ভাগাড়-কাণ্ডের মূল পাণ্ডা বিশ্বনাথ ঘড়াই। —নিজস্ব চিত্র।
বাক্সের ওপরের দিকে থাকত চিংড়ি বা ইলিশ মাছ। আর তার তলাতেই ভাগাড়ের মাংস। এ ভাবেই পাক্কা ১০ বছর ধরে রমরমা ব্যবসা চলছিল ভাগাড়ের মাংসের।
খালি এই রাজ্য নয়, ভিন রাজ্য এমনকী প্রতিবেশী ভিন দেশেও ঠিক এ ভাবেই হাজার হাজার কেজি পচা মাংস চালান যেত। ভাগাড় কাণ্ডের মূল পাণ্ডা বিশ্বনাথ ঘড়াই ওরফে বিশুকে গ্রেফতার করার পর, এই চক্রের আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক যোগ দেখে রীতিমত হতবাক গোয়েন্দারা। বিহারের নওয়াদা থেকে সানি মালিক নামে মাংস পাচার চক্রের অন্যতম লিঙ্কম্যানকে পাকড়াও করেই সোনারপুরের মাছ ব্যবসায়ী বিশুর নাম পেয়েছিল ভাগাড় কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা বিশেষ তদন্তকারী দল।
সোনারপুরের বাসিন্দা বিশুর পারিবারিক মাছের ব্যবসা। সেই ব্যবসার প্রয়োজনেই সে রাজাবাজারে গ্যাস স্ট্রিটের কোল্ড স্টোরেজে দু’টি গোডাউন ভাড়া করেছিল। সেই গোডাউন থেকেই গত সপ্তাহে পুলিশ ২০ টন ভাগাড়ের মাংস উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকেই ফেরার ছিল বিশু। দুর্গাপুর, আসানসোল এলাকায় গা-ঢাকা দিয়েছিল সে। বুধবার রাতে টাকার জন্য সোনারপুর এলাকাতে ফিরতেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে সে। জেরায় বিশুর দাবি, অতিরিক্ত মুনাফার লোভেই মাছের আড়ালে মাংস মজুত করা শুরু করে সে। তার পর নিজেই এই ভাগাড়ের মাংসের কারবারে নেমে পড়ে। হিমঘরে চিংড়ি ও ইলিশের মাছের বাক্সের আড়ালে রাখা হত মাংসের প্যাকেট, যাতে মাংসের পচা গন্ধ মাছের বলে চালানো যায়।
দেখুন ভিডিয়ো
জেরায় পুলিশ বিশুর কাছ থেকে জানতে পেরেছে, সানির মত একাধিক লিঙ্কম্যান নিয়োগ করেছিল সে। এই লিঙ্কম্যানরা মূলত কলকাতা ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া মরা পশুর মাংস নিয়ে আসত। সেই মাংস জমা হত রাজাবাজারের হিমঘরে। সেখান থেকে মাছের আড়ালেই পাচার হত মাংস। জেরায় সে জানিয়েছে, বজবজের ভাগাড় থেকে মাংস সে নিজের লোক দিয়েই আনাত। তার অন্যতম মাংস সরবরাহকারী ছিল শরাফত— যে কাঁকিনাড়া, জগদ্দল এবং উত্তর ২৪ পরগনার আরও কয়েকটি ভাগাড় থেকে মাংস আনত রাজাবাজারে।
“প্রাথমিক ভাবে আমরা জানতে পেরেছি, দিল্লি, পুণে, মুম্বই-এর মতো বড় শহরে নিয়মিত মাছের আড়ালে মাংস পাচার করত বিশু। সম্প্রতি নেপাল এবং ভূটানেও সে এই মাংস সরবরাহ করা শুরু করে”— জানান বিশেষ তদন্তকারী দলের এক সদস্য। বুধবার রাতে রাজাবাজারের হিমঘরে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ প্রচুর পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম সালফেট, লেড সালফেট, ফরম্যালিনের মত রাসায়নিক পেয়েছে। গুদাম থেকে একটি কম্পিউটারও উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই কম্পিউটার থেকে কোথায় কোথায় বিশু মাংস পাচার করত তার হদিশ মিলবে বলে আশা গোয়েন্দাদের। পুলিশের দাবি— শুধু রাজাবাজার নয়, এখনও আরও কয়েকটি হিমঘরে এই মাংস মজুত করে রাখা আছে। বিশুকে জেরা করেই সেই সব গুদামের হদিশ মিলবে। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতেও তদন্তকারীরা এই চক্রের আন্তঃরাজ্য যোগের কথা জানান। বিচারক ৮ মে পর্যন্ত বিশুকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিকে বৃহস্পতিবারই বিকেলে, উল্টোডাঙা থেকে আটক করা হয়েছে মহম্মদ আকলাখ নামে বিশুর ঘনিষ্ঠ আর এক ‘ভাগাড় ব্যবসায়ী’কে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy