Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

রাসমণির বাড়িতে অবৈধ নির্মাণ ভাঙল পুরসভা

যাঁদের হাতে বেআইনি নির্মাণ রোখার দায়িত্ব, তাঁদের কাছে এ নিয়ে উত্তর নেই।

এই বাড়ির ছাদেই তৈরি হয়েছিল অবৈধ টিনের ছাউনি। —নিজস্ব চিত্র।

এই বাড়ির ছাদেই তৈরি হয়েছিল অবৈধ টিনের ছাউনি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০০:১৭
Share: Save:

এক দিকে বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে জেরবার পুর প্রশাসন। একের পর এক বাড়ি, বাজার ভেঙে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তার সঙ্গে এ বার যুক্ত হল হেরিটেজ বাড়িতে বেআইনি নির্মাণ! ওই বাড়ি আবার যে সে ব্যক্তির নয়। খোদ রানি রাসমণির। যাঁদের হাতে বেআইনি নির্মাণ রোখার দায়িত্ব, তাঁদের কাছে এ নিয়ে উত্তর নেই।

কলকাতা পুরসভা লাগোয়া জানবাজারে ১৩এ এবং ১৩বি রানি রাসমণি রোডে ওই বাড়িটির দালানের কাঠামো-স্থাপত্য দেখলেই বোঝা যাবে, সেটি এখনও বহন করছে ইতিহাসের স্মৃতি। ওই বাড়িরই ছাদে লোহার কাঠামো দিয়ে তৈরি হয়েছিল টিনের ছাউনি। পুরসভার বিল্ডিং দফতরের ডিজি (২) দেবাশিস চক্রবর্তী জানান, সোমবার দুপুরে পুরসভার দল গিয়ে ওই ছাউনি ভেঙে দিয়েছে।

কিন্তু পুরসভার নজর এড়িয়ে গ্রেড ওয়ান শ্রেণির ওই হেরিটেজ বাড়িতে ছাউনি তৈরি হল কী ভাবে? তা-ও আবার পুর ভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে? বিল্ডিং দফতরের কেউ কোনও উত্তর দিতে পারেননি। তবে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘যে কাঠামো ভাঙা হয়েছে, তা খুব বড় নয়। সেটি গড়তেও বেশি সময় লাগে না। বিষয়টি জানতে পেরেই ভাঙা হয়েছে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, ওই বাড়িতে শরিকি দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাঁদের মনোমালিন্যে সমস্যা আরও বেড়েছে। ওই বাসিন্দারা নিজেদের মতো করে কাঠামো বানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা আগেও করেছেন। তখনও সেই কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।

তবে হেরিটেজ বাড়িতে বেআইনি নির্মাণের বিষয়টি সামনে আসার পরে মেয়র জানিয়েছেন, শহর জুড়ে নজরদারি আরও বাড়াতে চান তাঁরা। সজাগ থাকতে বলা হয়েছে পুলিশকেও। এক পুর ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘আসলে মানবিক দিকটিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে দায়িত্ব থেকে অনেক সময়েই সরে যেতে হচ্ছে।’’ তার ফলেই বিভিন্ন বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়া থেকে শুরু করে বেড়ে চলেছে বেআইনি নির্মাণের কারবার।

তা হলে সমাধান কী? বিল্ডিং দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুর আইনের ৪১১(৪) ধারায় পুর প্রশাসনকে বিপজ্জনক বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের তুলে বাড়ি ভাঙার ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু সেই বাড়ির বাসিন্দারা কোথায় যাবেন, শুধুমাত্র সে কথা ভেবে ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় না।’’

তা হলে কি বাড়ি ভেঙে দুর্ঘটনা দেখে যেতে হবে? ওই কর্তার কথায়, ‘‘পুর প্রশাসনের নীতি-নির্ধারকেরা এ নিয়ে নির্দেশ না দিলে অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ারদের কিছু করার নেই।’’ মেয়র অবশ্য ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, পুর আইনে যোগ হওয়া নতুন ধারা (৪১২এ) প্রয়োগ করে বিপজ্জনক বাড়ির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কাজ চলছে। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন কাঠামো গড়ার জন্য জন্য ৫৪টি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে শুনানি হয়ে গিয়েছে ১৫টি আবেদনের। দু’টি বাড়ির নতুন নকশা অনুমোদন করা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, শহরে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। পুর আইনে ৪১২এ ধারা চালু হয়েছে গত বছরের এপ্রিলে। বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র ৫৪টি আবেদন জমা পড়ল কেন? পুর প্রশাসনই বা কেন এ ব্যাপারে আরও দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে না? পুরসভার এক অফিসারের ব্যাখ্যা, নতুন আইন প্রয়োগে অনেক শর্ত রয়েছে। মূল সমস্যা বাড়িতে ভাড়াটে থাকলে। দেরি সে কারণেই। আর এই যুক্তির ফাঁক গলে এক বছরে আরও কয়েকটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE