রামগড়ের বিদ্যাসাগর কলোনিতে জন্ডিস আক্রান্তের বাড়িতে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ও ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা শহরে এমন একাধিক বাজার রয়েছে, যেখানে মানুষের আনাগোনা কমে গেলেই ভাগাড়ের মাংস আর মরা মুরগি ঢোকে। হাতেনাতে প্রমাণ না পেলেও এমনই আশঙ্কা পুর প্রশাসনের। আর তা রুখতে এ বার ২৪ ঘণ্টাই তৈরি থাকবে অভিযানের দল। ভাগাড়ের মাংস নিয়ে প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তা নিয়েই কলকাতা পুরসভায় বৈঠক করেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। সেখানে হাজির ছিলেন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ, রাজ্যের খাদ্য-নিরাপত্তা কমিশনার গোধূলি মুখোপাধ্যায়-সহ জঞ্জাল অপসারণ, স্বাস্থ্য এবং বাজার দফতরের আধিকারিকেরা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, পচা মাংস, মরা মুরগি থেকে শুরু করে ভেজাল খাবার রুখতে যে পরিকাঠামো দরকার, তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। তাই প্রথমেই দরকার পরিকাঠামো গড়ে তোলা। অতীনবাবু জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতি বরোয় একটি করে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রচালিত ছোট কসাইখানা খোলা হবে। সেখান থেকেই কাটাতে হবে ছাগল, ভেড়ার মতো পশু। পশুগুলি সুস্থ কি না, কাটানোর আগে তার পরীক্ষা করবেন চিকিৎসক। তার জন্য প্রতিটি বরোয় পশু চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে।
মেয়র পারিষদ জানান, এখন শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডের জন্য মাত্র ১৩ জন ফুড ইনস্পেক্টর রয়েছেন। দরকার অন্তত ৩২ জন। বাকি ১৯ জনকে নিয়োগের সিদ্ধান্তও হয়েছে। রাজ্য খাদ্য-সুরক্ষা কমিশন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। কথা হয়েছে, ভেজাল খাবার বা পচা মাংসের কারবারিদের ধরতে বিশেষ দল গড়া নিয়েও। পুর প্রশাসনের এক কর্তা জানান, প্রতিটি বরোয় একটি করে বিশেষ দল গড়া হবে। ১০-১৫ জন থাকবেন সেই দলে। প্রতিদিন ঘুরবেন তাঁরা। অভিযোগ পেলেই পৌঁছে যাবেন সেই ঠিকানায়। এর জন্য বছরে প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে যা রাজ্য সরকার দেবে বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, বুধবার তদন্তভার নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুর অফিসারদের নিয়ে শহরের দুই জায়গায় অভিযান চালায় সিআইডি। সিআইডি সূত্রে খবর, ভাগাড় নিয়ে তদন্তের প্রক্রিয়াকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক দিকে, পাচার-চক্রে আরও কারা জড়িত, তা খোঁজা হচ্ছে। জানার চেষ্টা হচ্ছে, ওই কারবারিরা কোথায় সেই মাংস পাঠিয়েছে এবং কারা তা কিনেছেন। এর পাশাপাশি, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মৃত পশুর মাংসের এই কারবার যে ভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছে, তাতে প্রশাসনিক স্তরে নজরদারির ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি ছিল কি না, দেখা হচ্ছে সেটাও।
সিআইডি-র এক কর্তা জানান, পচা মাংস নিয়ে পুরসভা বা পুলিশের কাছে অতীতে কখনও কোনও অভিযোগ জমা পড়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এ দিকে, পুরসভার নিজস্ব ৪৬টি বাজারে মাংস-বিক্রেতাদের নোটিস ধরানোর কাজ শুরু করল পুর বাজার দফতর। মেয়র পারিষদ আমিরুদ্দিন ববি বলেন, ‘‘ভাগাড় নিয়ে এত কাণ্ডের পরে কেউ খাওয়ার অযোগ্য মাংস বিক্রি করার চেষ্টা করলে তাঁর লাইসেন্স বাতিল করা হবে। দোকানিদের খাদ্য-নিরাপত্তা বিধি মেনে মাংস বিক্রি করতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy