজ যার মধ্যে উল্লেখ্য আলাদীন, রামায়ণ, মা, ছোটদের জন্য ইচ্ছাপূরণ, দত্যি দানা, কালো হীরে, আজব দেশ। বেশ কিছু পুতুল নাটক একাধিক বার ঘুরে এসেছে নানা দেশ।

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০০:৩২
Share: Save:

জন্ম ফরিদপুরে, ১৯৩০ সালে। সুরেশ দত্ত (সঙ্গের ছবি)দেশভাগের সময় ভাইবোনেদের নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। শুরুর দিনগুলো কাটিয়েছিলেন উদয়শঙ্করের কাছে নাচ, তারাপদ চক্রবর্তীর কাছে খেয়ালের তালিম নিয়ে। উদ্বাস্তু জীবনসংগ্রামের ইতি ঘটে সিএলটি-র সমর চৌধুরীর সংস্পর্শে এসে। তাঁরই উৎসাহে তৈরি করেন অবন পটুয়া, মিঠু, ডিডো। রাশিয়ায় তালিম নিয়ে দেশে ফিরে নিজের পুতুল নাচের দল তৈরি করেন ‘কলকাতা পাপেট থিয়েটার’। সঙ্গে পান খালেদ চৌধুরী, তাপস সেন, প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র, উৎপল দত্ত, ভি বালসারার মতো মানুষকে। শুরু হয় নতুন পুতুল নাটকের কাজ যার মধ্যে উল্লেখ্য আলাদীন, রামায়ণ, মা, ছোটদের জন্য ইচ্ছাপূরণ, দত্যি দানা, কালো হীরে, আজব দেশ। বেশ কিছু পুতুল নাটক একাধিক বার ঘুরে এসেছে নানা দেশ। পুতুল নাচের পাশাপাশি নাটকের মঞ্চ তৈরির প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। উৎপল দত্তের নাটক কল্লোল-এর সেট তৈরি করেন, সাড়া পড়ে যায় নাট্য জগতে। তারপর টিনের তলোয়ার, এন্টনি কবিয়াল, নাম জীবন, পান্নাবাঈ, মাধব মালঞ্চী কইন্যা, নৈশ ভোজ-এর মতো নাটকের মঞ্চ নির্মাণ তাঁর হাতে। আবার কলামন্দির থেকে জ্ঞান মঞ্চ, উত্তম মঞ্চ থেকে শরৎ সদন— কলকাতার বহু স্থায়ী মঞ্চ নির্মাণের পিছনে রয়েছে তাঁর ভাবনা ও উৎসাহ। পেয়েছেন পদ্মশ্রী ও সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার। শহরের সব নাট্যপ্রেমী মানুষই জানেন, কসবা বিজন সেতুর নিচে কলকাতা পাপেট থিয়েটারই তাঁর সারা দিনের ঠিকানা। নব্বই ছুঁই ছুঁই সুরেশ দত্তের নতুন পুতুল নাটক ‘বিষাক্ত বিশ্ব’ মঞ্চস্থ হতে চলেছে যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমি মঞ্চে, ২৩ মার্চ। এ দিকে ২১ মার্চ ‘ওয়ার্ল্ড পাপেট্রি ডে’ উপলক্ষে তিন দিন ব্যাপী পুতুল নাট্য উৎসব করছে কলকাতার ‘ডলস থিয়েটার’, যার কর্ণধার সুদীপ গুপ্তের পুতুলনাচে হাতেখড়ি সুরেশবাবুর কাছেই। ২০ মার্চ সন্ধেয় শিশির মঞ্চে ‘সূত্রধার সম্মান’ প্রদান করা হবে ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচের পুতুল ও দৃশ্যপট নির্মাতা নদিয়ার জগবন্ধু সিংহ ও কলকাতার ‘পুতুল গোষ্ঠী’র প্রধান, পেশায় চিকিৎসক শান্তিরঞ্জন পালকে। ২২-২৩ মার্চ উৎসব মধুসূদন মঞ্চে।

সহাস্য

বৃষ্টিভেজা এক বিকেলের চা-পর্বে খাওয়ার টেবিলে এসে বসেছিলেন মৃণাল সেন, ক্যামেরা নিয়ে তাঁর মুখোমুখি হয়ে সুজিত সরকার বললেন ‘‘প্লিজ একটু হাসুন।’’ (সঙ্গের ছবি) এই অনাবিল হাসিমুখখানি নিয়ে মৃণাল সেন জীবন্ত হয়ে ফুটে রইলেন সুজিতের ফ্রেমে... গত জুলাইয়ের ঘটনা, ডিসেম্বরেই চলে গেলেন তিনি। ‘‘ওঁর ওই হাসিমুখটাই ছিল আমার ক্যালেন্ডারের থিম।’’— সুজিত এ ভাবেই কলকাতার কর্মময় বিখ্যাত চলচ্চিত্রকারদের সহাস্য প্রতিকৃতি তুলে তাঁর ‘ওড টু বেঙ্গলি সিনেমা’ ক্যালেন্ডারটি সাজিয়েছেন। প্রথমে মৃণাল... পর পর আছেন তরুণ মজুমদার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত গৌতম ঘোষ অপর্ণা সেন সন্দীপ রায়। নিউ ইয়র্কের ফ্যাশন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে কমার্শিয়াল ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক ডিজ়াইন শিখে সেখানে কাজ করার পর ফের নিজের শহরে ফিরে কাজে ব্যস্ত সুজিত, ‘‘আমার শহরটাকে নিয়েই নতুন কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’

তর্কপ্রিয়

কোনও আলোচনাসভায় তিনি ঢুকলেই সবার নজর চলে যেত তাঁর দিকে। বিষয় যাই হোক, আলোচনার মাঝে-মধ্যে তাঁর কিছু না কিছু মন্তব্য থাকবেই। তথ্যপূর্ণ সে সব মন্তব্য কখনও কখনও কৌতুক-মেশা রসিক টিপ্পনিও হয়ে উঠত। আবার তাঁর নিজের বক্তব্যের সূচনায় বা শেষে ঝুমুর গান গাওয়াও নিয়ম করে ফেলেছিলেন পশুপতিপ্রসাদ মাহাতো। পুরুলিয়ার গ্রামীণ চৌহদ্দিতে বেড়ে ওঠা মানুষটির কাছে বড়ই আপন ছিল এই সুর-সঙ্গ। মানভূমি কৃষ্টি নিয়ে গর্বের ঝলক দেখা যেত সর্বক্ষণ। নৃতত্ত্বে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসূত্রে অ্যানথ্রপলজিক্যাল সার্ভের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জনজাতীয় সংস্কৃতির চর্চায় মন দেন। প্রকাশিত হয়েছে নৃতত্ত্বের বিষয়বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে তাঁর লেখা একাধিক বই ও প্রবন্ধ। যুক্ত ছিলেন সরকারি ও অসরকারি নানা সংস্থার সঙ্গে। মজলিশি, তর্কপ্রিয় মানুষটি সম্প্রতি ৭৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন।

যথাস্থানে

কলকাতা ছেড়ে স্থায়ী ভাবে কেরলে ফিরে যাওয়ার আগে নিজের সাম্প্রতিক সংগ্রহের বইপত্র টাউন হলের কলকাতা সংগ্রহশালায় দান করে যাবেন বলেই ঠিক করেছিলেন কলকাতা-গবেষক পি টি নায়ার। তাঁর মূল সংগ্রহটি কলকাতা পুরসভা এর আগে সংগ্রহ করে সংগ্রহশালার গ্রন্থাগারের সূচনা করেছিল। গত নভেম্বরেই তিনি পুরসভাকে তাঁর ইচ্ছের কথা জানান, পুরসভাও সম্মত হয়। নায়ার ফিরে যাওয়ার পর বইগুলির তালিকা তৈরি করে দেন গবেষক ডালিয়া রায়, এ বার সেগুলি গ্রন্থাগারে ঠাঁই পেল। বইয়ের সংখ্যা ১৪৬০, পত্রিকা ৩২৩টি। বেশ কিছু দুর্লভ বই আছে এই সংগ্রহে।

ফিরে এল

ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে ভারতীয় কমিক্‌সের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছিল। ১৯৬৭ সালে বিদেশি কাহিনি নিয়ে ‘অমর চিত্রকথা’র দশটি বই প্রকাশিত হয়, আর ১৯৬৯ থেকে শুরু হয় ভারতীয় গল্পের চিত্ররূপায়ণ। প্রথম বই ‘কৃষ্ণ’। আজ পর্যন্ত বেরিয়েছে সাড়ে চারশোরও বেশি বই। ইংরেজি ও বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় এই সিরিজ় কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। বাংলা ‘অমর চিত্রকথা’ও প্রথম প্রকাশিত হয় ’৬৭তেই, বেরিয়েছে অন্তত ২২৫টি বই। অনেক দিন পর আধুনিক প্রযুক্তিতে পুরনো রং ও ‘স্পিচ বেলুন’-এ হাতের লেখা বজায় রেখেই সাতটি বাংলা বই ফিরে এল ঝকঝকে সংস্করণে, তার মধ্যে আছে কলকাতার শিল্পী সৌরেন রায় চিত্রিত ‘জগদীশচন্দ্র বসু’ ও ‘শ্রীরামকৃষ্ণ’। গত শনিবার লেক মলের পাশে ‘রিডবেঙ্গলি বুকস্টোর’-এ বইগুলি উদ্বোধন করলেন শিল্পী দেবাশীষ দেব।

নিবেদিতা স্মরণে

তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ অতিক্রান্ত, কিন্তু ভগিনী নিবেদিতাকে (১৮৬৭-১৯১১) নিয়ে চর্চার নিত্যনতুন অভিমুখ আবিষ্কৃত হচ্ছে আজও। মাত্র বছর তেরোর ভারতবাসে তিনি যেমন হয়ে উঠেছিলেন ভারতাত্মা, এই দেশও তেমনই তাঁর আয়নায় চিনতে পেরেছিল নিজের বিজ্ঞান-শিল্প-জাতীয়তা-অধ্যাত্ম সম্পদকে। গত দু’বছরে নিবেদিতাকে নিয়ে বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, এ বার বাগবাজারের সিস্টার নিবেদিতা গার্লস স্কুল প্রকাশ করল ‘ভগিনী নিবেদিতা জন্মসার্ধশতবর্ষ স্মরণিকা’। বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে ষাটেরও বেশি প্রবন্ধ, কবিতা ও ছবিতে নিবেদিতার বহুশাখ ব্যক্তিত্বকে ধরবার প্রয়াস। লেখক-তালিকায় সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ মঠ-মিশনের মাতাজি ও সন্ন্যাসীরা ছাড়াও আছেন বহু বিশিষ্ট জন। কয়েকটি লেখা নিবেদিতার জন্মশতবর্ষ-সহ অন্যান্য উপলক্ষে লিখিত, তবু ২০১৯-এ ফিরে দেখতে মন্দ লাগে না।

চিরনবীন

‘‘এই কটা দিন গেয়ে যেতে দাও, শুধু গান প্রাণ ভরে।’’ যত দিন বেঁচেছেন, প্রাণ ভরেই গেয়েছেন আর মন ভরিয়েছেন অগণন শ্রোতার। বাংলা আধুনিক গানের দুনিয়ায় অখিলবন্ধু ঘোষের (১৯২০-৮৮) গাওয়া সেই সব গান কথা, সুর এবং কণ্ঠমাধুর্যে চির নবীন। তাঁর জন্মশতবর্ষের সূচনায় ২০ মার্চ সন্ধে ৬টায় আশুতোষ কলেজ হল-এ অখিলবন্ধু স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে তাঁর গাওয়া গানগুলি শোনাবেন তাঁরই ছাত্রছাত্রী ও গুণমুগ্ধরা। থাকবে স্মৃতিচারণও।

শহরে অরণ্য

বন্যেরা শুধু বনেই সুন্দর নয়, আলোকচিত্রেও তারা সমান উজ্জ্বল। কোথাও বাঘ চলেছে শিকারের সন্ধানে, কোথাও বা ক্লান্ত সিংহ উন্মুক্ত জঙ্গলে অলস হাই তুলছে। কোথাও জলকেলিতে ব্যস্ত ঐরাবত তো কোথাও চঞ্চল হরিণের ভিতু চোখ! কোথাও চিতার চিৎকার, হায়নার হাসি, কোথাও বা কুমিরের কারসাজি— এক কথায় আস্ত এক-একটা জঙ্গল উঠে এসেছে এই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। এক দিকে, গুজরাত, উত্তর-পূর্ব এবং মধ্য ভারতের বিভিন্ন জাতীয় উদ্যানে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী, শিলাদিত্য চৌধুরী ও ধীমান ঘোষের তোলা এ রকম ৬০টি ছবি নিয়েই ‘উডস অ্যাওয়ে’র চতুর্থ বর্ষের প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ১৮ মার্চ, আইটিসি সোনার-এর আর্ট গ্যালারিতে। চলবে ২০ মার্চ, বিকেল ২-৮টা পর্যন্ত। অন্য দিকে, এ দিনই অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সেন্ট্রাল হল-এ ‘লেন্স অব সেন্স’ শীর্ষকে আলোকচিত্রী অজয় দে-র তোলা দেশ তো বটেই, কেনিয়া, তানজ়ানিয়ার ৫০টি বন্যপ্রাণীর ছবি নিয়ে একক প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছে। চলবে ২৪ মার্চ, বিকেল ৩-৮টা পর্যন্ত। সঙ্গে তারই একটি ছবি।

ইতিহাস ভাবনা

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদারের (১৮৮৮-১৯৮০) পিএইচ ডি থিসিস কর্পোরেট লাইফ ইন এনশিয়েন্ট ইন্ডিয়া নামে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় ঠিক একশো বছর আগে, ১৯১৯ সালে। এটিই তাঁর প্রথম বই। ভারতের ইতিহাসের প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক— তিনটি পর্ব নিয়েই যেমন তিনি সামগ্রিক কাজ করেছেন, তেমনই বাংলার ইতিহাসেরও তিনটি পর্বে তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। জীবনের স্মৃতিদীপে তাঁর পূর্ণাঙ্গ জীবনকাহিনি না হলেও ঘটনাবহুল জীবনের অমূল্য স্মৃতিচারণ। চার দশক পরে পারুল থেকে এটি পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। সেই উপলক্ষে ২২ মার্চ বিকেল ৫টায় যদুনাথ ভবনে রণবীর চক্রবর্তী আলোচনা করবেন রমেশচন্দ্রের ভাবনায় ভারত-ইতিহাস প্রসঙ্গে। থাকবেন সুচন্দ্রা ঘোষ। সেন্টারে অর্পিত রমেশচন্দ্রের সংগ্রহ বিষয়ে আলোকপাত করবেন রাজর্ষি ঘোষ।

হিমালয়প্রেমী

অর্থাভাবে মাঝপথে ডাক্তারি পড়া বন্ধ করে দিতে হয়। জীবনের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে সাধুসঙ্গ আর ভ্রমণই তাঁকে শান্তি দিয়েছিল। তাই রেলের চাকরিই বেছে নেন বীরেন্দ্রনাথ সরকার। ভ্রমণসাহিত্য নিয়ে পড়াশোনাও চলতে থাকে। টানতে থাকে হিমালয়। ১৯৫৯ সালে গাড়োয়াল হিমালয়ের লোকপাল দিয়ে শুরু। ১৯৬০-এ রূপকুণ্ড। রমাপদ চৌধুরীর উৎসাহে আনন্দবাজার রবিবাসরীয়তে লেখেন সেই কাহিনি, পরে তা ‘রহস্যময় রূপকুণ্ড’ নামে প্রকাশিত হয়। পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জে জন্মানো এই মানুষটি এর পরে দার্জিলিঙের ‘হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট’ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। তিরশূলী, শতোপন্থ, কেদারনাথ, কেদার ডোমের মতো বেশ কয়েকটি অভিযানে গিয়েছিলেন। তবে শৃঙ্গে চড়া নয়, হিমালয়কে খুঁটিয়ে দেখাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। শঙ্কু মহারাজ-সহ কয়েক জনকে নিয়ে ‘গঙ্গোত্রী গ্লেসিয়ার এক্সপ্লোরেশন কমিটি’ গড়ে তোলেন। ওই উচ্চতায় প্রাণী, উদ্ভিদ, ফুল নিয়ে গবেষণাও করেছিলেন। ‘হিমালয়ের ফুল’, ‘ঈশ্বরের উদ্যানে’, ‘গঙ্গার কথা’ নামে একাধিক বইয়ে তা ধরা আছে। গত ২৯ ডিসেম্বর ৮৯ বছর বয়সে চলে গেলেন। ছবি ড্রিম ওয়ান্ডারলুস্ট-এর সৌজন্যে।

বিবেক

সত্তর দশকে জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলনকে ছবিতে ধরে আনন্দ পটবর্ধনের চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। ‘রাম কে নাম’-এ তিনি দেখান রামমন্দির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির স্বরূপ। ‘ফাদার, সন, অ্যান্ড হোলি ওয়ার’, ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’, ‘জয় ভীম কমরেড’-এর মতো ছবিতে আনন্দ এই হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থানকে ধরেছেন। তাঁর নতুন পূর্ণ দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র ‘বিবেক’ (‘রিজ়ন’)-এ তিনি সাম্প্রতিকের প্রেক্ষিতে মৌলবাদী রাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেছেন। ছবিতে এসেছে গৌরী লঙ্কেশ প্রমুখের হত্যাকাণ্ড, সনাতন সংস্থার মতো সংগঠনের কার্যকলাপ, দলিত ও মুসলিমদের ওপর আক্রমণ, গো-রক্ষার নামে অত্যাচার-সহ নানা প্রসঙ্গ। সম্প্রতি এটি আমস্টারডাম উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছে। পিপল্‌স ফিল্ম কালেক্টিভের আয়োজনে যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমিতে ২৪ মার্চ বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে ‘ওয়ার্ক-ইন-প্রোগ্রেস প্রিভিউ স্ক্রিনিং’ হিসেবে ছবিটি দেখানো হবে। পরে আলোচনায় থাকবেন পরিচালক স্বয়ং।

পটচিত্রী

তিনি দুর্দান্ত ছবি আঁকেন, সুরও সাধেন! পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়াগ্রামের পুতুল কারিগর বাবা-মায়ের কোলে বসে সেই পুতুল খেলার বয়স থেকেই কল্পনার মাটির পুতুল ও পটচিত্রে হাতেখড়ি। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর ব্লকের হবিচক গ্রামে চলে আসেন। এখানে এসে তাঁর পটচিত্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর তো হলই, পটু হলেন পটের গানেও। মূলত স্বামী নুরুদ্দিন চিত্রকর ও শ্বশুর-শাশুড়ির অনুপ্রেরণায় বিয়াল্লিশ বছর বয়সি তিন সন্তানের জননী কল্পনা সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম সেরে অবসরে পটচিত্রে মনোনিবেশ করেন। তিনি তাঁর পটচিত্রকে মনের মাধুরী মিশিয়ে ভেষজ রঙে রাঙিয়ে জীবন্ত করে তোলেন। সম্প্রতি তাঁর আঁকা আদিবাসীদের জীবনকাহিনির পটচিত্র জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। দেশে বিদেশে আদৃত হয়েছে তাঁর কাজ। তিনি বলছিলেন, ‘‘শিল্পে যে এত জোর আছে, আগে জানতাম না।’’ শুধু আদিবাসীদের জীবনকাহিনিই নয়, তাঁর রং তুলিতে উঠে এসেছে রামায়ণ, মনসামঙ্গল, দেবী দুর্গা, মনসা ও নানান সামাজিক কাহিনির ছবি। উঠে এসেছে পোশাক পরিচ্ছদ, ছাতা, হাতপাখা, ফুলদানি, শীতলপাটির অমসৃণ শরীরেও। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ভাষাদিবস ও নারী দিবস উপলক্ষে কলকাতার কয়েকটি সংস্থা এই শিল্পীকে জানাল কুর্নিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

কড়চা কলকাতা Kolkata Korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE