Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আইনই সার, বিপজ্জনক বাড়ির ভবিষ্যৎ ঝুলেই

আর সেই কারণেই পুরসভা সব জেনেও যে কিছু করতে পারে না, তা একাধিক বার জানিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এ দিন অবশ্য এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি।

ভগ্নাংশ: বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভাঙার কাজ চলছে। বুধবার, রানি রাসমণি রোডে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ভগ্নাংশ: বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভাঙার কাজ চলছে। বুধবার, রানি রাসমণি রোডে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০১:৩৭
Share: Save:

পুরভবন লাগোয়া লেনিন সরণিতে ঝড়ের দাপটে পাঁচিল এবং গাছ পড়ে দুই অটো আরোহীর মৃত্যু শহরের বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল পুর প্রশাসনের সামনে। মৃতের আত্মীয়কে দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে মানবিক দিকটা হয়তো সামলেছেন পুরকর্তারা, কিন্তু শহরের বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে প্রশাসনের নড়বড়ে অবস্থা এখনও এতটুকুও বদলায়নি। আসন্ন বর্ষার আগে তাই শহরের কিছু ভগ্নপ্রায় বাড়ির বিপজ্জনক অংশ ভাঙার কাজে হাত দিল পুর প্রশাসন।

বুধবার দুপুরে পুরভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ১৬বি রানি রাসমণি রোডের একটি বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। যদিও পুরসভার স্থানীয় বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তমাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা রুটিন কাজ। সারা বছর করে থাকি। সামনে বর্ষা। এই বাড়িটার হাল খারাপ ছিল। অন্য এলাকাতেও ভাঙার কাজ চলবে।’’ বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিক জানান, দিন কয়েক আগে ঝড় জলের দাপটে একটি বাড়ির পাঁচিল এবং ফুটপাথের পাশে থাকা একটি গাছ অটোর উপরে পড়ায় দু’জনের মৃত্যু হয়। তখনই নজরে আসে এলাকার একাধিক বিল্ডিংয়ের হাল খারাপ।

প্রশ্ন উঠছে, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা নিয়ে যে নতুন আইন হয়েছে, তার কী হল? ২০১৬ সালে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে বাড়ি ভেঙে মৃত্যুর ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিপজ্জনক বাড়ির সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কলকাতার জন্য নতুন একটি আইন (৪১২এ) তৈরি হয়। কিন্তু প্রায় দু’বছর হল, মাত্র একটা বিপজ্জনক বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, কেন এই গড়িমসি?

পক্ষকাল আগে ঝড়জলের প্রভাবে শহরে অনেক গাছ ভেঙেছে। বাড়ির পাঁচিল, বারান্দা, দেওয়ালের চাঙড় খসে পড়ারও ঘটনা ঘটেছে। এক জনের মৃত্যুও হয়। তাই ফের বর্ষার আগে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্যই রানি রাসমণি রোডে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার কাজে হাত দেওয়া হল। ওই বাড়ির নিচে গিয়ে দেখা গেল, ভয়াবহ অবস্থা। বাড়ির এক পাশে ঝোলানো রয়েছে শুধুমাত্র বিপজ্জনক বাড়ি লেখা নোটিস বোর্ড। বিল্ডিং দফতরের এক অফিসার জানান, এমন বোর্ড শহরের অনেক জায়গাতেই পাবেন। কিন্তু কিছু করা হয় না কেন? দুর্ঘটনা না ঘটলে কী টনক নড়বে না? জবাব দেননি তাঁরা। ওই বাড়ির এক বাসিন্দা বাবু ভুঁইয়ার কথায়, ‘‘তিন পুরুষ ধরে থাকি। কোথায় আর যাব? মাথায় বিপদ নিয়েই রয়েছি।’’

আর সেই কারণেই পুরসভা সব জেনেও যে কিছু করতে পারে না, তা একাধিক বার জানিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এ দিন অবশ্য এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি। কিন্তু নতুন আইন তো হয়েছে সেই সমস্যার সমাধানেই। যেখানে বলা হয়েছে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে ফের গড়ে নতুন বিল্ডিংয়ে থাকার ফ্ল্যাট দিতে হবে প্রতিটি ভাড়াটেকে। তেমনই বাড়ির মালিককেও বাড়তি ১০০ শতাংশ এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) দেওয়ার কথাও বলা রয়েছে। কিন্তু তেমন কাজ হচ্ছে না। তাই, নতুন আইনের প্রয়োগ করে বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধান হিসেবে যা চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তা কি অধরাই থেকে যাবে? প্রশ্ন উঠছে পুরমহলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

House
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE