সেই বইমেলা। নিজস্ব চিত্র
বৈশাখী বিকেলের পচা গরমে কুলকুল ঘামতে ঘামতে তদারকি করছে অনুচ্চ অবয়ব।
মিহি গলায় ফোন ধরেই অতিথিকে স্বাগত জানাতে ছোটাছুটি। গলির ভিতরের বাড়ি থেকে যশোর রোডের মুখে বিমানবন্দরের দু’নম্বর গেটের বাসস্টপ পর্যন্ত আসা-যাওয়া চলছে অন্তত ২০-২৫ বার।
তাঁর নাম সুদেব সরকার। অভিনব এক বইমেলা আট বছর ধরে নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছেন তিনি। গলিতে প্যান্ডেল বেঁধে টেবিল-চেয়ার পেতে হয়েছে আয়োজন।
পঞ্চাশোর্ধ্ব মিতভাষী এক লেখক, পদ্য-গদ্যে গোটা দশেক বই ছাপিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু স্রেফ নিচু ক্লাসের ছেলে পড়ানোর কাজ করে একটি আস্ত বইমেলার ভার কাঁধে নেওয়ার ব্যাখ্যা সাধারণ বুদ্ধিতে মিলবে না। সুদেববাবুর বইপ্রেম এক দিন পাড়ায় টেনে এনেছিল মহাশ্বেতা দেবীকে। দিনটা ছিল সুদেবের একমাত্র সন্তান, নিবেদিতার জন্মদিন। নিজের বই উপহার দিয়ে মহাশ্বেতা দেবী ছড়া লিখলেন, ‘নিবেদিতার বয়স ১২, আমার বয়স ৮৬/ আমরা কোথাও সমবয়সী’!
নিবেদিতার বাবার ভিতরের ছেলেমানুষিরও সেই জেগে ওঠা। সুদেবের মনে হয়েছিল, এই যে সামান্য লেখালেখির চর্চার সুবাদে তাঁর মেয়ের জন্মদিনে এমন গুণিজনেরা বাড়িতে আসছেন, তার সান্নিধ্য পাড়াময় ছড়াতে হবে। অতঃপর বইমেলার শুরু। নিবেদিতার জন্মদিন আবার ২৫ বৈশাখ। যার জন্মদিন উপলক্ষে এত কাণ্ড, তিনিও এত দিনে বাবার সুযোগ্য কন্যা হয়ে উঠেছেন। ২০ বছরের নিবেদিতা এখন বটানি অনার্স, দ্বিতীয় বর্ষ। ২৫ বৈশাখ শুরু হওয়া তিন দিনের বইমেলায় অক্লান্ত লড়ছেন তিনিও।
বিকেল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে আটটা অবধি সরগরম বইমেলা। ছোটদের বইয়ের কিছু প্রকাশক ভূতের গল্প, গোয়েন্দা গল্প নিয়ে হাজির। আছে কিছু লিটল ম্যাগাজিনও।
সুদেববাবুর স্ত্রী সুমিতাও এই আয়োজনের শরিক। তাঁর কাজ মেয়ের জন্মদিনের বইমেলায় সব অতিথি প্রকাশক, সম্পাদকদের জন্য লুচি-পায়েসের ব্যবস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy