Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মোমবাতি মিছিল এক দিনের, আতঙ্ক বছরভর

ঘড়ি কাঁটায় দুপুর ১২টা ২০ মিনিট। দোকান ছেড়ে উঠে ভাঙা উড়ালপুলের সামনে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন কিছু ক্ষণ। মিনিটখানেক পরে মুখ নামিয়ে দোকানে ফিরে গিয়ে বললেন, ‘‘দিনটা ভুলে যাওয়ার নয়।

স্মৃতিটুকু: পোস্তা উড়ালপুল বিপর্যয়ে মৃতদের মনে রেখে। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

স্মৃতিটুকু: পোস্তা উড়ালপুল বিপর্যয়ে মৃতদের মনে রেখে। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৩৮
Share: Save:

সকাল সকাল গণেশ টকিজ মোড়ে এক মন্দির লাগোয়া ফুটপাতে ধূপকাঠির দোকান খুলে বসেছেন বিকাশ মালি। আদতে তিনি সেচ দফতরের কর্মী। বছর দু’য়েক আগে ওই দোকানে বসেই পোস্তা উড়ালপুলের নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর বাবা, গুলাব মালির। জানালেন, বাবার জন্যই শনি-রবিবার অফিস ছুটির দিনে ধূপকাঠির দোকানে বসেন তিনি।

ঘড়ি কাঁটায় দুপুর ১২টা ২০ মিনিট। দোকান ছেড়ে উঠে ভাঙা উড়ালপুলের সামনে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন কিছু ক্ষণ। মিনিটখানেক পরে মুখ নামিয়ে দোকানে ফিরে গিয়ে বললেন, ‘‘দিনটা ভুলে যাওয়ার নয়। তবে মনেও রাখতে চাই না। বাবার সঙ্গে যাঁরা মারা গিয়েছিলেন তাঁদের জন্য কিছুই তো হল না।’’ তার পরে প্রায় ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, ‘‘হয় নতুন করে ব্রিজ হোক, নয়তো ব্রিজের পড়ে থাকা অংশ সরিয়ে নিক। এ ভাবে চলা যাচ্ছে না।’’

বছর দু’য়েক আগে ১২টা ২০ মিনিটেই গণেশ টকিজ মোড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল পোস্তা উড়ালপুল। মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জনের। গত বছরের মতো এ বারও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক সংগঠন ওই এলাকায় মোমবাতি মিছিল, প্রতিবাদ সভা করেছে। তা ছাড়া দিনভর ওই এলাকার চিত্র আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনের মতোই। আন্দোলন, মোমবাতি মিছিলে মন নেই আত্মীয় হারানো স্থানীয়দেরও। অভিষেক কান্দুই নামে এক স্বজনহারা বললেন, ‘‘প্রতি বছর নানা প্রতিবাদ হয়। কিন্তু, কোনও কাজ হয় কি? ভাঙা ব্রিজ তো এখনও সরল না। ভাঙা অংশ পড়ে কোন দিন আমরাও মরব। প্রশাসন বোধহয় তাই চায়।’’

দু’বছর আগে উড়ালপুল ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল বাবার। তাঁর স্মরণেই সপ্তাহান্তে ওই এলাকায় ধূপ বিক্রি করেন সেচ দফতরের কর্মী বিকাশ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

গণেশ টকিজ মোড়ের একটি ওষুধের দোকানের মালিক, শম্ভু মণ্ডলের দাবি, ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর থেকে গণেশ টকিজের চিত্রটাই বদলে গিয়েছে। প্রথম ছ’মাস কেউ ব্যবসা করতে পারেননি। দু’বছর পরেও অবস্থাটা একইরকম। তাঁর কথায়, ‘‘ব্রিজের ভাঙা অংশ এখনও রয়েছে। প্রতি দিন ওটা ভেঙে পড়ার ভয় তাড়া করে বেড়ায়। ওই ভাঙা ব্রিজের নীচ দিয়ে বাসও সে ভাবে চলে না।’’ তিনি জানালেন, আগে হাওড়া থেকে মালাপাড়া হয়ে গণেশ টকিজ দিয়ে মানিকতলার দিকে বাস যেত। কিন্তু, বাসগুলি এখন মালাপাড়া থেকে আহিরীটোলার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। বললেন, ‘‘এ দিকে তিনটি হাসপাতাল রয়েছে। বিডন স্ট্রিট থেকে এই পথে ট্রামও চলে না। বহু ডাক্তার উঠে গিয়েছেন। সব মিলিয়ে ব্যবসাই হয় না।’’

গণেশ টকিজ মোড়ে এ দিনই লাগানো হয়েছে দুর্ঘটনার সময়ের নানান ছবির কোলাজ-সহ ব্যানার। তার সামনে দাঁড়িয়ে স্কুল ফেরত এক পড়ুয়া তার সহপাঠীকে বলল, ‘‘মনে পড়ে দিদিমণি সে দিন বোমা পড়েছে ভেবে আমাদের বেরোতেই দিচ্ছিল না!’’

এক ওষুধের দোকানের কর্মী শম্ভুনাথ রায়ের দাবি, ‘‘ভাঙা ব্রিজ না সরলে গণেশ টকিজ স্বাভাবিক হবে না। মোমবাতি মিছিল এক দিনের, ভয়টা সব সময়ের!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE