Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সম্বল জেদ, বাইশ গজ মাতালেন ওঁরা

চার দিকে হাততালি। তবে প্রদীপ বা সহ-খেলোয়াড়দের চোখ গেল না সে দিকে। মাথা নিচু করে প্রস্তুত হলেন পরের বলের জন্য।

ব্যাট-ম্যান: দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট ম্যাচ। রবিবার, বালি গাঙ্গুলিপাড়ার মাঠে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ব্যাট-ম্যান: দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট ম্যাচ। রবিবার, বালি গাঙ্গুলিপাড়ার মাঠে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৮ ১৩:৪৮
Share: Save:

ঝুমঝুম শব্দে এগিয়ে আসছে সাদা রঙের বলটা। কান খোলা রেখে ব্যাট ধরা হাতের মুঠিটা আরও শক্ত হয়ে উঠল প্রদীপ ঝায়ের। ব্যাটে-বলে হতেই একেবারে ওভার বাউন্ডারি!

চার দিকে হাততালি। তবে প্রদীপ বা সহ-খেলোয়াড়দের চোখ গেল না সে দিকে। মাথা নিচু করে প্রস্তুত হলেন পরের বলের জন্য। বোমার আঘাতে আট বছর বয়সে দু’টি চোখই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল রিষড়ার বাসিন্দা প্রদীপের। কিন্তু ক্রিকেটার হওয়ার জেদ নষ্ট হয়নি।

প্রদীপ একা নন। তাঁর মতো আরও একদল যুবক রবিবার সকাল থেকে ব্যাটে-বলে মাতিয়ে রাখলেন বালি গাঙ্গুলিপাড়ার মাঠ। বাইশ গজে থাকা ওই খেলোয়াড়দের কেউ পুরো, কেউ ৭৫ বা ৬০ শতাংশ দৃষ্টিহীন। বালি গাঙ্গুলিপাড়ার একটি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ সংস্থা জগমোহন ডালমিয়ার নামে এ দিন দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। উদ্যোক্তাদের তরফে শুভময় চক্রবর্তী জানান, স্থানীয় বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়ার মাধ্যমে সিএবি-তে আবেদন জানানোর পরে অভিষেক ডালমিয়াই সব ব্যবস্থা করে দেন। সেই খেলাতেই এ দিন অংশ নিয়েছিল দৃষ্টিহীনদের দু’টি দল— ভিস্যুয়ালি ইম্পেয়ার্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (ভিক্যাব) এবং ব্লাইন্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য বেঙ্গল। দুই দলেই ছিলেন ১০ জন করে।

চোখে না দেখে কী ভাবে তাঁরা ব্যাটে-বলে করছেন? ভিক্যাব-এর তরফে গৌরব গোয়েন্‌কা, চন্দন মাইতিরা জানালেন, দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেটে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বলের ভিতরে ভরা থাকে লোহার ছোট ছোট বল। এ খেলায় দূর থেকে দৌড়ে এসে হাত ঘুরিয়ে বল করা হয় না। আন্ডার হ্যান্ডে বল গড়িয়ে দিলেই তা ঝুমঝুম শব্দে এগিয়ে যায় ব্যাটসম্যানের দিকে। আর উইকেট থাকে স্টিলের। তাতে বল লাগলেই হবে আওয়াজ। যা শুনে বোঝা যাবে ‘ক্লিন বোল্ড’।

দেখতে না পেলেও চন্দন, গৌরবেরা কিন্তু ইডেনে যান কলকাতা নাইট রাইডার্সের খেলা দেখতে। হাতে থাকে ছোট্ট একটা রেডিয়ো। চন্দন বলেন, ‘‘কানে চেপে রাখি রেডিয়োটা। আর মাঠের আমেজটা উপলদ্ধি করি।’’ ‘‘জানেন তো, এক বার রেডিয়ো নিয়ে মাঠে ঢোকার সময়ে পুলিশ আটকে দিয়েছিল। জিজ্ঞাসা করেছিল, চোখে দেখতে পান না, মাঠে গিয়ে কী করবেন?’’— বলছেন গৌরব।

ইতিমধ্যেই দিল্লি, মুম্বই-সহ বহু জায়গায় খেলে এসেছেন এই খেলোয়াড়েরা। তাঁদেরই এক জন রমেশ বেরা বলেন, ‘‘আমরাও এখন বলতে পারি করব, লড়ব, জিতব রে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

blind cricket Bali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE